Saturday, October 6, 2012

রামুর ঘটনা: কতিপয় প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ অক্টোবর ৬, ২০১২



ভূমিকা

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে উপর্যুপরি কয়েকটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রামের হাটহাজারি, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি শহর এবং সর্বশেষ কক্সবাজারের রামু ও উখিয়ায় এ ধরনের অনাকাংখিত পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। বাড়িঘর ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং নাগরিকদের শারীরিক নির্যাতনের এসব ঘটনায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ক্ষতিগ্রস্ল হয়েছে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। আমাদের দেশে হিন্দু ও আদিবাসী সম্প্রদায় বিভিন্ন সময়ে নির্যাতিত হয়েছে, এটা আমরা দেখে অভ্যস্ল। কিন্তু কক্সবাজারে আক্রমণের শিকার হয়েছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সদস্যরা, যারা বাংলাদেশের জনগণের মোট সংখ্যার বিচারে নিতান্তই নগন্য সংখ্যক এবং যাদের ধর্মই হচ্ছে অহিংসা।

কেন এমনটা হচ্ছে, এ নিয়ে সংবাদপত্র, টেলিভিশন-বেতার এবং নাগরিক সমাজে আলোচনা চলছে বিস্লর। এতে অংশ নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলো পরস্পরের প্রতি দোষারোপ ও কাদাছোঁড়াছুড়ি করে চলেছে। কিন্তু প্রকৃত দোষীদের চিহিক্রতকরণ ও শাস্লি প্রদানের বিষয়টি এখন পর্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ৬ই অক্টোবর দৈনিক প্রথম আলোর শিরোনামে উল্লেখ করা হয়েছে, ” ৪০ হামলাকারী শনাক্ত, মূল শক্তি অজানা”।

একটি বিষয় স্পষ্ট যে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে দেশের সব নাগরিক এবং বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও সুবিধাবঞ্চিত নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। নৈতিকভাবে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের দায়িত্ব হচ্ছে প্রতিবেশীদের নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষভাবে মনোযোগী থাকা। বাংলাদেশে প্রচলিত কোনো ধর্মেই অপর ধর্মের মানুষের ওপর অত্যাচার চালিয়ে যাওয়ার কথা বলে না। লোকজ সংস্কৃতির প্রবণতাও হচ্ছে সব ধর্মের মানুষের সংগে মিলেমিশে বসবাস করার পক্ষে অবস্থান গ্রহন। ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’– শাহ আবদুল করিম বয়াতীর এই গান থেকে এখন আমরা বুঝতে পারি এটা ক্রমশ অতীতের বিষয়ে পরিণত হতে চলেছে। কেন এমনটি হচ্ছে? আমার মনে হয় উল্লেখিত প্রতিটি ঘটনার পটভুমিতে সুনির্দিষ্ট একাধিক কারণ রয়েছে। এর কোনটি অর্থনৈতিক, কোনটি রাজনৈতিক এবং কোনোটি আন্তর্জাতিক। তবে এ কারণগুলো সক্রিয় হয়ে তখনই দুর্ঘটনা বা বিপর্যয় ঘটাতে পারে যখন সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের সাধারণ সদস্যদের মধ্যে অপর সম্প্রদায়কে রক্ষার ব্যাপারে সাধারণ দায়িত্ববোধ হাল্কা হয়ে যায় বা তারা কোন না কোন কারণে আবেগে অন্ধ হয়ে পড়ে। আমি এ কথা বলছি না যে প্রতিবেশী সংখ্যালঘুদের প্রতি আমরা উদাসীন হয়ে পড়েছি। কিন্তু এটা নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি যে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আক্রান্ত সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়ানোর ঘটনা ঘটেনি। অর্থাৎ আমরা দাঁড়াইনি। জনগণের সামাজিক মনস্তত্ত্ব যদি সেই মাত্রায় সক্রিয় থাকত, তাহলে এভাবে ঘটনা ঘটার কথা নয়। আমাদের উপরিকাঠামো এবং শাসক শ্রেণীর মধ্যে সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার বিষয়টি নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। কেউ তাদের ভোট ব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করছে, কেউ কেউ তাদের সম্পর্কে হতাশ হয়ে সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রতি সদয় স্নেহের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ ছাড়া ধর্মীয় জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী তো আছেই, যারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে এ দেশ থেকে বিতাড়িত বা বিলুপ্ত করার অভিপ্রায় পোষণ করে এবং সেটা গোপন করে না। নিদেনপক্ষে সংখ্যালঘুদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের বেশি মর্যাদা যেন কোনভাবেই দেওয়া না হয়, সেটা নিশ্চিত করায় তারা তৎপর।

এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে আমরা যখন পাকিস্লান নামক রাষ্ট্রের অধীনে ছিলাম তখনও মুসলিম লীগের পান্ডারা হিন্দুদের ওপর অত্যাচার চালিয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রীয় মহান নীতি হিসেবে ঘোষণা করেছি। আমাদের ঘোষিত লক্ষ্য সব ধর্মের সমান অধিকার। যে দলটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে, সেই আওয়ামী লীগই এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায়। অথচ তারা একটি স্বৈরাচারী দলের সঙ্গে ভোটের সমীকরণ ঠিক রাখার জন্য আপস করে চলেছে। ঠিক এ কারণেই তারা সংবিধানে একটি স্ববিরোধী সংশোধনী এনে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা পুনর্বহালের’ পাশাপাশি রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম বহাল রেখেছে। জঙ্গিবাদের উত্থান নিয়ে সদা খোঁয়ারিগ্রস্ত খোদ যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে নয়, বরং মডারেট মুসলিম দেশ হিসেবে দেখতেই ইচ্ছুক। এমতাবস্থায় যে কোনো ধর্মীয় ইস্যুতে (যা সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের সেন্টিমেন্টে আঘাত করে) তাকে ব্যবহার করে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার চালানো সহজ হয়ে পড়ে। সুবিধাবাদী ও ষড়যন্ত্রকারীরা এসব ইস্যুর সুযোগ নিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করায় সচেষ্ট থাকে। এছাড়া সবল ও ক্ষমতাবানদের সবসময়ই সংখ্যালঘুদের সম্পদ করায়ত্ত করার প্রতি থাকে নজর।

রাষ্ট্রযন্ত্র তখন হয়ত সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর সেন্টিমেন্ট বিবেচনায় রেখে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিশ্চুপ থাকে অথবা বিশেষ ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করে। কার্যত বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা এসব কারনেই দীর্ঘদিন ধরে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। কেউ কেউ এতটাই নিরাপত্তাহীন বলে নিজেকে ভাবেন যে দেশ ছেড়ে অন্য দেশে চলে যাচ্ছেন।


রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা

এ লেখার শুরুতে পর্যায়ক্রমিক যেসব ঘটনার উল্লেখ করেছি তার প্রতিটি ক্ষেত্রেই সাধারণ যে সত্যটি প্রতিষ্ঠিত হয় সেটি হচ্ছে রাষ্ট্রের নিজ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা। সর্বশেষ রামু-উখিয়ার ঘটনা বিশ্লেষণ করলেও আমার ওপরের বক্তব্যের যথার্থতা প্রতিষ্ঠিত হবে। রামুতে প্রধানত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সম্পত্তি ও মঠ আক্রান্ত হয়েছে। পাশাপাশি কিছু হিন্দু মন্দিরও ভাঙচুর হয়েছে। আক্রমণের নেতৃত্ব দিয়েছে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের একটি শক্তিশালী অংশ, যাদেরকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা এমনকি ঘটনার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও নাগরিক সমাজের ব্যাপক উপস্থিতি সত্ত্বেও চিহ্নিত করতে ভয় পায়। ক্ষমতাসীনরা ঘটনার পরপরই আঙ্গুল তুলেছে প্রধান বিরোধীদল বিএনপির প্রতি। জঙ্গিবাদীরাও নিশানায় রয়েছে।


যুদ্ধাপরাধের দায়ে এখন বিচার চলছে জামায়াতে ইসলামীর কয়েকজন শীর্ষ নেতার। আগামী ডিসেম্বরে এসব মামলার রায় হতে পারে, এমন শঙ্কা থেকে একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সক্রিয় সহযোগী এ দলটিও নানা অঘটনের জন্ম দিতে পারে বলে সন্দেহ করা হয়ে থাকে। রামু-উখিয়াতেও তা ঘটা সম্ভব বলে একটি জোরালো মত রয়েছে। প্রত্যুত্তরে বিএনপির আঙ্গুল আওয়ামী লীগের প্রতি। তারা একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলও পাঠিয়েছে ঘটনাস্থলে। যতটুকু জানা যায় যে গোটা ঘটনাটিই ছিল পহৃর্বপরিকল্পিত। বিভিন্ন গণমাধ্যম জানাচ্ছে, রামুতে ট্রাক ও অন্যান্য মোটরযানে করে কক্সবাজার ও অন্যান্য স্থান থেকে দুস্কৃতকারীরা এসে আক্রমণে অংশ নিয়েছে এবং তাদের হাতে এমন কিছু হাতিয়ার ছিল, যা সাধারণ মানুষের হাতে থাকে না। গানপাউডার ও পাথর-কংক্রিটের কথা আমরা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে পারি। এটাও শোনা যায় যে ফেসবুকে উস্কানিমূলক ছবি পাঠানো ছিল পরিকল্পিত এবং তাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রশ্ন এটা নয় যে রামুর ঘটনা গভীর ষড়যন্ত নাকি উত্তেজিত কিছু লোকের তাৎক্ষণিক ক্ষোভের প্রতিক্রিয়া। প্রশ্ন হচ্ছে, জনতাকে সংগঠিত ও সুপরিকল্পিতভাবে উত্তেজিত করল কারা। যথারীতি এবারও এ প্রশ্নের উত্তর দিতে জাতি দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। কে দায়ী– আওয়ামী লীগ, না বিএনপি কিংবা বিএনপির মিত্র মৌলবাদীরা? রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনা থেকেও প্রশু উঠেছে– কে দায়ী, ছাত্রলীগ না ছাত্র শিবির? আমরা এ প্রশ্ন উত্থাপন করতে ভুলে গেছি যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকারী এবং গুণ্ডা বদমাশদের দলীয় রাজনৈতিক পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তাদের অপরাধের মাত্রা এবং অপরাধীদের পরিচয়। কিন্তু রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরাও যখন দলীয় ভাষায় কথা বলতে থাকেন তখন তা সত্য হলেও তা সুষ্ঠু তদন্ত পরিচালনা ও দোষীদের শাস্লি বিধানের কাজের পরিপন্থি হয়ে দাঁড়ায়। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে: বর্তমানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায়। তাহলে কেন আক্রান্ত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সদস্যরা দোষীদের চিহ্নিত করতে ভয় পাবে? তাহলে কি তাদের কেউ কেউ এ ঘটনায় জড়িত? আমি এ কথা বলছি না যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের কেউ এ ঘটনায় জড়িত। কিন্তু এ দলে অনুপ্রবেশ করে কিংবা তাদের ছত্রছায়ায় থেকে সম্পত্তিলোভীরা এরকম ঘটনা ঘটাতে পারে। এ ধরনের অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। একই কথা বিএনপির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বিশেষভাবে আমাদের খুঁজে দেখতে হবে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা কী ছিল। কারণ আমি আগেই বলেছি যে তাদের ঘোষিত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সংখ্যালঘুমুক্ত বাংলাদেশ, ন্যূনতম লক্ষ্য অন্তত: তাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে অবদমিত রাখা। যুদ্ধপরাধের বিচার কাজের অগ্রগতিও তারা শ্যেনদৃষ্টিতে দেখছে বৈকি।


