আগুন নেভানোর চেষ্টায় বর্মী দমকল বাহিনী (ফাইল ফটো)
সর্বশেষ আপডেট সোমবার, 22 অক্টোবর, 2012 12:59 GMT 18:59 বাংলাদেশ সময়
পশ্চিম বার্মার রাখাইন প্রদেশে নতুন করে সহিংসতায় অন্তত তিন ব্যক্তি নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে দু'জন মুসলমান এবং একজন বৌদ্ধ বলে জানা যাচ্ছে।
বিবিসির বার্মিজ বিভাগের সাংবাদিকরা জানাচ্ছেন, রাখাইন প্রদেশের মিন বিয়া এবং মিয়াউক-উ শহরের তিনটি এলাকায় গত রাত থেকে চলা সহিংসতায় মুসলমানদের প্রায় ৪০০টি ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, একটি তুচ্ছ ঘটনা থেকে সর্বশেষ এই সহিংতার সূত্রপাত।এই হামলার জন্য স্থানীয় মুসলমান এবং রাখাইনরা পরষ্পরকে দায়ী করেছে।ঐ এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে বলে কর্মকর্তারা বলছেন।
বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গাদের সংঘাতের দীর্ঘ ইতিহাস
এরকম সংঘাত আগেও বহুবারই হয়েছে।রাখাইন প্রদেশের নাম কিন্তু সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইন বৌদ্ধদের নামেই, যদিও সেখানে প্রায় আট লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলিমও বাস করে।
কিন্তু এই রোহিঙ্গাদের বার্মার সরকার তাদের নাগরিক বলে স্বীকৃতি দেয় নি, তারা মনে করে এরা বার্মার বাইরে থেকে সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে গিয়ে বসতি গেড়েছে।
রোহিঙ্গারা অভিযোগ করে যে বার্মায় তারা প্রায় সর্বক্ষেত্রেই বৈষম্যের শিকার।
তাদের কাজ, সম্পত্তি কেনা, চলা-ফেরা, সবকিছুর ওপর নানারকম সরকারি বিধিনিষেধ আছে। এসব কারণে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে এরকম সংঘাত আগেও হয়েছে।
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে, সরকারি নিরাপত্তাবাহিনীর হামলার মুখে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম সেখান থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল।
তাদের বেশির ভাগকে বার্মা ফিরিয়ে নিলেও প্রায় ২০,০০০ রোহিঙ্গা কিন্তু এখনো বাংলাদেশের কয়েকটি শরণার্থী শিবিরে রয়ে গেছেন।
সুতরাং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে এই রাখাইন বৌদ্ধদের উত্তেজনা নতুন কিছু নয়।
লেখক: সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি | মঙ্গলবার, ২৩ অক্টোবর ২০১২, ৮ কার্তিক ১৪১৯
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যখন সারাবিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে, তখন সরকারের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার জন্য একটি কুচক্রী মহল নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তারা বিশ্ব দরবারে দেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে নিজেদের অসত্ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে পরিকল্পিতভাবে রামুসহ বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মন্দির ও বাড়িঘরে হামলা করেছে। আবার তারাই সরকারের ওপর এর দায় চাপিয়ে মিথ্যাচারের রেকর্ড স্থাপন করছে। সোমবার বিকালে জেলার কামারখন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আব্দুল মতিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মোস্তাফিজুর রহমান, অ্যাডভোকেট কে এম হোসেন আলী হাসান, অ্যাডভোকেট বিমল কুমার দাস, জান্নাত আরা তালুকদার হেনরি প্রমুখ।
