Sunday, October 21, 2012

নিরাপত্তা থাকলেও উদ্বেগ কাটছে না উত্তমের পরিবারে




9:55 am BdST, Monday, Oct 22, 2012
শংকর বড়ুয়া রুমি 
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধি 

কক্সবাজার, অক্টোবর ২১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- সারাক্ষণ পুলিশি নিরাপত্তা থাকলেও আতঙ্ক কাটছে না কক্সবাজারের রামুর উত্তম বড়ুয়ার পরিবারের সদস্যদের। 

উত্তমের মা ননীবালা বড়ুয়া মাধু রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরিবারের উপার্জন ব্যক্তি উত্তম ও তার বাবা সুদত্ত বড়ুয়ার কোনো খোঁজ নেই, তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। দুই কন্যা আর বোনকে নিয়ে বাড়িতে আছি। সামনের দিনগুলো কীভাবে কাটবে সেই চিন্তায় অস্থির আমি।” 

গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উত্তমের ফেইসবুক পাতায় একটি অবমাননাকর ছবি দেখে রামুতে মিছিল বের হয়। পরে উগ্রপন্থিরা বৌদ্ধ মন্দির ও বসতিতে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট চালায়; আগুনও দেয়া হয় বিভিন্ন স্থানে। 

ছেলে উত্তমকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে দাবি করে ননীবালা বলেন, “পুলিশ নিরাপত্তা দিচ্ছে, জেলা-উপজেলা প্রশাসন কিছু সহায়তাও দিয়েছে। তবু সেই সা¤প্রদায়িক সন্ত্রাসের রাতের কথা মনে হলে বুক কেঁপে উঠে।” 

২৯ সেপ্টেম্বর ঘটনার পর থেকে উত্তমের কোনো সন্ধান পাওয়া না গেলে তার মা ননীবালা (৪১) এবং খালা আদিতাকে (২৬) পরদিনই গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাদের রিমান্ডেও নেয়া হয়। 

কোনো অভিযোগ না থাকার পরও গ্রেপ্তারের এই খবর সংবাদপত্রে দেখে হাই কোর্ট এ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে, তাদের আটক অবৈধ বলেও ঘোষণা করে। 

ওই দিনই ছাড়া পেয়ে রামুর চেরাংঘাটায় নিজেদের বাড়িতে ফেরেন উত্তমের মা। আদালতের নির্দেশে সেখানে পর্যাপ্ত পুলিশ পাহারাও বসানো হয়। 

ননীবালা বলেন, “জেল থেকে মুক্তি পাব, তা ভাবতেও পারিনি।” 

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবী চন্দ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, শনিবার উত্তমের মাকে নগদ ২ হাজার টাকা, ৩০ কেজি চাল, ২ লিটার তেল, ২ কেজি ডাল ও দুটি শাড়ি দেয়া হয়েছে। এছাড়াও শুক্রবার কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার সেলিম মো. জাহাঙ্গীর আরো ১০ হাজার টাকা সহায়তা দিয়েছেন। 

উত্তমের পরিবারের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত পুলিশ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ নিরাপত্তা বহাল থাকবে বলে জানান ইউএনও। 

নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রামু থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল কাশেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মোট ১২ জন পুলিশ দুই শিফটে এখানে দায়িত্ব পালন করছে। 

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/প্রতিনিধি/সিএস/এমআই/২০৪৪ ঘ.
http://www.bdnews24.com/bangla/details.php?cid=2&id=208598&hb=3



