বৃহস্পতিবার | ১৮ অক্টোবর ২০১২ |
কণ্ঠস্বর
রাহাত খান
১৯৭২ সালে বাঙালিদের ওপর ঠিক এ ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ, লুটপাট ও অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছিল বর্বর পাকিস্তান বাহিনী আর তাদের মদদ জুগিয়েছিল আলবদর, রাজাকার ও আলশামসের দালালরা। বৌদ্ধবিহার ধ্বংসের নারকীয় ঘটনা সেই বর্বর ধ্বংসযজ্ঞের স্টাইলকেই মনে করিয়ে দেয়। মওদুদিবাদী জামায়াত এবং অধুনা তাদের রাজনীতির পরিবারভুক্ত বিএনপির কিছু লোকই সাম্প্রদায়িকতার ঘৃণা বিষবাষ্প উস্কে দিয়ে রামু, উখিয়া ও টেকনাফে বৌদ্ধবিহারের এই ধ্বংসযজ্ঞ সাধন করেছে। এ বিষয়ে বিএনপির মওদুদির রিপোর্ট সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য! তারা তো নিজেদের করা সব অপকর্ম চাপা দিতে এ ধরনের ঘটনায় আওয়ামী লীগ দায়ী বলে রায় দেন বরাবরই। ২১ আগস্টে জঘন্য গ্রেনেডবাজিতে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের হত্যাচেষ্টার পেছনেও নাকি দায়ী ছিল আওয়ামী লীগ নিজেই! সংসদে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়া দম্ভভরে এই ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার কাছে নাকি প্রমাণপত্রও ছিল!
সেই প্রমাণপত্রের নাম কি জজ মিয়া নাটক? আওয়ামী লীগ এবার ক্ষমতাসীন হওয়ার দেড় মাসের মধ্যে ঘটেছিল পিলখানায় ৪৭ জন দক্ষ, মেধাবী সমরকর্তাদের নির্মম-নৃশংস হত্যাকাণ্ড। এটাও নাকি বিএনপি-জামায়াতের ভাষ্যমতে, আওয়ামী লীগই করেছিল! কেন করেছিল? আওয়ামী লীগ নাকি 'বাংলাদেশ আর্মি'র ওপর নাখোশ!
আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ আর্মির ওপর নাখোশ হবে কেন? স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী তো গড়ে তুলেছিল বঙ্গবন্ধু-তাজউদ্দীন আহমদের সরকারই। তা ছাড়া ২০০৮ সালে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেটা ছিল দেশি-বিদেশি নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ দল ও রাজনৈতিক মহলের মতে, সবচেয়ে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন। সেই দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ৪৭ জন সেনা কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারকে হত্যার ষড়যন্ত্র করবে কেন আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট সরকার?
এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর নেই বিএনপি-জামায়াতের কাছে। সদুত্তর নেই পিলখানা গার্নেজের দিন খুব ভোর-সকালে কালো কাচে ঘেরা গাড়িতে করে তদানীন্তন ক্যান্টনমেন্টের 'বাড়ি' থেকে বেরিয়ে পরবর্তী তিন দিন কোথায় পালিয়ে ছিলেন বিএনপির প্রধান বেগম খালেদা জিয়া! বিশেষ একটি দেশের হাইকমিশনে? সম্ভবত তাই। কিন্তু পালিয়ে তিন দিন নিখোঁজ ছিলেন কেন? খালেদা জিয়া কোনোদিন এ প্রশ্নের উত্তর দেননি। যেমন উত্তর দেননি ফখরুদ্দীন সরকার আমলে তার ও তার 'যোগ্য' অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের কালো টাকা সাদা করার ঘটনাটির। এটা কি দুর্নীতির চরম পরাকাষ্ঠা নয়? অন্য কোনো সভ্য দেশ হলে শুধু কালো টাকা দণ্ড দিয়ে সাদা করার অপরাধেই রাজনীতিতে ডিসকোয়ালিফাইড বলে গণ্য হতেন তারা। এসব লোক এবং তাদের দল ও মিত্ররা যখন সবকিছুর জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে, অবাক হই না। কারণ, কে না জানে এক কান কাটা চোর কাটা কান হাতচাপা দিয়ে বাজারে ও জনসমাগমে চলাফেরা করে। কিন্তু চুরির দায়ে দুই কান কাটা চোর কান হাতচাপা না দিয়েই চলাফেরা করে! ন্যাংটার আবার বাটপারের ভয় কি?