এখন যদি আপনি গুগল করেন ‘বাংলাদেশ’ শব্দটা লিখে, অন্য কয়েকটা জিনিসের সঙ্গে যা পাবেন, তা হলো নিউইয়র্কে বাংলাদেশি তরুণ আটকের খবর। ২১ বছরের ওই তরুণ নাকি নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ভবন বোমা মেরে উড়িয়ে দিতে উদ্যোগ নিয়েছিল। এই খবরটা প্রচারিত হওয়ার পর বাংলাদেশের মানুষদের মধ্যে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়েছে? এক. উদ্বেগ। উৎকণ্ঠা। শঙ্কা। সর্বনাশ! এ কী খবরের সঙ্গে বাংলাদেশের নাম জড়িয়ে গেল! প্রবাসী বাংলাদেশিরা না আবার নানা ধরনের চাপ, হয়রানি, অতিরিক্ত নিরাপত্তা তল্লাশি, সন্দেহের ঘেরে পড়ে যান। আমাদের ছেলেমেয়েদের না বিদেশে পড়তে যেতে অসুবিধা হয়। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য না ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই রকম ঘৃণ্য অমার্জনীয় কাজের সঙ্গে বাংলাদেশের তরুণ যুক্ত হতে গেল কেন? দুই. সন্দেহ। বাংলাদেশের একজন তরুণ এই কাজ করতে পারে? এটা কি সম্ভব? তিন. ষড়যন্ত্রতত্ত্ব। বাংলাদেশের কোনো তরুণের পক্ষে এ ধরনের কাজ করা সম্ভব নয়, কাজেই এটা একটা ষড়যন্ত্র।
অর্থাৎ বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষই এ ধরনের খবরের সঙ্গে বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হোক, তা চায় না। যখন উচ্চারিত হয়, তখন বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ সেটা মেনে নিতে পারে না, বিশ্বাস করতে চায় না। এর কারণ কী? কারণ, বাংলাদেশের মানুষ মোটের ওপর খুবই শান্তিপ্রিয়। বাংলাদেশের মানুষ যুদ্ধবাজ নয়, তারা তাদের সুদীর্ঘ ইতিহাসের কোনো পর্যায়েই কখনোই পররাজ্যে হামলা করেনি। এখানে সব ধর্মই শান্তির কথা বলে, সম্প্রীতির কথা বলে। আর এ দেশে ইসলাম প্রচারিত হয়েছে সুফি-সাধকদের মাধ্যমে, যাঁরা বলে গেছেন প্রেমের কথা, যাঁদের সাধনা মরমি সাধনা। এখনো এই দেশের অনেক মাজারে হিন্দু-মুসলমাননির্বিশেষে হাজির হয়, শিরনি দেয়। কাজেই কোথাও বোমা ফুটলে, কোথাও মানুষের প্রাণহানি ঘটতে দেখলে বাংলাদেশের মানুষের মন কেঁদে ওঠে। কাজেই বাংলাদেশের একজন নাগরিক কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রমে যুক্ত থাকতে পারে, এটা বিশ্বাস করতে আমাদের কষ্ট হয়। এফবিআই ফাঁদ পেতে যে কৌশলে ওই তরুকে হাতেনাতে ধরেছে, খোদ আমেরিকাতেই সে কৌশলের সমালোচনা করা হয়েছে, হচ্ছে, আমরা এখন বিভিন্ন কাগজের মাধ্যমে তা জানতে পারছি। ব্যাপারটা এখনো বিচারাধীন। আর আমেরিকার গ্র্যান্ড জুরি বলবে আদৌ এই মামলা চলবে কি না। কাজেই বিচারাধীন কোনো বিষয় নিয়ে এবং ব্যাপারটা সম্পর্কে খুব বেশি না জেনে আমাদের পক্ষে কোনো মন্তব্য করা সংগত হবে না। তবে একটা আফসোস নিশ্চয়ই আমাদের হচ্ছে, ওই তরুণটির মনে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আছে, এটা জানার পর তাকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনায় কৃত্রিম সহযোগিতা না করে কি কাউন্সেলিং করা যেত না? একটা উর্বর বীজতলায় আপনি সন্ত্রাসবাদের বীজ ফেলবেন নাকি উদার মানবিকতা, অহিংসা, সম্প্রীতির বীজ ফেলবেন? আমরা সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের ঘোরতর বিরোধী। আমরা বারবার প্রচার করব প্রাচ্যের অহিংসাবাদের বাণী। বলব, ভালোবাসো, ঘৃণা কোরো না; বুকে টেনে নাও, আঘাত কোরো না। হিংসা কেবল হিংসা ডেকে আনে। ভালোবাসাই জন্ম দেয় ভালোবাসার। ও ভাই ভয়কে মোরা জয় করিব হেসে, গোলাগুলির গোলেতে নয় গভীর