সুদৃঢ় হোক সম্প্রীতির বন্ধন

সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ | তারিখ: ২২-১০-২০১২
সম্প্রতি দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল, বিশেষ করে রামু, উখিয়া, টেকনাফ, পটিয়া প্রভৃতি স্থানে প্রধানত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর যে বর্বরোচিত হামলা হয়ে গেল, সেটা গোটা জাতির বিবেককে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছে। সন্দেহ নেই যে সরকার যখন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চালিয়ে যাচ্ছে, তখন কতিপয় স্বার্থান্বেষী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এসব জঘন্য কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারে। আবার যে সরকার নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে পরম আত্মতুষ্টি ও চরম আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান ভাবছে, সেই সরকারের প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা চক্রান্তকারীরা এই ঘৃণ্য ঘটনায় সহায়তা করে থাকতে পারে। একজন বিকারগ্রস্ত ব্যক্তির দ্বারা ফেসবুকে বিকৃত ছবি ট্যাগ করাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের কয়েকটি অঞ্চলে যে চরম হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে গেল, সে জন্য আমি গভীরভাবে মর্মাহত।
একজনের দুষ্কর্মের জন্য অন্যজনকে শাস্তি দেওয়া ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না, সুতরাং, রামু ও অন্যান্য স্থানে বৌদ্ধবসতি ও মন্দিরগুলোতে অগ্নিসংযোগসহ লুটপাটের ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তারা কেবল দেশের নয়, ইসলামেরও শত্রু।
বাংলাদেশ সরকারের উচিত এসব দুষ্কৃতকারী ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ নেওয়া। তাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও সুনাম রক্ষা হবে।
যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ শান্তিতে বসবাস করে আসছে। এ দেশে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ও উপজাতীয় শ্রেণীর মানুষ ধর্মবিশ্বাসের ক্ষেত্রে বিভিন্নতা সত্ত্বেও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সহ-অবস্থান করে আসছে। তাদের মধ্যে যে কখনো বিরোধ বা সংঘাত হয়নি, এ কথা বললে সত্যের অপলাপ হবে। কখনো কখনো তাদের মধ্যে নানা কারণে বিরোধ দেখা দিয়েছে এবং কোনো কোনো সময় এর ফলে হিংসাত্মক দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয়েছে; কিন্তু স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় এগুলো সংঘটিত হয়েছে। সাধারণ মানুষ কখনোই এ ধরনের কার্যকলাপকে সমর্থন করেনি।
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী এবং অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ; কিন্তু তারা মোটেই ধর্মান্ধ নয়। এখানকার মাটিতে সাম্প্রদায়িকতা কখনো দানা বাঁধতে পারেনি। মনে রাখা প্রয়োজন, এ দেশের মুসলমানদের ধর্মীয় জীবনের ওপর গোঁড়া রক্ষণশীলদের চেয়ে উদারমনা সুফি-দরবেশ, বাউল-ফকিরদের প্রভাব অনেক বেশি। এসব মরমি সাধক ধর্মবিশ্বাসের ক্ষেত্রে যে ঐতিহ্যের সূত্রপাত করেছিলেন, সেটা ছিল পরমত সহিষ্ণুতার ঐতিহ্য, যা বাংলার মন ও মানসকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। বস্তুত অমুসলমানদের প্রতি বাংলার মুসলমানদের দৃষ্টিভঙ্গি সব সময় পবিত্র কোরআনের এই মহান বাণীর দ্বারা চালিত হয়েছে যে ‘লাকুম দ্বীনকুম ওয়াল ইয়া দ্বীন’। অর্থাৎ ‘তোমার পথ তোমার, আমার পথ আমার।’ সুতরাং, যে যার পথে চলবে নিজের দায়িত্বে। কাউকে বাধা দেওয়ার অধিকার কারও নেই। এ কথা জোর দিয়ে বলতে চাই যে একমাত্র ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে সব ধর্মের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সম্ভব।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম ছিল ধর্মনিরপেক্ষ আন্দোলন। তাই স্বাভাবিক কারণে স্বাধীন বাংলাদেশের শাসনতন্ত্রে ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান মূলনীতি হিসেবে সন্নিবেশিত করা হয়েছিল। আমরা জানি, পাকিস্তান আমলে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থে ধর্মের অপব্যবহার করেছে। ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে মিলিয়ে ফেলায় ধর্মের পবিত্রতা ক্ষুণ্ন হয়েছে। রাজনীতিও কলুষিত হয়েছে। একমাত্র ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে ধর্মের পবিত্রতা রক্ষা করা সম্ভব। কেউ যেন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করতে না পারে, তার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।
দুর্ভাগ্যবশত স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর যে প্রতিক্রিয়াশীল চক্র রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করল, তারা প্রথমেই ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিসর্জন দিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ধর্মীয় লেবাস পরিয়ে বাংলাদেশকে একটি খুদে পাকিস্তানে পরিণত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হলো। তারা ইতিহাসের চাকাকে পেছন দিকে ঘোরাতে চেয়েছিল। দুঃখের বিষয়, এ প্রচেষ্টা এখনো অব্যাহত আছে এবং তার খেসারত আমরা দিয়ে চলেছি।
এ মুহূর্তে যেটা প্রয়োজন সেটা হলো, উপদ্রুত এলাকায় একটি শান্তি মিশন প্রেরণ। কিছুসংখ্যক নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তি (শিক্ষক-শিক্ষিকা হলে ভালো হয়), তাদের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে একটি পিস স্কোয়াড গঠন করে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পাঠানো যেতে পারে। তারা স্থানীয় জনগণের মধ্যে থেকে তাদের সহযোগিতায় পুনর্বাসনের কাজে সাহায্য করতে পারে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে আস্থা ও সম্প্রীতির ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতে পারে। এটাকে বলা যেতে পারে, মোরাল রিলিফ ক্যাম্পেইন।
১৯৪৬ সালে নোয়াখালীতে সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামার সময় রেডক্রসের পক্ষ থেকে আমি এ ধরনের কাজে সম্পৃক্ত ছিলাম। এ ধরনের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও সরকারি সাহায্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
 সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ: ইতিহাসবিদ, জাতীয় অধ্যাপক।