আওয়ামী লীগ, সরকারের সংযুক্ত অন্যান্য দল, কমিউনিস্ট পার্টিগুলো (হক, তোয়াহা, মতিনের অনুসারী ছাড়া) অসাম্প্রদায়িক, এটা বহু বছর ধরে রাজনীতিতে পরীক্ষিত সত্য। এরপরও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ঘৃণ্য অনুসারীরা দেশে সংঘটিত যে কোনো বড়মাপের হত্যাযজ্ঞ এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, হত্যা ও লুটপাটের মতো জঘন্য ঘটনার জন্য দায়ী করে আওয়ামী লীগকে! এতে আর কিছু না হোক, দুই কান কাটা সাম্প্রদায়িক দলগুলোর নির্লজ্জতা নানাভাবে নানারূপে ঠিকই প্রকাশ পায়।
বৌদ্ধবিহারের ঘটনার নেপথ্যে উত্তম বড়ূয়ার ফেসবুককে কৌশলে ব্যবহার করা হয়েছে। এটা এখন প্রমাণিত সত্য। এরপরও উত্তমের মা-বোনকে গ্রেফতার করা হয়েছে কেন? পুলিশ বা প্রশাসনের কারা এই কাজটা করেছে? যারাই করে থাকুক, তারা যে দেশের সাম্প্রদায়িক ও পাকিস্তানপন্থি লোকদের অনুসারী ও এজেন্ট এবং সরকারের ভেতর লুকিয়ে থাকা সরকারের শত্রু, এ বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। এদের চিহ্নিত করা উচিত। সন্ত্রাসীদের চেয়েও ভয়ঙ্কর ও ক্ষতিকর সরকারের ভেতর লুকিয়ে থাকা এসব আমলা ও পুলিশকে সরিয়ে না দিলে এর ফল সরকারকেই ভোগ করতে হবে। মনে রাখা দরকার, বৌদ্ধবিহার ধ্বংসে শান্তিপ্রিয় বৌদ্ধ সম্প্রদায় এমনিতে সংক্ষুব্ধ। তার ওপর সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ঘরের শত্রু বিভীষণরা যদি উত্তম বড়ূয়ার মা ও বোনকে গ্রেফতারের প্রশ্নে আরও সংক্ষুব্ধ হয়, তাহলে আর কোনোভাবে না হোক, ২০১৪ সালে সাধারণ নির্বাচনে এই সংক্ষোভের প্রতিফলন ঘটবেই। আর চক্রান্তবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি তো সেটাই চায়।
আমি যখন এই লেখা তৈরি করছি, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রধান দুই প্রার্থী_ বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক এইচ ওবামা এবং তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মিট রমনির মধ্যে দ্বিতীয় দফা তর্কযুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে। প্রথম তর্কযুদ্ধে ওবামা ছিলেন রক্ষণাত্মক এবং ম্রিয়মাণ। এতে করে তার প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা মিট রমনির ঔজ্জ্বল্যের কাছে ম্লান হয়ে গিয়েছিল। প্রথম তর্কযুদ্ধের আগ পর্যন্ত ওবামা রমনির চেয়ে বরাবর পাঁচ থেকে দুই পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু বিতর্ক শেষ হওয়ার পর অত্যন্ত বিশ্বস্ত ও পেশাদার জরিপের ফলাফলে মিট রমনি শুধু সেই ব্যবধান কমিয়েই আনেননি, সব বিচারেই ওবামার চেয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন দুই থেকে পাঁচ পয়েন্টে। রিপাবলিকান পার্টি বিভক্তি মতভেদ ও স্ববিরোধিতা কাটিয়ে যেন নবজীবন লাভ করল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলো তাদের হাত থেকে জনগণের গ্রহণযোগ্যতার গুণে বারাক ওবামার আয়ত্তে চলে গিয়েছিল, অথচ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার প্রশ্নে অত্যাবশ্যক সেসব রাজ্যের কোনো কোনোটি এখন আবার চলে গেছে রিপাবলিকানদের আয়ত্তে।
অবশ্য দ্বিতীয় তর্কযুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ওবামা তার সেই অবিস্মরণীয় বাগ্মিতা, যুক্তিগুণ এবং সপ্রতিভতা বহুলাংশে ফিরে পেয়েছেন বলেই বিভিন্ন গ্যালপ পোলের সূত্রে জানা গেছে। দ্বিতীয় তর্কযুদ্ধে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে দুই পক্ষের মধ্যে। বিশেষ করে, ওবামার ট্যাক্স আরোপ, পররাষ্ট্রনীতি ও স্বাস্থ্যসেবা আইনের বিপক্ষে এবার রমনি আগেরবারের মতো প্রায় ওয়াক পাওয়া দূরে থাকুক, বিতর্কে এসব বিষয়ে ওবামাকে অতিক্রম করা তার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