আন্তর্জাতিক প্রসংগ
এরপর আন্তর্জাতিক কিছু প্রসঙ্গ অবতারণা করা যেতে পারে। পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং ভারতের সেভেন সিস্টার নামে পরিচিত সাতটি রাজ্যে আদিবাসীদের সমস্যা দীর্ঘদিন দরে চলে আসছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে দরিদ্র বাঙালিদের পুনর্বাসিত করতে গিয়ে যে ভূমি বিরোধের বীজ বপণ করা হয় সেই বিষবৃক্ষের ফল এখন আমরা ভোগ করছি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য শান্তিচুক্তি করেছেন ঠিকই, ভূমি সমস্যা সমাধানেরও নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু তা কার্যকর করার ক্ষমতা পার্বত্যবাসীর নেই এবং পার্বত্য অঞ্চলের সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনও এর অনুকূলে আছে বলে মনে হয় না। এছাড়াও নানা ধরনের বহিঃশত্রুর চর ও গোয়েন্দা সংস্থাও এ অঞ্চলে তৎপর। অর্থ বিতরণের ঘটনাও ঘটে। ফলে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা যে কোন সময়ে কোন ইস্যুকে কেন্দ্র করে অস্থিশীলতা সৃষ্টি করতে চাইলে রাষ্ট্রের ভেতরের অবাঞ্ছিত এজেন্ট, গুপ্তচর ও বিদেশী অনুচরদের ব্যবহার করে সেটা করতে পারে। এবারে কক্সবাজারে যে ঘটনাটি ঘটল সেখানে বহুদিন ধরে একটি আন্তর্জাতিক উদ্বাস্তু সমস্যা বিদ্যমান ছিল। আমাদের পাশের দেশ মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত মুসলমানরা কক্সবাজারে অনেক বছর ধরে বসবাস করছে। অতি সম্প্রতি মিয়ানমারে সংখ্যাগুরু বৌদ্ধদের হাতে আক্রান্ত হওয়ার পর কিছু রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে আশ্রয়প্রার্থী হয়। সরকার বুঝিয়ে সুঝিয়ে তাদের কিছুসংখ্যককে ফেরত পাঠায়। কিন্তু তাদের মারফত অত্যাচারের যে বিবরণ এখানে প্রচারিত হয়েছে তাতে এখানে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে কিছু বিদ্বেষ স্বাভাবিকভাবেই সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় মুসলিম এইড নামে একটি সংগঠণ অর্থ বিতরণ করছে। ইসলামী ভাবাদর্শ প্রচারও তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য। আমি আগেই বলেছি যে বর্তমান সরকার ভোটের সমীকরণ থেকে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের প্রতি আপোসমূলক মনোভাব পোষণ করে। সম্প্রতি ওই এলাকায় বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ডান মজিনা এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত একটি প্রতিনিধিদলের সদস্যরা সফর করেছেন। ভারতের সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গোপসাগরে একটি নৌঘাটি স্থাপন করতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র তা অস্বীকার করলেও সংশয় কাটছে না। শোনা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে শক্তিশালী স্যাটেলাইট বসিয়ে যাবতীয় টেলিফোন বার্তা শোনা ও ধারণের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের আগ্রহ রয়েছে। আন্তর্জাতিক খবরদারী করায় প্রবলভাবে বিশ্বাসী দেশটির পক্ষে এই আকাংখা থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। সুতরাং এক কথায় বলা যায়, সীমান্তবর্তী ও আঞ্চলিকভাবে স্পর্শকাতর এই এলাকায় কোনো মহল যাতে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য সরকারের তরফে থাকা উচিত ছিল বিশেষ সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক প্রস্তুতি। সরকার সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে।


সমাধান কেন পথে?

দুর্ভাবনার বিষয় যে পুরো ঘটনা এখন দলীয় কাদা ছোঁড়াছুড়ির পর্যায়ে এবং এর ফলে প্রকৃত দোষীরা নিরাপদে এখন রাজনীতির ঘোলা জলে ডুব মারতে সক্ষম হয়েছেন। তাই দ্রুত সমস্যার বীজ উৎপাটিত হবে– এমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না, বরং সাময়িকভাবে আবার ভূ-তলে লুক্কায়িত হয়ে হয়ত আবার কোনো এক সময়ে কোনো এক ফেসবুক কিংবা অন্য কোন তুচ্ছ অজুহাতে গনশত্রুরা তাদের নোংরা চেহারা নিয়ে পুনরায় আবির্ভূত হবে। আমরা জানি, এ ধরনের পরিস্থিতিতে সমাধান একটিই হতে পারে, যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ”স্পেডকে স্পেড বলতে শেখা”। যে বা যারা উস্কানি দিয়েছে, দাঙ্গা সংঘটিত করেছে, শত শত বছরের পুরাতন পুঁথি বোকার মতো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে, শিশুর ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছে, গান পাউডার আগেভাগে মজুত করে রেখে দ্রুত ঘটনাস্থলে প্রেরণ করেছে, কূটবুদ্ধি দিয়ে মোবাইলে ছবি প্রেরণ করেছে, রাষ্ট্রযন্ত্রের দায়িত্বশীল অফিসার হয়েও যারা দায়িত্ব পালন করেনি তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে হয়ত এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যেতে পারে। আর শাস্তি দানের সময় কে আওয়ামী লীগ, কে বিএনপি, কে ভোট ব্যাংকের অধিকারী এবং কে নয়, কে আন্তর্জাতিক মদদে নাচে– এসব দিক একপাশে সরিয়ে রেখে আইনের পক্ষপাতহীন দৃষ্টির মাধ্যমে শাস্তি বিধানের উদ্যোগ নিতে হবে। সমাধান হয়তো এই পথেই আছে।

এম এম আকাশ : অধ্যাপক, অর্থনীতিবিদ, ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়।




