Tuesday, October 23, 2012

বৌদ্ধ বিহারের মালিকানা দ্বন্ধ; মুখোমুখি বাংলাদেশ বৌদ্ধসমিতি ও মহাসভা


লিখেছেনঃ  অনলাইনডেস্ক Tuesday, 23 October 2012 21:05
ছবি: চট্টগ্রাম নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহার
ছবি: চট্টগ্রাম নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহার






ছবি: চট্টগ্রাম নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহার
বৌদ্ধবিহার কার সম্পত্তি, সংঘের নাকি সংশ্লিষ্ট কমিটির বা সমিতির এই প্রশ্নে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশী বৌদ্ধদের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ বৌদ্ধসমিতি ও ভিক্ষু-সংঘের সর্বোচ্চ কাউন্সিল সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভা। মহাসভা বলছে-দায়ক-দায়িকা কর্তৃক কোন বৌদ্ধবিহার প্রতিষ্ঠা হলেও উৎসর্গের মাধ্যমে বিহারটি সংঘের উদ্দেশ্যে দান করার আগ পর্যন্ত কোন ভিক্ষু-সংঘ ঐ বিহারে অবস্থান করেন না বা করতে পারেন না।খবর, দৈনিক সাঙ্গু ।  প্রতিষ্ঠার পর বিহারটি উৎসর্গের মাধ্যমে ভিক্ষু-সংঘের উদ্দেশ্যে দান করলেই কেবল কোন ভিক্ষু বা সংঘ ঐ বিহারে অবস্থান করেন। আর উৎসর্গের মাধ্যমে দান করার পর সংশ্লিষ্ট কোন ব্যাক্তি বা সংগঠনের বিহারটির মালিকানা দাবি করা অযৌক্তিক শুধু নয় এটি বৌদ্ধ বিনয়ের পরিপন্থিও বটে। মহামানব বুদ্ধের সময় থেকে শুরু হয়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী এভাবেই চলে আসছে। সুতরাং কেবল চট্টগ্রাম বৌদ্ধবিহার নয় দেশের আনাচে-কানাচে যত বৌদ্ধবিহার রয়েছে সবকয়টি সংঘ-সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হবে। অন্যদিকে সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার এই যুক্তিকে খণ্ডন করে বৌদ্ধসমিতি বলছে-ভিক্ষু-সংঘ তো গৃহত্যাগী শুধু নয়, সংসার থেকে শুরু করে সবকিছুর মোহ ত্যাগের মাধ্যমে উনারা ধর্মের উদ্দেশ্যে নিজেদের সমর্পণ করেন। এছাড়া বুদ্ধের বিনয় মতে ভিক্ষু-সংঘ কেবল পরিধেয় চীবরটি ছাড়া আর কিছুরই মালিকানা দাবি করতে পারেন না। তাহলে উনারা কিভাবে বৌদ্ধবিহারকে নিজেদের সম্পত্তি (সংঘের-সম্পত্তি) মনে করেন?
এই বিতর্ক নিয়ে সাধারণ বৌদ্ধ সমাজে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মত। কেউ কেউ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার যুক্তিকে সঠিক বলে মেনে নিচ্ছেন আর কেউ বা পক্ষ নিচ্ছেন বৌদ্ধসমিতির। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের শিক্ষার্থী সরোজ বড়ুয়া সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার যুক্তিই সঠিক এবং ভিক্ষু-সংঘ ও বৌদ্ধবিহারের উপর হস্তক্ষেপ করা বৌদ্ধ সমিতির উচিত নয় বলে মনে করেন। একই মত পোষণ করে সমাজ সেবী ও সমাজকল্যাণ পরিষদের সদস্য ববিতা বড়ুয়া বলেন, এটি অবশ্যই সংঘের সম্পত্তি। যেহেতু দায়ক-দায়িকা নিঃস্বার্থ ভাবেই সকল কিছু সংঘের উদ্দেশ্যে দান করেন সেহেতু দানের পর আবার কোন কিছুর মালিকানা দাবি করা ধর্মের পরিপন্থি। বৌদ্ধসমিতি এ নিয়ে অযথা বাড়াবাড়ি করছে যা মোটেই উচিত নয়। পত্রিকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও সচেতন বৌদ্ধ নাগরিক তাঁদের এই মতকে সমর্থন