ওবামার নির্বাচনী ট্রাম্পকার্ড হচ্ছে আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ গোষ্ঠী, উদার নীতিতে বিশ্বাসী মার্কিন শ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়, মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র ভোটারশ্রেণী এবং মার্কিন মহিলাদের গরিষ্ঠ অংশ। ওবামার নির্বাচনী দুর্বলতা হচ্ছে অর্থনীতিতে ধস, বেকার সংখ্যা বৃদ্ধি এবং আরব বসন্ত আন্দোলনে সঠিক নেতৃত্ব দিতে না পারা। তবে এখন ওবামার পক্ষে যাবে অর্থনীতি শ্লথগতিতে হলেও গতি সঞ্চার হওয়া, বেকারত্ব আগের তুলনায় দেড় পার্সেন্ট কমিয়ে আনা, ইসরায়েলি যুদ্ধবাজ নেতা নেতানিয়াহুর গর্জনে অটল থেকেও ইরান-যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে না পড়া এবং ইহুদি লবির একটা বড় অংশের সমর্থন পাওয়া। ইরাক ও আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য দেশে ফিরিয়ে আনতে পারা এবং অতি অবশ্যই, নাইন-ইলেভেনের 'ভিলেন' ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করার কৃতিত্ব। সবই নির্বাচনে ওবামার পক্ষে যাবে বলে রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা।
অন্যদিকে মিট রমনির ট্রাম্পকার্ড হচ্ছে বারাক ওবামার যা কিছু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যর্থতা, সবকিছু বিতর্কে তিনি সুনিপুণ_ সামান্য ব্যর্থতাকেও অসামান্য করে তুলতে পারেন ভোটারদের কাছে। মার্কিনিদের চিরকালীন আদর্শ হচ্ছে পুঁজিবাদকে সম্প্রসারিত করা এবং ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর ভূমিকাকে সমর্থন করা। মার্কিন পুঁজিবাদকে 'ওয়েলফেয়ারের' একটা রূপ দিতে চাইছেন ওবামা_ এই অভিযোগ রক্ষণশীল মার্কিন শ্বেতাঙ্গদের বড় অংশটিকে ওবামাবিরোধী করে তুলতে পারে। এ ছাড়া লিবীয় দূতাবাসে হামলা ও রাষ্ট্রদূতসহ কয়েকজন মার্কিনির মৃত্যু নির্বাচনে ওবামার গ্রহণযোগ্যতাকে চাপের মধ্যে ফেলতে পারে।
নির্বাচনে মিট রমনির দুর্বলতা হচ্ছে, নিজের ব্যবসা-সাম্রাজ্যে আউট সোর্সিংয়ের সুবাদে কয়েক হাজার মার্কিনিকে বরখাস্ত করা। নির্বাচনে পরিষ্কার কোনো অঙ্গীকার তুলে ধরতে না পারা। দুনিয়ার যত ভালো ভালো কথা, সব উচ্চারণ করা এবং রাজনীতিকে ধোঁয়াটে করে তোলা। তার নিশ্চিত ভোটব্যাংকের পরিধি ক্রমে প্রসারিত হচ্ছে বটে, তবে এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ওবামার নিশ্চিত ভোটব্যাংকে কতটা হানা দিতে সক্ষম হবেন, তা বলা সহজ নয়। আগামী ৬ নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জয়ের সম্ভাবনা এখনও ওবামার বেশি। তবে এক মাসে কত কিছু ঘটতে পারে। তাই নির্বাচনে ফলাফল কী হবে, সেটা সময়ের ওপর ছেড়ে দেওয়াই ভালো।
রাহাত খান :কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
বৃহস্পতিবার | ১৮ অক্টোবর ২০১২ |
অহিংসা পরম ধর্ম
মো. মামুনুর রশীদ
স্বাধীন বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িকতার চর্চা মূলত রাষ্ট্রীয়ভাবে শুরু হয় '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, '৭০-এর নির্বাচন এবং নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে। এই যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা সোনার বাংলাদেশ পেয়েছি। যেটি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের। তবে বিভিন্ন সময় এখানে সাম্প্রদায়িকতার ছায়া বৃদ্ধি করার চেষ্টা চালানো হয়েছে। যতবারই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের পাঁয়তারা চালানো হয়েছে ততবারই আমরা তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, এটাই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং এখানে ধর্মীয় বিরোধী হামলার ঘটনা খুব বেশি যে ঘটেছে, তা নয়। তবে কিছু ঘটেছে সেটা অস্বীকার করার জো নেই। গত এক বছরের পরিসংখ্যানে লক্ষ্য করা যায়_ চট্টগ্রাম, সাতক্ষীরাসহ কিছু জায়গায় একদল উগ্রপন্থি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটিয়ে চলেছে। আর সাম্প্রতিক রামুর ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক ঘটনা! এ ঘটনায় আমাদের রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দাতা দেশের চাপে যে রয়েছে সেটা সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়। এ ঘটনায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধ্বংসের অভিযোগের আঙুল উঠেছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, উঠবেই।