রামুর ঘটনা মোটেই বিচ্ছিন্ন নয় অক্টোবর ৪, ২০১২

রামু, পটিয়াসহ কয়েকটি বৌদ্ধ-পল্লীতে গত কয়েক দিন আগে ঘটে যাওয়া নির্মমতা কিসের আলামত? এসব ঘটনা কী নির্দেশ করে? ঘটনাগুলি কি বিচ্ছিন্ন? এসব প্রশ্ন অনেকের মাথার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে তবে সমস্যার মূল কারণ সনাক্তের জায়গায় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান স্যার ছাড়া কেহই যেতে চাচ্ছে না। ঊগ্রতা যদি কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে কম থাকে তাহলে আমার মনেহয় তা বৌদ্ধদের মধ্যেই রয়েছে, অন্তত বাংলাদেশের বাস্তবতায়। চর্যাপদ থেকে শুরু করে আমাদের সংস্কৃতির অনেক কিছুই বৌদ্ধ ধর্ম থেকে আসা। কিন্তু আমাদেরকে কি দেখতে হচ্ছে? অত্যন্ত শান্ত-শিষ্ট এই সমপ্রদায়ের লোকদের বাড়ি-ঘর-উপাসনালয় সব আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। ওদের অপরাধ? সোজা উত্তর: ওরা সংখ্যালঘু। বলা হচ্ছে, ওদের কেহ না-কি ফেসবুকে মুসলমানদের নবীকে ব্যঙ্গ করেছে। নবীকে ব্যঙ্গ করার অপরাধে বা অন্য সম্প্রদায়ের কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অপরাধে তার কি আইন অনুযায়ী বিচার করা যেত না? আসলে ওসব অজুহাত। ‘মেষ তুমি পানি ঘোলা করেছ। না হুজুর, শ্রোততো আপনার দিক থেকেই আসছে। তাহলে তোমার বাবা ঘোলা করেছিল, নাহলে তোমার দাদা।’
রামুর ঘটনা মোটেই বিচ্ছিন্ন নয়। একটি বিষয় বিশ্লেষণ করলেই তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। অবস্থা বুঝতে পেরে রাত আটটার দিকে ওই সম্পদায়ের লোকেরা কিন্তু দলবদ্ধভাবে প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করেছিল। তারপরেও প্রশাসন নিরব ছিল। তাণ্ডব শুরু হলো রাত এগারোটার দিক থেকে। আটটা থেকে এগারোটা, সময় কিন্তু তিনটি ঘন্টা। পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যোগাযোগ হচ্ছে এক সেকেন্ড। সংখ্যালঘুদের উপর বিভিন্নভাবে ঘটানো এসব নির্মমতার জন্য দায়ী স্বয়ং রাষ্ট্র। মানে ’বাংলাদেশ’ নিজেই। ৩৩ বছর আগে আমার ষষ্ঠ শ্রেনীর ৮৩ জন সহপাঠির মধ্যে ২৭ জন হিন্দু ছিল। কিন্তু এখন আমার টু-তে পড়া মেয়ের কাছে জানলাম ওর ক্লাসের ৬৭ জন বাচ্চার মধ্যে মাত্র ৫ জন হিন্দু। চরম দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে আমার বাল্যকাল ও যুবকাল কেটেছে বটে কিন্তু সাত পুরুষের ভিটে-মাটি ছেড়ে রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে চলে যাওয়ার বেদনা উপলদ্ধিতে আনার ক্ষমতা আমার অন্ততঃ নেই, যা আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের করতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতির দেশ। হ্যাঁ, বাংলাদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক তা বার বার প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্র? ভারতে মুসলমানেরা সংখ্যালঘু। রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে ভারতে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃীস্টান, নাস্তিক সবাই সমান। তাই ভারত থেকে কোনো মুসলমান পালিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছে এমন কথা কোনোদিন শুনিনি। অথচ বাংলাদেশ থেকে মাতৃভূমির মায়া ত্যাগ করে প্রতিদিন প্রায় ৬০০ জন হিন্দু পালিয়ে ভারতে চলে যাচ্ছে। অধ্যাপক আবুল বারাকাত একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ৫৮৩ জন হিন্দু দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছে এবং ভারতে তারা রাষ্ট্রহীন নাগরিক হয়ে বাস করছে।
খালেক বেহেশ্তে অথবা দোজখে এবং সমরেশ স্বর্গে অথবা নরকে যেতে পারে, পশ্চিমা কোনো দেশে জন্ম না হয়ে এদেশে জন্ম হওয়ার কারণে এধরনের কথাই আমরা শুনে আসছি ছোটবেলা থেকে। কিন্তু বাংলাদেশ বেহেশ্তে যাবে এবং ভারত কিংবা নেপাল দোজখে যাবে, এখন আমাদের একথা মানতে হবে এবং বিশ্বাসও করতে হবে। মানতে হবে এই কারণে যে, আমাদের নির্বাচিত জাতীয় সংসদ নতুন করে সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহ’ জুড়ে দিয়েছে এবং বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির জন্য রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ‘ইসলাম’-কে নিদিষ্ট করে দিয়েছে। কাজেই বাংলাদেশ এখন থেকে পাকাপোক্ত মুসলমান। তাই রামুতে বৌদ্ধরা নির্যাতিত-নিগৃহিত হবে তা খুবই স্বাভাবিক। পৃথিবীর অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে কোন্রাষ্ট্র কোন্ ধর্মাবলম্বী তার তালিকা প্রকাশের জন্য আমাদের জাতীয় সংসদকে অনুরোধ করছি। তাছাড়া বাংলাদেশ কয় ওয়াক্ত নামাজ পড়বে, কিভাবে রোজা করবে, আবার হজ্জ্বই বা করবে কিভাবে এসমস্ত বিষয়গুলি পরিস্কার করে জনগণকে জানানোর জন্য মাননীয় সংসদ নেত্রীকে অনুরোধ করছি। জন্মের সময় কোনো মানবশিশু যেমন কোনো ধর্মর্ভূক্ত হয়ে জন্মায় না, ঠিক তেমনি জন্মের সময় বাংলাদেশও নিদিষ্ট কোনো ধর্মভূক্ত ছিল না, কারণ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এই দেশটি ধর্মনিরপেক্ষ চেতনা নিয়েই স্বাধীন হয়েছিল। এদেশটার পিছনে ইতিহাস রয়েছে। টকটকে লাল ইতিহাস। ধর্মের নামে ত্রিশ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছিল স্বাধীনতা বিরোধীরা। মদ্যপ এবং বিশ্বলম্পট ইয়াহিয়া খানকে ইসলামের ধারক এবং বাহক আখ্যা দিয়ে তার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য রাজাকার-আলবদর বাহিনী গঠন করে আমাদের মা-বোনদের ‘গণিমতের মাল’ ঘোষণা দিয়ে পাক-আর্মির হাতে তুলে দেওয়ার কথা আমরা সবাই জানি। কাজেই রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের মাধ্যমেই আমরা অর্জন করেছিলাম ধর্মনিরপেক্ষতা। কোনো বিশেষ ধর্মের লোককে রাষ্ট্র অধিক সুযোগ না দিয়ে সকল ধর্মের মানুষকে নিরাপত্তা দিবে, এই ছিল বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির প্রধান ধর্ম। ‘গণতন্ত্র’ হচ্ছে বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম মূলনীতি। ধর্মনিরপেক্ষতা ছাড়া কোনো গণতন্ত্র হয় না। প্রশ্নই আসে না। সংজ্ঞা অনুযায়ীই গণতন্ত্র হচ্ছে রাষ্ট্র কর্তৃক সব ধরনের নাগরিককে সমান দৃষ্টিতে দেখার একটি ব্যবস্থার নাম। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সাথে রাষ্ট্র সমান আচরণ করবে, এইরূপ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আকাঙ্খায় সাত কোটি মানুষ সেদিন সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল, যার যা আছে তাই নিয়ে যুদ্ধে নেমেছিল। বঙ্গবন্ধু কিন্তু ঠিকই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে যথাযথ মর্যাদা দান করেছেন। ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধানের প্রস্তাবনায় স্থান দিয়ে রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি হিসাবে তিনি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। আবুল ফজল স্যার (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) প্রায়ই ক্লাসে বলতেন, “১৯৭২ সালের সংবিধান আমাদের জন্য গর্বের, কারণ তা যে চারটি মূল স্তম্ভের উপর অবস্থিত তার অন্যতম একটি হলো ধর্মনিরপেক্ষতা।” বলা যেতে পারে নব্য স্বাধীন বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থায় ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা করাটা ছিল একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনিরা ধর্মনিরপেক্ষতাকেও খুন করার চেষ্টা করলো। ১৯৭৫ পরবর্তী সামরিক সরকার বেসামরিক রূপ ধারণ করে রাজাকারদের মন্ত্রী বানালো। ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে লাগলো। কিন্তু প্রকৃত অর্থে একমাত্র ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রেই মানুষ কেবল নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে পারে, কারণ রাষ্ট্র সেখানে কোনো বিশেষ ধর্মের প্রতি কোনো পক্ষপাতিত্ব করে না। কিন্তু তারা ধর্মনিরপেক্ষতার বিকৃত অর্থ হাজির করলো এবং পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতার স্থলে ‘আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’-কে মূলনীতি হিসাবে সংবিধানে যুক্ত করলো। উহা ছিল বাঙ্গালী জাতির জন্য প্রগতির পথে এক মহাবিপর্জয়। ধর্মনিরপেক্ষতা জ্ঞান হারালো। ঠিক একই কায়দায় আর একটি অবৈধ সরকার ১৯৮৮ সালের ৭ জুন সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম বলে ঘোষণা দিল। ধর্মনিরপেক্ষতা এবার ইনসেনটিভ কেয়ারে ঢুকলো। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করে যে সরকার বাংলাদেশকে মুসলমান বানিয়েছিল সেই সরকারের মন্ত্রীপরিষদও ছিল রাজাকারে ভর্তি। মজার ব্যাপার হল সে সময় কেহই সরকারের কাছে রাষ্ট্রধর্মের জন্য কোনো দাবী করেছিল না। তাছাড়া যে সংসদ রাষ্ট্রধর্মের ওই বিল পাশ করেছিল তা মোটেই জনগণের ভোটে নির্বাচিত ছিল না। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা দরকার আমি সে সময় একটি ছাত্র সংগঠনের কর্মী ছিলাম, আমার দিব্যি মনে আছে ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ তারিখে সকাল সাড়ে আটটায় ভোটকেন্দ্র থেকে ব্যালটবাক্স নিয়ে চলে এসেছিল। সেদিন দশ-পনেরো মিনিটেই না-কি সব ভোটার ভোট দিয়ে ফেলেছিল। তখন ভোট ডাকাতির সরকার ধর্মকে যেভাবে ব্যবহার করেছিল এখন নির্বাচিত সরকারও সেই একই কাজটিই করলো। ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার কিন্তু নতুন কিছু নয়। মধ্যযুগে সকল রাজাই নিজেকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি বলে দাবী করতো। রেনেঁসার মাধ্যমে ইউরোপের দেশসমূহ ধর্মকে রাজনীতি থেকে আলাদা করে ফেলেছে বটে, কিন্তু এখন পর্যন্ত অনুন্নত বিশ্বের স্বৈরশাসকদের কেহই ধর্মকে ব্যবহার করতে কোনো দ্বিধা করছে না। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেগুলো গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না তাদের কোনোটা ধর্মভিত্তিক আবার কোনোটা ধর্মাশ্রয়ী। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় শাসকশ্রেণী যখন জনগণের আস্থা হারায় তখনই ধর্মের আশ্রয় নেয়। কর্ণেল গাদ্দাফি যেহেতু মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতো না, তাই সে বিদ্রোহীদের দমন করাকে ধর্মযুদ্ধ বলে ঘোষণা দিয়েছিল। লিবিয়ার রাজনৈতিক সংস্কৃতি আমাদের থেকে অনেক পিছিয়ে বলেই জানতাম, কিন্তু সেই লিবিয়াও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধের ঘোষণা দিল। কিন্তু বাংলাদেশ ? ১৯৮৮ সালে সরকার যখন রাষ্ট্রধর্মের বিল পাশ করতেছিল তখন শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘ভোটারবিহীন নির্বাচনে নির্বাচিত অবৈধ সংসদের সংবিধান সংশোধনের কোনো অধিকার নেই।’ রাষ্ট্রধর্ম সংক্রান্ত ঘোষণাকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরিপন্থি বলেও তিনি উল্লেখ করেছিলেন। এখন মনেহচ্ছে এসবের সবই শেখ হাসিনার অভিনয় ছিল। রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে তিনি চুপে চুপে সমর্থন করেছিলেন বলেই মনে হচ্ছে। শুধু তাই নয় ১৯৮৮ সালের ১২ জুন তারিখে অষ্টম সংশোধনীর বিরুদ্ধে সারাদেশে শেখ হাসিনার ডাকে হরতাল পালিত হয়েছিল। তারপর গত দুই দশক ধরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পূনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনেও শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের কত জনসভায় কত নেতা যে গত ২৫/৩০ বছরে সেক্যুলার রাষ্ট্র পূনঃ প্রতিষ্ঠার আশ্বাস দিয়েছেন তা কেহ গুনে শেষ করতে পারবে না। এসবের সবই জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে জনগণকে বোকা বানানোর কৌশল ছিল কি না জানি না। তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পূনঃ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খায় জনগণ ঠিকই ম্যান্ডেট দিয়েছে। ২৬২ আসন। কিন্তু হায় ! এসবের সবই কি ভুল? বঙ্গবন্ধু ভুল? স্বাধীনতার চেতনা ভুল? আজ স্বয়ং শেখ হাসিনা নিজেই রাষ্ট্রধর্মের পক্ষে। মজার ব্যাপার হলো সংবিধান সংশোধন কমিটির কো-চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তর ব্যক্তিগত ধর্ম হিন্দু। ভেবেছিলাম সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহ’ এর পাশে ছোট করে ‘রাম রাম’ লেখার প্রস্তাব হয়তো তিনি দিবেন, কিন্তু নিজে হাতে তাঁর নিজের রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে সংবিধানভূক্ত করে সুন্দরভাবে দ্বিধর্মের অধিকারী হলেন। বিলে স্বাক্ষর করতে দু’জন সমাজতন্ত্রী সংসদ সদস্য ইনু এবং মেনন সাহেবের অভিনয় দেখে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বিয়ের সময় কনের ‘কবুল’ বলার কথা মনে হয়েছিল। অবশ্য কেহ কেহ মনে করেন ধর্ম ব্যবসায়ীদের ভয়ে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রধর্মকে এবারের মতো রেখে দিলেন। কিন্তু একটু গভীরভাবে ভাবলে দেখা যাবে ধর্মব্যবসায়ীরা কোনো সময়ই শেখ হাসিনাকে স্থির থাকতে দেয় নাই। দিবেও না। কোটালিপাড়া, একুশে আগষ্ট কি কেহ ভুলেছে? রাষ্ট্রধর্ম করে কি তিনি ওদের খুশি করতে পারবেন? তা কোনোমতেই সম্ভব নয়। ইতিহাস তা বলে না, কারণ ধর্মব্যবসায়ীরা আসলে কেউটে সাপ। প্রকৃত সত্য হচ্ছে আওয়ামী লীগের ধর্মাশ্রয়ী মনোভাবের কারণেই রাষ্ট্রধর্মকে যতœ-আত্তি করে রেখে দিয়েছে। আর রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হওয়ার কারণেই বাংলাদেশ আজ সাম্প্রদায়িক একটি দেশ। আর সাম্প্রদায়িক কোনো দেশে সংখ্যালঘুদের উপর যা হওয়ার কথা তাই হচ্ছে। কাজেই রামুর ঘটনা মোটেই বিচ্ছিন্ন নয়, বরং তা সবচেয়ে স্বাভাবিক।
লেখক ঃ মিলন আহমেদ, কলেজশিক্ষক এবং নারীবাদীকলামিস্ট, ঈশ্বরদী, বাংলাদেশ।
সেলফোন ঃ ০১৭১২-৪৩০৬৮১
ই-মেইলঃ milon.ahmed8@gmail.com