করেন। তবে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করে বৌদ্ধ সমিতির প্রাক্তন চেয়ারম্যান রাখাল চন্দ্র বড়ুয়া ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, স্বীকার করতে দ্বিধা নেই বৌদ্ধবিহার সংঘ-সম্পত্তি। কিন্তু এতে করে সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে বলে আমরা মনে করি না। বরং সমস্যা আরো বাড়তে পারে। কারন, বিহার পরিচালনা জটিল ব্যাপার। আর বিহারগুলো পরিচালনায় যে দক্ষতা ও ঐক্যের প্রয়োজন বর্তমান ভিক্ষু-সমাজে এই গুরুত্বপূর্ণ দিক গুলোর বড়ই অভাব। এছাড়া শৃঙ্খলাহীন ও বিনয়ের পরিপন্থি আচরণ ও চলাফেরার দায়ে ভিক্ষু মহাসভা কোন ভিক্ষুকে যথাযথ শাস্তি দিতে পেরেছেন এমন উদাহরণ তেমন পাওয়া যায়না। এক্ষেত্রে দেশের সকল বৌদ্ধবিহার সংঘ-সম্পত্তি হিসেবে বিচেনায় নিলে উনারা কিভাবে বা কি পদ্বতিতে সেগুলো পরিচালনা করবেন ভিক্ষু মহাসভার উচিত তা বৌদ্ধসমাজের সামনে তুলে ধরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পণ্ডিত প্রবর শ্রীমৎ প্রজ্ঞাবংশ মহাথেরো জানান, সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভা যা বলছে তাই ঠিক। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। কারন, ভিক্ষু-সংঘের মাঝে বিনয়-বিধান ও নিয়ম-নীতি মেনে চলে এমন ভিক্ষুর সংখ্যা নিতান্তই কম। এছাড়া ভিক্ষু-সংঘের মাঝেই একজন আরেকজনকে মানতে চায়না। ফলে সমস্ত বিহারগুলো পরিচালনা করা ভিক্ষু-সংঘের জন্য তত সহজ হবেনা। আর বৌদ্ধ সমিতি যে দাবি জানাচ্ছে তা কোনমতেই ধর্মীয় বিধান হতে পারেনা। তবে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে সৃষ্ট সমস্যা থেকে সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। বৌদ্ধবিহারের মালিকানার প্রশ্নে গৃহী ও সংঘের শীর্ষ দুই সংগঠনে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে করনীয় কি জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা বলেন, আইন-আদালতের মাধ্যমে এর সমাধান খুঁজতে যাওয়া গুটি কয়েক বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর জন্য কখনো শোভনীয় হতে পারেনা। ধর্মীয় এই সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ভাবে সমাধান হওয়া উচিত বলে মনে করেন শ্রীমৎ প্রজ্ঞাবংশ মহাথেরো, রাখাল চন্দ্র বড়ুয়া, ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া ও ববিতা বড়ুয়া সংশ্লিষ্ট সকলে।
ইতিমধ্যে বৌদ্ধ সমিতির পক্ষ থেকে বিনম্র আবেদন এবং যথা ধর্ম তথা জয় (বুদ্ধ বিহারে ভিক্ষু-গৃহী দ্বন্দ্ব!) শিরোনামে চট্টগ্রাম মহানগর বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের পক্ষ হতে নিজ নিজ বক্তব্য ছোট বই আকারে বৌদ্ধদের মাঝে প্রচার করা হচ্ছে।
এছাড়া ড. জিনবোধি ভিক্ষু, বৌদ্ধসমিতি ও ভিক্ষু মহাসভার নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা গেছে তাঁরাও আলোচনার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ভাবে সমস্যাটির সমাধানে আগ্রহী। সচেতন বৌদ্ধ নাগরিকদের এখন একটাই প্রশ্ন এই গুরু দায়িত্ব নেওয়ার বৌদ্ধসমাজে কেউ কি নেই?

http://www.dhammainfo.com/news/bangladesh/item/288-বৌদ্ধ-বিহারের-মালিকানা-দ্বন্ধ-মুখোমুখি-বাংলাদেশ-বৌদ্ধসমিতি-ও-মহাসভা


No comments:

Post a Comment