ভালোবেসে। ভালোবাসায় ভুবন করে জয়, সখ্যে তাহার অশ্রুজলে শত্রুমিত্র হয় সে যে সৃজন পরিচয়। বলছি, একটা উর্বর তৈরি বীজতলায় আপনি কিসের বীজ বপন করবেন, সম্প্রীতির নাকি বিদ্বেষের। আর পৃথিবীর কাছে আপনি আপনার দেশের কোন ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চান, একটা শান্তিবাদী দেশের, নাকি যে দেশের কোনো না কোনো নাগরিক সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত, সেই দেশের? আমি মনে করি, আমাদের দেশের শিক্ষার মধ্যে, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে বেশ একটা সমস্যা আছে। আমাদের দেশে আমরা খুব নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার করে থাকি। একটা অদ্ভুত বৈপরীত্য আছে আমাদের মধ্যে। একদিকে বাঙালিদের সমালোচনায় বাঙালিদের মতো মুখর আর কেউ আছে কি না সন্দেহ। বাঙালি হুজুগে, বাঙালি দুর্বল, বাঙালি দুর্মুখ—এটা আমরা নিজেরা প্রচার করি সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে আমরাই শ্রেষ্ঠ, এই ধরনের একটা মনোভাবও আমাদের আছে। আর আমরা বহুত্বে একদম বিশ্বাস করি না। আপনি বিশ্বের যেকোনো দেশের রাজধানীতে যান, দেখবেন, নানা রঙের, নানা আকারের মানুষ। কেউ সাদা, কেউ কালো, কারও নাক বোঁচা, কারও নাক খাড়া। আমাদের ঢাকা শহরে আমরা শুধু একই ধরনের চেহারা দেখে থাকি। লেখক শাহরিয়ার কবির আমাকে একটা গল্প বলেছিলেন। বিদেশে কোনো একটা অনুষ্ঠানে ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’ গানটা গাওয়া হচ্ছিল। তাতে ওই যে পঙিক্ত আছে: এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি—সেটার অনুবাদ শুনে শ্রোতারা আপত্তি করেছিল। বলছিল, তোমরা এ কী গান গাইছ? নিজেদের শ্রেষ্ঠ বলে প্রচার করা তো নাৎসিবাদ! আমাদের স্কুল-কলেজে আমরা তো এ ধরনের শিক্ষাই দিই। আমরাই শ্রেষ্ঠ। আমাদের ভাষা শ্রেষ্ঠ। আমাদের সাহিত্য শ্রেষ্ঠ। আমাদের ধর্ম শ্রেষ্ঠ। আমাদের মতবাদ শ্রেষ্ঠ। আমাদের জাতি শ্রেষ্ঠ। আমার ধারণা, এই উচ্চমন্যতা এসেছে হীনম্মন্যতা থেকে। জীবনের সর্বক্ষেত্রে মার খেতে খেতে, পরাজিত হতে হতে এখন আমরা আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে উচ্চমন্যতাকে বর্ম হিসেবে ধারণ করে নিয়েছি। অন্যদের মতও যে মত, অন্যদের বিশ্বাসও যে বিশ্বাস, সব মত, সব পথই যে শ্রদ্ধেয়, সবাই মিলেই যে এই পৃথিবীতে বিরাজ করতে হবে, এই কথাটা আমরা কিন্তু খুব কম সময়েই উচ্চারণ করি। তার ফল মাঝেমধ্যে হয়ে পড়ে খুব মারাত্মক। আমরা কোনো এক ছুঁতোয় হামলে পড়ি রামু-উখিয়ার বৌদ্ধমন্দিরে ও বসতিতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ক্রিকেটে হেরে আমরা তাদের বাসে ঢিল ছুড়ি। আর আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে গুরুতর গলদ আছে। আমরা কেবল নোট পড়িয়ে, এমসিকিউয়ের উত্তর শিখিয়ে ভালো ফল আদায় করার চেষ্টায় রত। ছাত্রছাত্রীরা আর কবিতা পড়ে না, গল্প পড়ে না, তারা কেবল প্রশ্নের উত্তর শেখে। আগে সবাই হরে-দরে ডাক্তারি-ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চাইত, এখন পড়ে এমবিএ-বিবিএ। সাহিত্য, দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস, কলা না পড়লে একটা ছেলের মনটা উদার হবে কী করে? স্মরণ করিয়ে দিতে চাই শিকাগোর সিয়ারস টাওয়ারের নিচে আবক্ষ মূর্তির সঙ্গে খোদিত প্রকৌশলী এফ আর খানের উক্তি, ‘একজন প্রযুক্তিবিদের অবশ্যই তার আপন প্রযুক্তিতে হারিয়ে যাওয়া উচিত নয়। তাকে অবশ্যই জীবনকে উপভোগ করতে জানতে হবে। আর জীবন হলো শিল্প, নাটক, সংগীত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—মানুষ।’ নিউইয়র্কে এফবিআইয়ের ফাঁদে ধরা পড়া ছেলেটি যদি সত্যি সত্যি এ রকম একটা ভয়ংকর অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে, তাহলে কি আমাদের আত্মজিজ্ঞাসা করে দেখতে হবে না, কোন শিক্ষা, কোন সংসর্গ, কোন পরিস্থিতি তাকে অপরাধী করে তুলল? আমরা বহুদিন থেকে শুনে আসছি, নিষিদ্ধঘোষিত একটা রাজনৈতিক সংগঠন দেশের নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চৌকস ছেলেমেয়েদের টার্গেট করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। আর কোন কোন স্কুলে জাতীয় সংগীত গাওয়া নিষেধ, সেসবের খবরও তো আমরা মাঝেমধ্যে পাই। আমি অতি-সরলীকৃত করে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল থেকে পড়ে বেরিয়েছেন, শিল্পে-সংস্কৃতিতে-সমাজসেবায় প্রগতির চর্চায় ভালো করছেন, এই রকম বহুজনের সঙ্গে আমার প্রত্যক্ষ পরিচয় আছে। কিন্তু ওই স্কুলে বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারি টেস্ট দিতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা আমার হয়েছিল, সেটা আরেকবার বলি। আমি আগের বারের বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই ছিলাম। পরের বারেরটা তবু দিতে গেছি। প্রিলিমিনারি টেস্টে পেনসিল দিয়ে গোল্লা ভর্তি করে প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। এটা কম্পিউটারের মাধ্যমে নিরীক্ষা করা হয়। তো ওই উত্তরপত্রে নাম সই করতে হয়। আমি সই করেছি বাংলায়। কারণ, আমার স্বাক্ষর সব সময় বাংলাতেই আমি দিয়ে থাকি। ওই রুমের পরিদর্শক এসে আমার উত্তরপত্রে স্বাক্ষর দিতে গিয়ে বললেন, আপনি বাংলায় সাইন করেছেন কেন? এটা তো কম্পিউটারে দেখা হবে, কম্পিউটার তো বাংলা পড়তে পারে না। আমি তাঁকে বললাম, কম্পিউটার বাংলা কিংবা ইংরেজি কোনোটাই পড়তে পারে না। আর আমার স্বাক্ষর একটাই আর তা বাংলা। আমার খাতা যদি বাতিল হয়, তো আমার হবে। কারণ, এর আগের বারও আমি পাস করেছি, এই বাংলা সাইন দিয়েই। আমি নিজে একজন প্রকৌশলী। আর এই উত্তরপত্র বুয়েটেই যাবে। আপনি আমার এই বাংলা সাইনটাই রাখতে দিন। কারণ, আমার ইংরেজি সাইন নেই। তিনি কিছুতেই আমার খাতায় সই করবেন না। আমিও রেগে গেলাম। হইচই বেধে গেল। তিনি চিৎকার করতে লাগলেন, পরীক্ষা হলে একজন সন্ত্রাসী ঢুকে পড়েছে। পুলিশ চলে এল। সে অনেক দিন আগের কথা। এই গল্প আমি রস+আলোয় লিখেওছি। যতবার মনে পড়ে, ততবার হাসি। কিন্তু একটা পরাজিতের বেদনাও আমার হয়। কারণ, উনি আমাকে ইংরেজিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছিলেন। আমার খুব উদ্বেগ হয়, এই শিক্ষকেরা শিশুদের কী শেখান? আমি কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি, অন্য শিক্ষকেরা যেন এই রকম না হন। বা অন্য বিষয়ে যেন এই শিক্ষকও এই ধরনের একগুঁয়েমি প্রদর্শন না করেন। আমাদের শিক্ষার্থীদের আমরা যেন উদার মানবিকতাবোধের সন্ধান দিই। সন্ত্রাসের নয়, সম্প্রীতির শিক্ষা দিই। সামপ্রদায়িক বিভেদ নয়, বহু মত, বহু পথের সঙ্গে সম্প্রীতিময় সহাবস্থানের আদর্শে দীক্ষিত করি। আমাদের জাতীয় সংগীতটি কিন্তু অপূর্ব। জাতীয় সংগীতে আমরা ভালোবাসার কথা বলি, সৌন্দর্যের কথা বলি, শ্রেষ্ঠত্বের বড়াই করি না। আমরা বাইরের জগতের কাছেও আমাদের ভালোবাসার বার্তা নিয়েই হাজির হতে চাই। বাংলার মানুষের