রামুর সেই কালো রাতে মিছিল মিটিং’র কিছূ ছবি …

অক্টোবর ৭, ২০১২

সেই কালোরাত ! রামুর বৌদ্ধ মন্দির ও ঘরবাড়িতে আগুন , হামলা , লুটপাট । তার আগ মুহূর্তে যে মিটিং মিছিল নিয়ে তর্ক বিতর্ক চলছে , তারই কিছূ স্থিরচিত্র । এই ছবিগুলো আশীষ বিশ্বাস নামে একজন সাংবাদিক ফেসবুক বন্ধুর ওয়াল থেকে নেয়া। যদিও এ ছবিগুলো তিনি ২৯ সেপ্টেম্বর শেয়ার করেছেন। তথাপি তেমন কারো চোখে পড়ে নাই। এই ছবিগুলোতে যেমন রয়েছে বিএনপি দলীয় সাংসদ , তেমনি রয়েছে আওয়ামীলীগ দলীয় উপজেলা চেয়ারম্যান সহ বিভিন্ন দলের অনেকে । তাঁদের সেদিনের ভূমিকা কি ছিল তা প্রত্যক্ষদর্শীরা ভাল বলতে পারবেন। – সিবিএন










ivgy nvgjvi cwiKíbvKvixiv kbv³




বৌদ্ধদের ওপর হামলা দেশের ১৬ কোটি মানুষ ও সংবিধানের ওপর আঘাত .................... ড. কামাল

লেখক: ইত্তেফাক রিপোর্ট  |  রবিবার, ৭ অক্টোবর ২০১২, ২২ আশ্বিন ১৪১৯
বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, বৌদ্ধ বসতিতে হামলা সাম্প্রদায়িকতার জঘন্য বিষবাষ্প। এটা শুধু বৌদ্ধ সমাজের ওপর আঘাত নয়, দেশের ১৬ কোটি মানুষ ও সংবিধান এ ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত। এই     আঘাত রাষ্ট্রের ভিতে, এটা স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেয়ার অপচেষ্টা। বৌদ্ধ বসতিতে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নাগরিক ঐক্য’ আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
ড. কামাল বলেন, বৌদ্ধ বসতিতে হামলার ঘটনায় দেশের সকল মানুষের কাছে আমি ক্ষমা চাই। সংবিধান অনুযায়ী সকল ধর্মের মানুষের ধর্মীয় অধিকার রক্ষায় দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্র ব্যর্থ হচ্ছে। বিশেষ করে যারা সংবিধান সামনে রেখে দায়িত্ব পালনের শপথ নিয়েছেন তারা ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি বলেন, রামু, উখিয়া ও পটিয়াতে বৌদ্ধদের বসতিতে যে আগুন তা যেন আমার বেইলি রোডের বাড়িতেই লেগেছে। এজন্য সহমর্মিতা জানাতে তিনি আজ রবিবার রামু যাচ্ছেন।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, বাংলাদেশে সকল শাসক দলই ধর্মকে নিয়ে কম-বেশি রাজনীতি করেছে এবং করছে।
বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ড. শাহ্্দীন মালিক বলেন, এগুলো সমাজ ভেঙ্গে যাবার ও ব্যর্থ হওয়ার পদধ্বনি। যারা এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তারা অমানুষ। ড. মহীউদ্দিন খান আলমগীরের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, যে লোকের বিরুদ্ধে এত কোটি টাকার দুর্নীতি উচ্চ আদালতে প্রমাণ হয়েছে তাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করার অর্থ হচ্ছে আইন লংঘন এবং পছন্দ মতো আইনের প্রয়োগেরই বহিঃপ্রকাশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল বলেন, এই সরকারকে প্রশ্ন করতে চাই- আপনাদের সময় পিলখানা হত্যাযজ্ঞ, দেশের সবচে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি হলমার্কের ঘটনা এবং বৌদ্ধ বসতিতে হামলার মত বিচিত্র, অচিন্তনীয় ও অস্বাভাবিক একের পর এক ঘটনা ঘটছে কেন?
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. পিয়াস করিম বলেন, দেশে আজ জোরে হাঁচি দিলেও সরকার বলে এটা জঙ্গিবাদের কাজ ও যুদ্ধাপরাধের বিচার কাজ বানচালের ষড়যন্ত্র।
সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, কোরআন অবমাননার যে ছবির কথা বলে বৌদ্ধ বসতি ও মঠে হামলা হয়েছে সেই ছবি কি কেউ দেখেছে? ফেইসবুকে সেই ছবি দেয়া উত্তম বড়ুয়া এখন কোথায়? পুলিশ কেন তাকে খুঁজছে না।

 

আমার বন্ধু সুরঞ্জিতকে মন্ত্রী পদে রাখবে সরকার?  

 রবিবার, ৭ অক্টোবর ২০১২, ২২ আশ্বিন ১৪১৯


বৌদ্ধপল্লিতে হামলার ঘটনাকে ‘পূর্বপরিকল্পিত’ উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেছেন, যারা এই হামলা করেছে, তারা দেশের শুভাকাঙ্ক্ষী হতে পারে না। আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। 
বৌদ্ধপল্লিতে হামলার ঘটনা তদন্তে মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে বিএনপির গঠিত তদন্ত দল গত শুক্রবার ও গতকাল শনিবার কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধপল্লিগুলো পরিদর্শন করে। মওদুদ আহমদ ‘ধ্বংসযজ্ঞের’ বর্ণনা দিয়ে বলেন, ’৭১ সালেও শান্তিপ্রিয় বৌদ্ধদের ওপর এ ধরনের অত্যাচার হয়নি। আক্রান্ত বৌদ্ধপল্লিগুলোকে তিনি ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত’ এলাকার সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি জানান, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বৌদ্ধভিক্ষুরা বিএনপির তদন্ত দলকে বলেছেন, এ ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত এবং তাঁরা এখনো নিরপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
মওদুদ আহমদ বলেন, দলীয়ভাবে তাঁদের তদন্ত দল গঠন করা হলেও নিরপেক্ষভাবেই তাঁরা ওই ঘটনা তদন্ত করছেন। চলতি সপ্তাহে তাঁদের তদন্ত প্রতিবেদন জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে বলে জানান বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা।
মহাজোট সরকারকে বিশ্বস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে মওদুদ বলেন, ‘দুর্নীতি এই সরকারের ট্রেডমার্ক।’ দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সাবেক সহকারী একান্ত সচিব ওমর ফারুকের গাড়িচালক আলী আজম ‘সত্য কথা’ বলায় তাঁকে অভিনন্দন জানান মওদুদ। তিনি বলেন, ‘আজমের বক্তব্যের পরও প্রতাপশালী এ সরকার আমার বন্ধু সুরঞ্জিতকে মন্ত্রী পদে রাখবেন কি না, জনগণ তা জানতে চায়।’
পদ্মা সেতুর দুর্নীতি তদন্তে বিশ্বব্যাংকের প্যানেল গঠন দেশের জন্য কলঙ্ক বলে তিনি মন্তব্য করেন। 
জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দল ‘রামুর সহিংস ঘটনা, নির্লিপ্ত প্রশাসন: সরকারের ভূমিকা’ শীর্ষক ওই আলোচনার আয়োজন করে।