ঢাকা, সোমবার, ২২ অক্টোবর ২০১২ খ্রিষ্টাব্দ

রামুর ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীরা আড়ালে থেকে যাচ্ছে : এম মোর্শেদ খান

চট্টগ্রাম ব্যুরো
তারিখ: ২২ অক্টোবর, ২০১২
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খান বলেছেন, সরকার প্রতিটি বিষয় নিয়ে রাজনীতি করছে। রামুর ঘটনার তদন্ত কমিটির রিপোর্ট দেয়ার আগেই সরকারের লোকজন বলতে শুরু করলেন এটা বিরোধী দল করেছে। এতে প্রকৃত অপরাধীরা আড়ালে থেকে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সুদীর্ঘকাল বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। দেশের এ ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ করতে পরিকল্পিতভাবে বৌদ্ধমন্দিরগুলোতে হামলা চালানো হয়।
চট্টগ্রাম নগরীর চট্টেশ্বরী রোডের অ্যাভন হাউসে গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম-৭ নির্বাচনী এলাকার শারদীয় দুর্গোৎসব কমিটির নেতাদের সাথে মতবিনিময়ে এ কথা বলেন তিনি।
মোর্শেদ খান বলেন, প্রকৃত ধার্মিক অপর ধর্মের ওপর আঘাত করতে পারেন না। বাংলাদেশে সব ধর্মের লোক শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন। প্রত্যেকেই যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করছেন। এলাকায় কোনো ব্যক্তি ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত হানলে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কমিটির সভাপতি অরুণ চন্দ্র বণিকের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাদল চন্দ্র নাথ, মতিলাল দেওয়ানজী, সন্দ্বীপ ভট্টাচার্য, কৃষ্ণপদ ঘোষ, সুমন দেবনাথ, বিএনপি নেতা এ এম নাজিম উদ্দিন, আবু সুফিয়ান, মোরশেদুল আলম কাদেরী, কাউন্সিলর এস এম ইকবাল হোসেন প্রমুখ।


No comments:

Post a Comment