শান্তিপ্রিয়তার বার্তাই আমরা বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দিতে চাই। কিন্তু আমাদের দেশের সঠিক ভাবমূর্তি তুলে ধরার ব্যাপারে সরকারের দিক থেকে বা জাতীয়ভাবে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে আমার জানা নেই। বরং আমাদের কর্তাব্যক্তিরা এমন সব কাণ্ড ঘটিয়ে থাকেন, যাতে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবকে আমরা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার কাজে ব্যবহার করতে পারতাম। তা না করে তাঁকে নানাভাবে হয়রানি করে আমরা কার মুখ উজ্জ্বল করলাম? আমাদের বিরোধী দলের নেতারা সুযোগ পেলেই বিদেশিদের কাছে আমাদের সরকারের নিন্দা করেন। সেটা করতে গিয়ে তাঁরা যে দেশেরই ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেন, সেটা কি তাঁরা জানেন? পৃথিবীর কাছে বাংলাদেশের উজ্জ্বল দিকগুলোই যেন আমরা তুলে ধরি। আর নিজেদের দুর্বলতাগুলোর সমালোচনার মাধ্যমে সেসব যেন আমরা কাটিয়ে উঠতে পারি। আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ
ক্যাটাগরী: মাত্র ২ দিনের ব্যবধানে বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় দুই সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বাংলাদেশে অবশ্যই এই ধরনের ঘটনা নতুন না হলেও এবারের বিষয়টি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে আমি মনে করি । যুগে যুগে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির হাজারো দৃষ্ঠান্ত স্হাপন করেছে । সেই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরূ করে ৭১ এর হাত ধরে বর্তমান পর্য়ন্ত যেন সবাই সবার কাধে কাধ মিলিয়ে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে । বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ তাই এই ক্ষেত্রে অনন্য । এইবারের বিষয়টি এতো গুরূত্ব সহকারে দেখার অন্যতম কারণ হচ্ছে , সাম্প্রতীক সময়ে কিছু ঊশৃংখল মানুষের কারণে আমরা আমাদের সেই সম্প্রীতির ঐতিহ্য হারাতে বসেছি যা আমাদের দেশের জন্য ও জাতি হিসেবে আমাদের জন্য কলংকজনক । কিন্তু সামান্য কয়েকজন মানুষের জন্য আমরা এতো বড় লজ্জা বয়ে বেড়াতে পারিনা , তাই আমাদের উচিত তাদের প্রতিহত করা ।কিন্তু এই ঘটনার ফলে আমাদের সম্প্রীতির মধ্যে সামান্য হলেও অবিশ্বাসের চিড় ধরেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই । সবাই মিলে র্তমানে সেই সন্দেহ দূর করার চেষ্ঠা করছি আমরা এবং এ ব্যাপারে সরকার নিজেও বেশ আন্তরিক রয়েছে । এবং সেই বিশ্বাস পূণরূদ্বারের আসল সূযোগ আমাদের হাতে এসেছে । আর তা হচ্ছে এই উৎসব গুলো । সবার উচিত এই দুটো উৎসব যাতে সুন্দর ভাবে শেষ হয় সেই দিকে খেয়াল রাখা এবং এ ব্যাপারে নিজ নিজ অবস্হান থেকে সতর্ক থাকা । কারণ আমরা যদি সুন্দর ভাবে তা পালন করতে পারি তবে আমরা দেশে বিদেশে আমাদের সম্মান উজ্জল করতে পারবো এবং দেশ গঠনে আসরা সবাই সমান তালে কাজ করে যেতে পরবো । করণ উন্নত বাংলাদেশ গঠনে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিকল্প নেই । অবশেষে আশা করবো আমরা যেন আমাদের যার যার ধর্ম ঠিকভাবে পালন করতে পারি । আমাদের কারো উচিত নয় অন্য কারো ধর্ম কে অসম্যান করা , আমরা কেন এই সব কাজ করি তার কোন ব্যাখ্যা কি আমরা দিতে পারবো , কি মজা পায় অন্যের ধর্মকে অপমান করে ? আসুন আমরা সূখী বাংলাদেশ গড়ি । সবাইকে পূজা ও ঈদের শূভেচ্ছা ।
No comments:
Post a Comment