রামুর ক্ষতে যেন নুনের ছিটা দেওয়া না হয়  

রবিবার, ৭ অক্টোবর ২০১২, ২২ আশ্বিন ১৪১৯

আবুল মকসুদ  কক্সবাজারের রামু, উখিয়া ও টেকনাফের বিধ্বস্ত বৌদ্ধ মন্দির পরিদর্শন করেছেন ঢাকার নাগরিক প্রতিনিধি দল। আজ রোববার সন্ধ্যায় কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সন্মেলন করে নাগরিক প্রতিনিধি দলের প্রধান আবুল মকসুদ বলেছেন, ২৯ সেপ্টেম্বরে রাতে পূর্বপরিকল্পিতভাবে রামুর বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা চালানো হয়েছে। গত দুইদিন এখানে এসে যা দেখলাম, সংবাদপত্রে যা প্রকাশিত হয়েছে, তার চেয়েও অনেক ভয়াবহ। বিভত্স ও নারকীয় দৃশ্য। ৪২ বছরের সাংবাদিকতা জীবন আর ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে এর কোন মিল নেই। 
আবুল মকসুদ বলেন, রামু, উখিয়া, টেকনাফ ও পটিয়ায় বৌদ্ধদের উপাসনালয়, বসতবাড়ি ও বৌদ্ধমুর্তি ভাঙচুরের ঘটনায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে জাতীয় জীবনে, সরকার ও জনগণের ওপর। আশপাশের রাষ্ট্রগুলো বৌদ্ধ ধর্ম অধ্যুষিত বিধায় এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে নানা অপমান সহ্য করতে হচ্ছে। 
আবুল মকসুদ আরও বলেন, এই হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হচ্ছে হিংসার বহিঃপ্রকাশ। আমরা হিংসার মৃত্যু চাই বলে সূদুর ঢাকা থেকে এখানে ছুটে এসেছি। ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘুদের সহমর্মিতা দেখাতে। আমরা অতিদ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন চাই। চাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। সংখ্যালঘুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে রাষ্ট্র ব্যবস্থা নেবে-এটাই আশা করছি। 
সৈয়দ আবুল মকসুদ আরও বলেন, সরকারি ও বিরোধী দল বৌদ্ধ মন্দিরের হামলা ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করছে। একে অপরের দোষারোপ করছে। এতে আসল অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে। সরকার ও বিরোধী দলের কাছে আমাদের অনুরোধ এই ঘটনা নিয়ে যেন রাজনীতি না করা হয়। যদি হয়-তাহলে আমরা বরদাশদ করব না। এই ঘটনাকে মানবিক দৃষ্টিতে দেখতে হবে। কলঙ্ক হিসাবে দেখতে হবে। যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে-তাতে যেন নুনের ছিটা না দেওয়া হয়।
গণ ঐক্যের আহ্বায়ক পংকজ ভট্টাচার্য বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার ঘটনাটি সুপ্রিমকোর্টের বর্ষীয়ান বিচারকের নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান। তিনি মন্দির পোড়ানো মামলায় নিরীহ লোকজনকে গ্রেপ্তার করে হয়রানি না করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, অন্যথায় আরও হিংসার সৃষ্টি হতে পারে। সরকার কী করছে-তা নিয়ে তাঁরা মনিটরিং করবেন বলে জানান। 
পরিদর্শন দলে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি তারিক আলী, প্রকৌশলী সরদার আমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজীব মীর, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিনিধি দীপায়ন খীসা, মানবাধিকারকর্মী নাইলা বারী, আদিবাসী অধিকার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নীলুফার বানু, ইয়াসমিন পিউ প্রমুখ।


আ.লীগের কেউ সাম্প্রদায়িক হামলায় অংশ নেয়নি

রবিবার, ৭ অক্টোবর ২০১২, ২২ আশ্বিন ১৪১৯

মহীউদ্দীন খান আলমগীরস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেছেন, শুধু ফেসবুকে প্রকাশিত অবমাননাকর পোস্টটির প্রতিবাদ জানাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা রামুতে মিছিল বের করেছিলেন। ওই মিছিল বৌদ্ধদের ওপর হামলার জন্য ছিল না। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলায় অংশ নেয়নি বলেও তিনি দাবি করেন। 
আজ রোববার চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বিজিবির প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও স্কুলে বিজিবির ৮১তম ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যোগ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন বলে ডেইলি স্টার অনলাইনের খবরে জানানো হয়েছে। 

আমাদের খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দিন খান আলমগীর বলেছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের আইনের আওতায় আনা সরকারের আইনি ও নৈতিক দায়িত্ব। সাম্প্রদায়িকতা লালন-পালনকারী ও জঙ্গিদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি দিয়েই প্রমাণ করা হবে, এ দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো ঠাঁই নেই।
আজ দুপুরে খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট হলে এক মতবিনিময় সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। মন্ত্রী খাগড়াছড়ির বেসামরিক প্রশাসন ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক আনিস উল হক ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় মন্ত্রী পাহাড়ে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস বন্ধে একযোগে কাজ করতে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যদের নির্দেশ দেন। আর এ কাজে সহযোগিতা করার জন্য তিনি খাগড়াছড়িতে র্যাবের একটি ইউনিট প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা দেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে যারা আখের গোছানোর অপচেষ্টা করবে এবং সন্ত্রাস-চাঁদাবাজির আশ্রয় নেবে, তাদের মোকাবিলায় আইনের কঠোর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা হবে।’ মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী মাটিরাঙ্গা উপজেলায় তাইন্দং-তবলছড়ি এলাকায় নতুন থানা স্থাপনে এক মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করার নির্দেশ দেন। এ ছাড়া জেলায় পুলিশের যানবাহন-সংকট পর্যায়ক্রমে সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি।


বৌদ্ধমন্দিরে হামলার প্রতিবাদ সভা থেকে নেতা আটক

রবিবার, ৭ অক্টোবর ২০১২, ২২ আশ্বিন ১৪১৯

রামুর বৌদ্ধমন্দিরে হামলার প্রতিবাদে মেহেরপুরের মুজিবনগরের আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে আজ রোববার পুলিশ সাম্যবাদী দলের নেতা আলীকে আটক করেছে। পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশের দাবি, অনুমতি না নিয়ে সভা করায় ওই নেতাকে আটক করা হয়। 
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চট্টগ্রামের রামুতে বৌদ্ধমন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর ঘটনার প্রতিবাদে সাম্যবাদী দল মুজিবনগর বাজার এলাকায় সমাবেশ করছিল। এ সময় মুজিবনগর থানার উপপরিদর্শক মোহাম্মদ আকবর আলীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলীকে তুলে নিয়ে যায়, পরে পুলিশ সভা পণ্ড করে দেয়।
এ ব্যাপারে আলী প্রথম আলো ডটকমকে জানান, প্রতিবাদ সমাবেশ চলাকালে মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী সাম্যবাদী দলের নেতা আলীকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। এ সময় তাঁকে গালাগাল করা হয়। পুলিশ তাঁকে ঘুষি মারতে উদ্যত হয়। বলে, ‘যে ভারি দল, তার আবার সমাবেশ। তোর সাম্যবাদী দল কে চেনে।’ পুলিশ আরও বলে, ‘ভবিষ্যতে পুলিশকে না জানিয়ে সমাবেশ করলে জেলের ভাত খেতে হবে।’ একপর্যায়ে থানায় চার ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখে পুলিশ তাঁকে ছেড়ে দেয়।
তবে পুলিশ জানায়, অনুমতি না নিয়ে সভা করায় আলীকে সভাস্থল থেকে তুলে থানায় নেওয়া হয়। কয়েক ঘণ্টা পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এর ফলে প্রতিবাদ সভা পণ্ড হয়ে যায়। 
এ ব্যাপারে মুজিবনগর থানার উপপরিদর্শক খান মোহম্মদ আলী আকবর আলী জানান, ‘বাজারে সমাবেশ করবে, পুলিশ জানবে না, এটা হতে দেওয়া হবে না। তাই কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সাম্যবাদী দলের নেতাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং সভা পণ্ড করা হয়।’
মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুভাষ বিশ্বাস বলেন, ‘পুলিশের কোনো অনুমতি ছাড়াই দলটি সমাবেশ করছিল। তাই পুলিশ দলের নেতাকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে ছেড়ে দেয়া হয় তাঁকে। কোন হেনস্তা করা হয়নি। তবে, দলটির উচিত ছিল পুলিশের অনুমতি নিয়ে সভা করা