সম্প্রতি রামু, উখিয়া, কক্সবাজারের ঘটনাটি প্রমাণ করে, সাম্প্রদায়িক আক্রমণের ধারা বাংলাদেশে একটি শক্ত অবস্থানে পেঁৗছে যাচ্ছে। উদ্বেগের খবর আসলে এখানেই। ধ্বংসযজ্ঞ স্থান পরিদর্শন করে বোঝা যাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন সম্প্রীতি রক্ষার্থে সম্পূর্ণ নীরব ছিল। সংবাদ মাধ্যমেও সেই বিষয়টি এসেছে। এই নীরবতা কি প্রমাণ করে না যে, সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ? ২৫০ বছর আগের মৈত্রী বিহারসহ ১২টি বৌদ্ধবিহার ও ৩০টি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এসব ঘটনা যে পূর্বপরিকল্পিত সেটা দিবালোকের মতো সত্য। কেননা এতসব তাণ্ডবলীলা ঘটে গেল, কিন্তু সরকারি গোয়েন্দা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন কী করল আর তাদের ভূমিকাই কী ছিল? এই পরিকল্পিত ঘটনায় বাংলার সংখ্যালঘু ধর্মীয় বৌদ্ধদের মনে যে নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে, সেটি হয়তোবা সহজেই দূর করা সম্ভব নয়। তবে বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হতে হলে সংখ্যালঘুদের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনার বিকল্প নেই। মানবসভ্যতার এই পর্যায়ে এসে একবিংশ শতাব্দীতে একটি দেশের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মীয় কারণে উত্তেজনার সৃষ্টি হবে_ এমনটি কারও কাম্য নয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যেমন ৪১ বছর আগে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, সেখানে আজ সাম্প্রদায়িকতার ট্রাম্পকার্ড চলবে, সেটি হতে দেওয়া যায় না।
দেশকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যেতে হবে। চাই সম্প্রীতি আর ধ্বংস হোক সব অপশক্তি। হিংসা-ভেদাভেদহীন সমাজ চাই। কারণ অহিংসাই পরম ধর্ম।
য় মো. মামুনুর রশীদ : শিক্ষার্থী
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
সম্প্রতি রামু, উখিয়া, কক্সবাজারের ঘটনাটি প্রমাণ করে, সাম্প্রদায়িক আক্রমণের ধারা বাংলাদেশে একটি শক্ত অবস্থানে পেঁৗছে যাচ্ছে। উদ্বেগের খবর আসলে এখানেই। ধ্বংসযজ্ঞ স্থান পরিদর্শন করে বোঝা যাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন সম্প্রীতি রক্ষার্থে সম্পূর্ণ নীরব ছিল। সংবাদ মাধ্যমেও সেই বিষয়টি এসেছে। এই নীরবতা কি প্রমাণ করে না যে, সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ? ২৫০ বছর আগের মৈত্রী বিহারসহ ১২টি বৌদ্ধবিহার ও ৩০টি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এসব ঘটনা যে পূর্বপরিকল্পিত সেটা দিবালোকের মতো সত্য। কেননা এতসব তাণ্ডবলীলা ঘটে গেল, কিন্তু সরকারি গোয়েন্দা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন কী করল আর তাদের ভূমিকাই কী ছিল? এই পরিকল্পিত ঘটনায় বাংলার সংখ্যালঘু ধর্মীয় বৌদ্ধদের মনে যে নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে, সেটি হয়তোবা সহজেই দূর করা সম্ভব নয়। তবে বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হতে হলে সংখ্যালঘুদের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনার বিকল্প নেই। মানবসভ্যতার এই পর্যায়ে এসে একবিংশ শতাব্দীতে একটি দেশের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মীয় কারণে উত্তেজনার সৃষ্টি হবে_ এমনটি কারও কাম্য নয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যেমন ৪১ বছর আগে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, সেখানে আজ সাম্প্রদায়িকতার ট্রাম্পকার্ড চলবে, সেটি হতে দেওয়া যায় না।
দেশকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যেতে হবে। চাই সম্প্রীতি আর ধ্বংস হোক সব অপশক্তি। হিংসা-ভেদাভেদহীন সমাজ চাই। কারণ অহিংসাই পরম ধর্ম।
য় মো. মামুনুর রশীদ : শিক্ষার্থী
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
No comments:
Post a Comment