রামুর ঘটনায় সরকার জড়িত
রোববার | ৭ অক্টোবর ২০১২ | ২২ আশ্বিন ১৪১৯ |

হবিগঞ্জের জনসভায় খালেদা জিয়া
হাসান শিপলু/শোয়েব চৌধুরী, হবিগঞ্জ থেকে
সরকারকে 'বিশ্বচোর' এবং এইচএম এরশাদকে 'বিশ্ববেহায়া' বলে অভিহিত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালদা জিয়া। তিনি বলেন, 'দেশ আজ বিশ্বচোর ও বিশ্ববেহায়ার কবলে পড়েছে। ঈদের পর এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।' একই সঙ্গে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ দেখিয়ে তিনি বলেন, 'রেল কেলেঙ্কারির ঘটনায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের দুর্নীতির প্রমাণ দিয়েছে তার গাড়িচালক। এভাবে মন্ত্রিসভার সবাই বস্তাভর্তি টাকা চুরি করছে।'
কক্সবাজারের রামু-উখিয়ায় বৌদ্ধবিহার ও বসতিতে হামলার জন্য সরকার ও সরকারদলীয় 
লোকজনকে অভিযুক্ত করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় সরকার জড়িত। দেশে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্টি করতে পরিকল্পিতভাবে সরকার এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ওই হামলার পর ঘটনাস্থল দেখতে গেলে সরকারি দলের নেতাদের তাড়া করেছেন বৌদ্ধভিক্ষুুরা। অথচ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
গতকাল শনিবার হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে (নিউফিল্ড) ১৮ দলীয় জোট আয়োজিত এক জনসভায় তিনি এ কথা বলেন। নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে খালেদা জিয়া জেলা পর্যায়ে এ সমাবেশ করছেন। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ঢাকার বাইরে দ্বিতীয় জনসভা এটি। এর আগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর দিনাজপুরে প্রথম জনসভা হয়। জনসভা শেষে রাতেই ঢাকা ফেরেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, 'আওয়ামী লীগের অধীনে কখনোই কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। আগামীতেও তাদের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সরকারকে বলব, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে নিজেদের জনপ্রিয়তা প্রমাণ করুন।'
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জনসভাস্থলে আসতে শুরু করেন নেতাকর্মীরা। দুপুরের আগেই নিউফিল্ড মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। বিকেল সাড়ে ৪টায় খালেদা জিয়া যখন জনসভা মঞ্চে ওঠেন, তখন মাঠ পেরিয়ে আশপাশের সড়ক লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। লক্ষাধিক লোকের করতালিতে মুখরিত মাঠে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে হাত নেড়ে অভিনন্দনের জবাব দেন তিনি।
এর আগে সকাল সোয়া ১১টায় গুলশানের বাসভবন থেকে হবিগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হন খালেদা জিয়া। পথিমধ্যে যাত্রাবাড়ীতে দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে অভ্যর্থনা জানান। দলীয় নেত্রীর আগমন উপলক্ষে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কয়েকশ' তোরণ নির্মাণ করা হয়। মহাসড়কের দু'ধারে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতিকৃতি দেখা গেছে। শোডাউন করেছেন আগামী জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আর হবিগঞ্জ শহর যেন সেজেছে নবসাজে। ব্যানার-ফেস্টুন-বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে পুরো শহর। পথিমধ্যে আগামী নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী তৈমুর আলম খন্দকার, কাজী মনির, খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামলসহ অনেকেই শোডাউন করেন। সংস্কারপন্থি নেতা হিসেবে পরিচিতি সাখাওয়াত হোসেন বকুলও তার নির্বাচনী এলাকা নরসিংদীতে ব্যাপক লোকসমাগম করেন।
বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিট থেকে প্রায় ৪৫ মিনিট বক্তব্য দেন বিরোধীদলীয় নেতা। বক্তব্যে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, আইন-শৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক অবস্থা, দুর্নীতি, পদ্মা সেতু প্রকল্প, বৌদ্ধবিহারে হামলাসহ সরকারের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি আগামীতে ক্ষমতায় গেলে দেশের জন্য কী করবেন, সে ফিরিস্তিও তুলে ধরেন।
খালেদা জিয়া অভিযোগ করে বলেন, সরকার সংসদকে অকার্যকর করে ফেলেছে। একদলীয় সংসদে বিরোধী দলের জনগণের কোনো সমস্যা নিয়ে কথা বলার সুযোগ নেই।
বর্তমান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তিনি বলেন, হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে সরকার কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না। দুদক এখন বলছে, এরা কুমির, হাঙ্গর ও তিমি মাছ। তাই তাদের ধরা যাচ্ছে না; কিন্তু বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে। দুদককে বলতে চাই, এভাবে দুর্নীতিবাজকে ধরা না হলে ভবিষ্যতে তাদেরকে (দুদক) ধরা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
খালেদা জিয়া বলেন, সরকারের মন্ত্রী ও এমপিরা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হয়ে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা লুট করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। ব্যবসার সঙ্গে মন্ত্রীদের পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্যরা জড়িত হয়ে গেছে। দুর্নীতির টাকার ভাগ সরকারের মাথা পর্যন্ত যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে মহাজোটের শরিক সদ্য মন্ত্রী হওয়া একজনের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, 'নাম না-ই বললাম। এক বাম নেতার ছেলে ভিওআইপি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হয়েছেন। বিটিআরসি মন্ত্রীর ছেলে বলে কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারছে না। ওই বাম নেতা মুখে অনেক বড় বড় কথা আওড়ান। অথচ এই অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে দেশে প্রয়োজনীয় উন্নতমানের যন্ত্রপাতি আছে। কিন্তু সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে তা ব্যবহার করছে না।'
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, 'আজ বিরোধী দলকে জঙ্গিবাদের সঙ্গে দোষারোপ করা হচ্ছে। এটা ঠিক নয়। বিএনপি কখনোই জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী নয়; বরং আওয়ামী লীগ আমলেই দেশে সর্বত্র বোমাবাজি ও জঙ্গিবাদের ঘটনা ঘটেছিল। তাদের আমলে ঢাকার পল্টনে সিপিবির সমাবেশ, রমনা বটমূল, যশোর উদীচী, নারায়ণগঞ্জ ও গোপালগঞ্জে বোমাবাজির ঘটনা ঘটলেও কোনো বোমাবাজ কিংবা জঙ্গি গ্রেফতার হয়নি; বরং জোট সরকার বাংলাভাই, জাতীয় দুলাভাই শায়খ আবদুর রহমানসহ বড় জঙ্গিদের বিচারের আওতায় এনেছিল।'
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হলে ছাত্রলীগ অস্ত্র মজুদ করছে দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, ওই সব অস্ত্র কোথা থেকে আসছে? পুলিশ হল তল্লাশি করছে না কেন, জাতি তা জানতে চায়। তার দাবি, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অস্ত্রের মহড়া দেখে বোঝা যায়, তারাই জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত।
সুরঞ্জিতের কেলেঙ্কারি বিষয়ে খালেদা জিয়া বলেন, 'সাবেক রেলমন্ত্রীর এপিএসের গাড়িচালক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছে, রেলের ঘুষের ১০ কোটি টাকা মন্ত্রীর বাসায় যাচ্ছিল। এর আগে কয়েকবার মন্ত্রীর বাসায় পেঁৗছে দিয়েছে সে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রেল মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি করেছেন। অন্যান্য মন্ত্রীও আছেন এই কাজে। আর প্রধানমন্ত্রীর পরিবার তো সব জায়গায় আছেনই।'
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, 'ইলিয়াস আলীকে সরকার ও তার এজেন্সির লোকরা গুম করেছে। আমরা জানতে চাই, ইলিয়াস কোথায়? অবিলম্বে তাকে ফেরত দিতে হবে।'
জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়সলের সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যদের মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বরকতউল্লা বুলু, মো. শাহজাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, সাংসদ শেখ সুজাত মিয়া, শাম্মী আখতার, ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
১৮ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে জামায়াত নেতা অধ্যাপক মজিবুর রহমান, খেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের, এলডিপি সভাপতি অলি আহমদ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান প্রমুখ বক্তব্য দেন। সমাবেশে পরিচালনা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিকে গউছ।



সমকাল ডেস্ক
কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলায় বৌদ্ধবিহার এবং মন্দিরে অগি্নসংযোগ-ভাংচুরে জড়িতদের কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না বলে বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে আশ্বাস দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সংঘনায়ক শুদ্ধানন্দ মহাথেরোর নেতৃত্বে ইউনাইটেড সিটিজেন প্রটেকশন কমিটির ব্যানারে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করলে তিনি তাদের এ আশ্বাস দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংখ্যালঘু জনগণের ওপর হামলার সময় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ দেখে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জড়িতদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনার তদন্ত করে আমাদের অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। খবর বাসস, ইউএনবি।
প্রধানমন্ত্রী বৌদ্ধধর্মীয় নেতাদের প্রতি ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'অনুগ্রহ করে ধৈর্য ধরুন, আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে, ওই জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের কেউই রেহাই পাবে না।' প্রধানমন্ত্রী অন্য 
ধর্মাবলম্বীদের প্রতিও দেশে যাতে ভবিষ্যতে আর এ ধরনের কোনো অঘটনের পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
স্বাধীনতাবিরোধী চক্র পরিকল্পিত এ ঘটনার জন্য দায়ী_ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে দোষীদের গ্রেফতার করা হবে। তিনি বলেন, 'আমি মনে করি এখানেই শেষ নয়। ষড়যন্ত্রকারীদের আরও অনেক অসৎ উদ্দেশ্য আছে এবং তারা আগামী দিনগুলোয় আরও অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই এ ধরনের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে আমি দেশের সর্বস্তরের মানুষকে সদা সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। আমি বুঝতে পারি না, তারা কীভাবে এতটা অমানবিক হতে পারে। তারা শুধু মানুষজনের ওপর হামলা করেই ক্ষান্ত হয়নি, আমাদের দীর্ঘদিনের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বৌদ্ধধর্মের ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্ন বিনষ্ট করেছে।'
তিনি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দকে চলতি মাসের শেষে 'প্রবারণা পূর্ণিমার' আগে প্রার্থনার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত প্যাগোডা প্রস্তুত ও আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়িঘর পুনর্নির্মাণসহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন।
বৌদ্ধ প্রতিনিধি দল ২৯ সেপ্টেম্বর উখিয়া ও রামুতে এবং পরদিন পটিয়ায় হামলার ঘটনার নিজস্ব তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করে।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেওয়া ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনটি কারণে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এগুলো হলো_ রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আরও হাঙ্গামা সৃষ্টি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল ও আগামী নির্বাচনের আগে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করা।
তারা তদন্তের সময় এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান।
সহিংসতা ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে দ্রুত সাড়া দেওয়ায় এবং সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ূয়া, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, এলজিআরডি এবং সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, ইউবিসিপিসির সদস্য সচিব অশোক বড়ূয়া, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতা পিকে বড়ূয়া, ড. প্রণব বড়ূয়া, ড. উত্তম বড়ূয়া, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ূয়া ও বৌদ্ধধর্মীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি বিশেষ মহল সব ধর্মের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান মেনে নিতে পারছে না। ২০০১ সালে তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা চালায়, এখন ফের তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা চালাচ্ছে।
রামু ও কক্সবাজার বৌদ্ধ মন্দির পরিদর্শনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কীভাবে তারা এ সুন্দর মূর্তি এবং ঐতিহাসিক ভাস্কর্য ধ্বংস করতে পারল?
এ ঘটনায় রোহিঙ্গাদের সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা আমাদের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যা সৃষ্টি করছে তবু আমরা তাদের প্রতি কখনোই অমানবিক হইনি।
প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা প্রদর্শনের জন্য এবং এ ধরনের যে কোনো ঘটনা প্রতিরোধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। তিনি আসছে ধর্মীয় উৎসবগুলোয় সব সম্প্রদায়কে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
শুদ্ধানন্দ মহাথেরো বলেন, বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে ওই হামলা চালানো হয়েছিল। দুষ্কৃতকারীরা ২৫টি বৌদ্ধ মন্দিরে আগুন দেয়। এর মধ্যে ১২টি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। এর কয়েকটি প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো। দুষ্কৃতকারীরা অগি্নসংযোগের সময় গান পাউডার ও বিস্ফোরকসহ দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করে এবং তাদের দেওয়া আগুনে মহামতি বুদ্ধের অনেক স্মৃতিচিহ্ন ধ্বংস হয়ে যায়।

ইন্ধনদাতারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে
  আবু তাহের, কক্সবাজার অফিস 
কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ উপাসনালয়ে হামলার ঘটনার নেপথ্য নায়কদের খুঁজে বের করতে গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে হামলাকারী অনেকেই শনাক্ত হলেও ইন্ধনদাতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। আটক সন্দেহভাজনদের জবানবন্দি, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য ও বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর রামু সফরের আগেই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীদের গ্রেফতারের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। গতকাল শনিবার আরও ৩ জনকে আটক করা হয়। তারা হলেন_ রামুর ফতেখাঁরকুল এলাকার মোকতার আহমদের দুই ছেলে জসিম উদ্দিন ও জালাল এবং রামুর শ্রীকুলের নূর মোহাম্মদের ছেলে ওমর ফারুক। জানা গেছে, পরিকল্পনাকারীদের তথ্য পুলিশের হাতে রয়েছে।
এদিকে গতকাল রামুর ফকিরাবাজারে 'ফারুক কম্পিউটার টেলিকম'-এর মালিক ফারুককে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। ওই দোকানের ফেসবুক থেকেই বিতর্কিত সেই ছবি বের করা হয়। 
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ফারুক জানান, উত্তম কুমার বড়ূয়া তার ফেসবুক ফ্রেন্ড। বড়ূয়ার ফেসবুকে তিনিই প্রথম সে বিতর্কিত ছবিটি দেখতে পান। এরপর তিনি বিতর্কিত ওই ছবিটি প্রথমে দোকানের আশপাশের লোকজনকে ডেকে দেখান। 
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার সেলিম মো. জাহাঙ্গীর জানিয়েছেন, রামু, উখিয়া ও টেকনাফে সহিংস ঘটনায় ১৪টি মামলা হয়েছে। এতে জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ১৯৪ জনকে আটক করা হয়েছে। হামলায় জড়িত অর্ধশত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা গেছে। তাদের প্রায় সবাই এখন গা-ঢাকা দিয়েছে। তিনি জানান, প্রাথমিক তদন্তে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা হয়েছে। মূল পরিকল্পনাকারীদের ব্যাপারেও অনেক তথ্য পুলিশের হাতে এসেছে। সূত্র জানায়, উপাসনালয়ে হামলার পেছনে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরওএস), কক্সবাজারে তিন বিদেশি এনজিওর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি-না তা গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই দুই সংগঠনের বেশ কয়েক কর্তাব্যক্তি গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন। 
কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আখতার সমকালকে বলেন, নেপথ্য নায়কদের খুঁজে বের করার এখন প্রধান টার্গেট। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। 
রামুর ঘটনায় আজ বেশ কয়েকজন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার কথা রয়েছে। গ্রেফতারকৃতের মধ্যে ১০৫ জনকে রিমান্ডে আনা হয়েছে।
এদিকে রামুর সহিংস ঘটনায় ব্যবহৃত গাড়িগুলো আটক করতে পুলিশের বিশেষ টিম কাজ করছে। ইতিমধ্যে ২টি ট্রাক এবং ১টি মিনিবাস আটক করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে আটক হয়েছে ২ ড্রাইভার এবং ২ হেলপারও। ট্রাক হেলপার রমজান আলীকে ডিবি পুলিশের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। 
ট্রাকড্রাইভার রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে কি-না পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও কিছু জানানো হয়নি। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, জেকে এন্টাপ্রাইজের মালিকানাধীন ২টি ট্রাক রামুর ঘটনায় হামলাকারীদের পরিবহনে নিয়োজিত ছিল।
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ফেসবুকে কোরআন শরিফ অবমাননার ছবি পাওয়ার খবর প্রচার করার পর ২৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৯টায় প্রথম একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা নুরুল ইসলাম সেলিম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা আনসারুল হক ভুট্টো, যুবলীগ নেতা বাবু, জামায়াত নেতা মাওলানা হাসান, হাফেজ আহমদ। পরে তারা রামু চৌমুহনীতে সমাবেশ করেন। মিছিল-সমাবেশের বাইরে থেকে তৎপর দেখা গেছে জামায়াত নেতা মনির এবং বাহাদুরকে। তাদের কাউকে পুলিশ এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি। হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন শ্রীকুলের ইউপি মেম্বার মিজানুর রহমান, তার সহযোগী রকিব উদ্দিন, রামুর বিএনপি নেতা জাহিদ, জামায়াত নেতা ছালামত উল্লাহ কাদের, শিবির নেতা শহীদুল ইসলাম বাহাদুর, ছাত্রদলের সাবেক নেতা আফছার কামাল, কামাল উদ্দিন, আতিক, রোহিঙ্গা গ্রুপের নেতা হাফেজ মোহাম্মদ, এনামুল হক, জাবেদসহ আরও কয়েক জন। 
ওসি নজিবুল চট্টগ্রামে পুলিশ হেফাজতে : ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, রামুতে হামলার সময় ওসি নজিবুল ইসলামের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ওসি নজিবুল বর্তমানে চট্টগ্রামে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। 
উখিয়ায় ফের ১৪৪ ধারা জারি : কক্সবাজারের উখিয়ায় শুক্রবার ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে নেওয়া হলেও গতকাল শনিবার থেকে ফের জারি করা হয়েছে। ওসি আপ্পেলা রাজু নাহা জানিয়েছেন, বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত উখিয়ায় ১৪৪ ধারা বলবৎ করা হয়েছে। 
টেকনাফে ২৩ আসামিকে আদালতে প্রেরণ : টেকনাফে বৌদ্ধপল্লীতে ভাংচুর, লুটপাট ও অগি্নসংযোগের ঘটনায় আটক ২৩ আসামির দু'দিনের রিমান্ড গতকাল শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী। তাদের ফের আদালতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান, কয়েক আসামি ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। 
হিন্দুদের বিক্ষোভ সমাবেশ : রামু, উখিয়া ও টেকনাফে অগি্নসংযোগ ও ভাংচুরে ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুমন্দির সংস্কারে প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করা এবং প্রধানমন্ত্রীর সোমবারের সফরে হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কোনো বৈঠকের কর্মসূচি না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ। কক্সবাজার শহরে শনিবার পূজা উদযাপন পরিষদের বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, সংখ্যালঘু এলাকায় এখনও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট রণজিত দাশের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মার পরিচালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক সোমেশ্বর চক্রবর্তী। বক্তব্য রাখেন পরিষদের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট দিলীপ কুমার আচার্য, সহসভাপতি ভারপ্রাপ্ত পৌর মেয়র রাজবিহারী দাশ, জেলা জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি দুলাল চক্রবর্তী, পূজা কমিটির উপদেষ্টা শিক্ষাবিদ রাজবিহারী চৌধুরী, সহসভাপতি রতন দাশ, উদয়শঙ্কর পাল মিঠু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপক শর্মা দীপু, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট প্রতিভা দাশ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংরক্ষণ সম্পাদক রাধাগোবিন্দ ব্রহ্মচারী, সদর উপজেলা যুগ্ম আহ্বায়ক বলরাম দাশ অনুপম, টেকনাফ উপজেলা আহ্বায়ক শিবুপদ ভট্টাচার্য, জেলা কমিটির সদস্য রতন কান্তি দে, উখিয়া উপজেলা আহ্বায়ক স্বপন শর্মা রনি ও রামু উপজেলা যুগ্ম আহ্বায়ক অপূর্ব পাল। বিক্ষোভ সমাবেশে ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে অগি্নকাণ্ড ও ভাংচুরে ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির এবং বসতবাড়ির ছবিসহ তালিকা প্রকাশ করা হয়।

Dhaka Report
Sunday, Oct 07th
রামুর ন্যাড়া এবং আত্মঘাতী ন্যাড়ারপো'দের কান্ড
প্রাচীন বঙ্গবিশ্বে ব্রাহ্মণরা মুন্ডিত মস্তক বৌদ্ধ ধর্মগুরু শ্রমনদের গালী দিত ন্যাড়া বলে, পাষান্ড বলে। হিন্দু বাঙ্গালীরা আজও মুসলমান বাঙ্গালীদের গালীদেয় ন্যাড়ারপো বলে। মুসলিম পূর্ব সেই সাম্প্রদায়ীক যুগে বাংলার অধিকাংশ মানুষ ছিল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, আজ যেমন মুসলমান ।

সম্প্রতি রামুতে ন্যাড়া এবং ন্যাড়াপো'দের যে আত্মঘাতী সাম্প্রদায়িক কান্ড ঘটেছে সে বিষয় ভাবার আগে  আসুন বাংলার ধর্মের ইতিহাসটা একটু যেনে নিই।
বিশাল বাংলাকে বলা যায় হিমালয়ের বেসিং। প্রচীন বঙ্গ ভূমিতে অনেক লোকধর্মের বিকাশ ও বিস্তার হয়েছিল। যেমন- শৈব, শাক্ত, মৎস, আজিবক, বৌদ্ধ সহ নানা রকম কৌম ধর্ম।
আজ স্পষ্টই চারটি বৃহৎ ধর্মীয় ব্যানারে বিভক্ত বাঙ্গালীরা। প্রধানত ইসলাম এবং হিন্দু। আর বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মানুশারীর সংখ্যা তুলনামূলক কম। হিন্দু ধর্ম আজ যে রূপ পরিগ্রহ করেছে মুসলিম পূর্বযুগে এমন ছিলনা। মূলতো মুসলমানদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায়(ব্রাহ্মণ কতৃক নির্ধারীত)পতীত সম্প্রদায় নিয়ে হিন্দুধর্ম রূপলাভ করে।
হাজার নদী পরীবেস্টিত প্রচীন বাংলার অধিবাসীরা বিচ্ছিন্ন ভাবে স্বাধীন গনতান্ত্রিক কৌম সমাজে বাস করতো। যে কারনে বহিরাগতদের ধর্ম এখানে খুব একটা বিস্তার লাভ করতে পাবেনি। যারা ব্যার্থ হয়েছে তাদের অনেকেই ব্যপক কুৎসা রটিয়েছে আমাদের দেশ এবং জাতি সম্পর্কে।
বিশেষ করে হিন্দু ধর্মীয় প্রাচীন সাহিত্যগুলো খুঁজলে পাওয়া যাবে এসব কুৎসা। এদেশের ভাষাকে উল্লেখ করা হয়েছে পক্ষীর ভাষা বলে। মানুষদের বলা হয়েছে রাক্ষস। আবার শুদ্ধকরার জন্য কোন লম্পট মুনির জারজ সন্তান হিসাবেও পরিচিত করার চেষ্টা করা হয়েছে বাঙ্গালীদের। জৈন তির্থাঙ্কর মহাবীর এদেশে ধর্ম প্রচার করতে এলে কৌমের লোকজন তার বিরুদ্ধে কুত্তা লেলিয়ে দিতেন বলে উল্লেখ আছে।
এবার একটু উপমহা দেশের প্রেক্ষাপট দেখা দরকার।
খ্রি:পূর্ব একহাজার বাছর আগে(আজ থেকে ৩০০০বছর পূর্বে) প্রচীন বৈদিক ধর্মের ব্যপক অবক্ষয় শুরু হলে আন্ত:উপমহাদেশীয় সামাজিক ক্ষেত্রে নতুন ধর্ম ও দর্শনের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। এর কাছাকাছি কয়েক শতাব্দির মধ্যেই জন্মলাভ করে বৌদ্ধ ধর্ম এবং বিস্তৃতি লাভ করে জৈন ধর্ম। বুদ্ধের অহিংসা ও সাম্যেরবানী বিস্তার লাভ করতে থাকে দিকে দিকে। এবং খ্রিষ্টপূর্ব পাঁচ শতকের দিকে ব্রাহ্মণরা প্রচীন বৈদিক ধর্মের একটি অমানবিক সংষ্কার করেন। সমাজকে চার স্তরে ভাগ করে ফেলেন তারা। সবার উপরে ব্রাহ্মণ এরা ভগবান তুল্য, এরা ভগবানের মুখ থেকে জন্ম লাভ করেছে এবং ব্রাহ্মণের সন্তানরাই হবে ব্রাহ্মণ। অতপর ক্ষত্রীয়, এরা যোদ্ধা এরা ভগবানের বাহু ও বুক থেকে জন্মেছে। বাকি রইল বৈষ্য ও সুদ্র, এরা ভগবানের নিম্নাঙ্গ থেকে সৃষ্টি। দীর্ঘ কাল ব্রাহ্মণরা তাদের অপছন্দনীয় জন মন্ডলিকে ভগবানের নিন্মাঙ্গে পাঠিয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অপমান জনক পরিচয়ে অভ্যস্ত ও অনুদাস করে তুলতেন। এই হীনতা বয়ে চলেছে হাজার হাজার বছর ধরে।
আজ থেকে প্রায় বারশ বছর আগে মুসলমানরা উপমহাদেশে আক্রমন কারী হিসেবে দেখা দেয় এবং লুটতরাজ করে এরা ফিরে যেত। একসময় স্থায়ী ভাবে রাজ্য ক্ষমতা দখল করে তারা এবং ধর্ম প্রচারের চেস্টা করে।

আবার আসি বাংলার প্রেক্ষাপটে।

খ্রিষ্টিয় পাঁচ-ছয় শতকের কথা। গুপ্ত শাসন থেকে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। শৈব ধর্মাবলম্বী শশাঙ্ক নামক এক বাঙালী বাংলার স্বাধীন নৃপতী। বুদ্ধের অহিংস বানী তখন কৌমের প্রতিটি ঘরে ঘরে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। নৃপতী শশাঙ্ক নির্মম ভাবে দমন করার চেষ্টা করেছেন কিন্তু পারেন নি। ব্রাহ্মণ্যবাদীরা জনমন্ডলীতে প্রভাব বিস্তার করতে ব্যার্থ ।
শশাঙ্কের মৃত্যুর পর প্রায় একশ বছর ছিল বাংলার অরাজকতার যুগ। অতপর জনগন সংখ্যা গরিষ্ঠের ধর্ম- বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, রাজশাহীর গোপালকে রাজা নির্বাচন করেন। শুরু হয় পাল যুগ। চারশত বছর এই রাজ বংশ শাসন করেছে বাংলাদেশ।
অত:পর কর্নাটক থেকে আগত ব্রাহ্মণ্যবাদী সেনরা চক্রান্ত করে দখল করে বাংলার ক্ষমতা। কাশ্মীর সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আমদানী করে কিছু সংখ্যক ব্রাহ্মণ। সমাজকে ভাগ করার চেষ্টা করে চার শ্রেণীতে। স্থানীয়রা চলেযায় ভগবানের নিন্মাঙ্গে। ভাষা সংস্কৃতিসহ সর্ব ক্ষেত্রে শুরু হয় বর্ণবাদীদের অমানবিক শোষন। (হাজার বছর পর পাক আমলে- খান'রা যার পুনারাবৃত্তি করেছিল।)
সেন'রা নিরহ জনগোষ্ঠির এক অংশকে বেধে ফেলে বর্ণাশ্রম প্রথার মধ্যে। যাদের অনেকেই আজ হিন্দু ধর্মের ব্যানারের তলে। শুরু হয় বাংলার নতুন সাম্প্রদায়ীক যুগ। সংখ্যা গরিষ্ঠ স্থানীয় বৌদ্ধ বাঙালীরা মানতে পারেনি সেনদের শোষন।
অতপর খ্রিষ্টিয় বার শতকের দিকে বখতিয়ার খিলজি বাংলা আক্রমন করলে পালিয়ে বাঁচে গনবিচ্ছিন্ন সেন রাজারা।
শুরুহয় মুসলিম শাসনের যুগ। মুসলমান সুফি দরবেশদের মরমী মতবাদের সাথে বুদ্ধের অহিংস মতাদর্শের মিল পেয়ে জনগন দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করতে শুরু করে। ঐ সময়ে বৌদ্ধ ও ইসলাম ধর্মের সম্পর্ক বাংলা দেশে এতটাই ঘনিষ্ঠ রুপ লাভ করেছিল যে খিলজির গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করতো বৌদ্ধ ধর্ম গুরু শ্রমনগন।ধিরে ধিরে সংখ্যা গরিষ্ঠ বৌদ্ধরা রুপান্তরীত হতে থাকে বাঙ্গালী মুসলমানে।বাঙালী মুসলমানদের ঐ সময় থেকেই ব্রাহ্মণরা গালী দিত ন্যাড়ার পো বলে। অন্যদিকে ব্রাহ্মণ এলায়েন্স পরিচিত হতে শুরু করে হিন্দু হিসেবে। ( যদিও উপমহাদেশের বাইরের লোকেরা হিন্দুকুশ পর্বতের পূর্বদিকের সব লোককেই হিন্দু বলে চিহ্নিত করত।) ঐ সময় থেকে অনেক অন্তজ হিন্দুরাও মুসলমান হতে শুরু করে। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরাজিত ব্রাহ্মণদের জোর করেই ইসলামে দীক্ষাদেন অনেক মুসলিম শাসক।এসব অনেক দিন ধরেই চলছিল।যে ব্রাহ্মণরা মুসলমানহতো তাদের আত্মীয়রা হিন্দু সমাজে পরিচিত হতো পীরালী ব্রাহ্মণ হিসেবে, যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরা ছিল পীরালী ব্রাহ্মণ।হতে পারে ব্রাহ্মণদের উন্নাশীকতাই ছিল এর জন্য দায়ী।( এও এক নিয়তি যে, ভারতের অন্য অঞ্চলের ব্রাহ্মণরা বাঙ্গালী ব্রাহ্মণদের সুদ্রের মতো মনেকরে।) আবার অনেক ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণ কন্যাকে জোর করে বিয়ে করতো মুসলমান যুবকেরা। কখনো হিন্দু মেয়েরা সহ-মরনের হাত থেকে বাঁচতে পীরের দরগায় এসে মুসলমান হতো। খিলজি এবং পরবর্তি দাস শাসন শেষে বাংলায় স্বাধীন সুলতানী যুগের শুরু হয়।কালের এক পর্যায়ে মোঘলরা ক্ষমতা দখল করে। ইংরেজদের পূর্বে মুসলিম শাসনামলের অধিকাংশ সময়েই বাংলা শাসিত হয়েছে বহিরাগত মুসলমান শাসকদ্বারা। যারা খুব কমই এদেশে স্থায়ী ভাবে থেকেছে। ক্ষমতার পালাবদলের সাথে সাথে এরা পারি জমাতো দিল্লীর দিকে। মজার বিষয়, যে দিল্লী মুসলিম শাসনের কেন্দ্র ছিল প্রায় সাতশ বছর, সেখানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়। সংখা গরিষ্ঠ হলো  জল কাদার এই বাংলাদেশে। এটি হয়ে ছিল বাঙ্গালী বৌদ্ধদের ধর্মান্তরনের ফলে।
প্রধানত বাঙ্গালীবৌদ্ধ অত:পর হিন্দু-ব্রাহ্মণ,বহিরাগত মুসলমান ও অন্যান্য ধর্ম গোষ্ঠির সম্মিলনে জন্ম নেয় বাঙ্গালীমুসলমান। বাঙ্গালী মুসলমানরাই হলো বাঙ্গালীত্বের প্রধান স্তম্ভ।
কিন্তু দুঃখ বাঙ্গালীকে ছারলো না। প্রাচীন বাংলায় জন্ম নেয়া ব্রাহ্মণ্যবাদী ও বৌদ্ধদের সাম্প্রদায়ীকতা বিবর্তীত হলো বাঙ্গালী হিন্দু মুসলমান সাম্প্রদায়ীকতায়। কালে কালে হিন্দু সাম্প্রদায়ীকতা এতটাই কঠিন রূপ নিয়েছিল যে, দির্ঘ ব্রিটিশ শাসনের শেষে যখন স্বাধীন হওয়ার সুযোগ এল, ১৯৪৭ সালে, বাঙ্গালী মুসলমানরা চাইল অখন্ড বাংলা। কিন্তু হিন্দু সাম্প্রদায়ীকতা বাংলার পশ্চিম অংশ ভেঙে নিয়ে গেলো ভারতে। আর বাঙ্গালীমুসলমানরা যে পাকিস্তান বানিয়েছিল- তারাও সেখানে নিগৃহীত হলো পঞ্জাবী খানদের হাতে। অতপর বয়েগেলো রক্ত নদী। স্বাধীন হলো বাংলাদেশ।
কিন্তু বাঙ্গালীমুসলমান, ন্যড়ারপো'রা কী ভুলেগেলো তাদের ইতিহাস ! বিষ্মৃত হলো কী তাদের পূর্ব পুরুষদের ঐতিহ্য ! তা না হলে কেন ঘটছে রামুর বৌদ্ধ বসতিতে হামলার মতো আত্মঘাতী ঘটনা। কেন আমাদের ( পূর্ব পার্ট ) সংখ্যালঘু বাঙ্গালীবৌদ্ধরা অসহায় এদেশে। যে দেশ শাসীত হচ্ছে তাদেরই স্ব-জাত দ্বারা ! কেন অবহেলিত আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে উজ্জলতম পূর্ব পুরুষ অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান ? আজও যার প্রর্বতীত লামা ধর্মের  অনুসারি প্রায় দুকোটি। আজও যিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ পাঁচ জন ব্যাক্তির এক জন অথচ আমাদের সন্তানরা জানেনা তার নাম। কেন এই অন্ধকার! জানিনা।

তবে আশা অনন্ত। হয়তো কেটে যাবে এই অন্ধকার । জাতি জাগবে নতুন আলোয়। তবে ক্ষত হয়ে রইলো রামুর এই আত্মঘাতী ঘটনা । যদিও শোনা যাচ্ছে এর সাথে বিদেশী চক্রান্তকারীরা জড়িত। তবু রামুর নিরহ মানুষগুলোযে আমাদের স্বজন!
রাজু আহমেদ মামুন
সম্পাদক
ঢাকা রিপোর্ট ২৪ ডট কম

No comments:

Post a Comment