Your Right To Know
Wednesday, October 17, 2012
The government's “deliberate inaction” was responsible for the recent attacks on Buddhist temples and houses in Ramu and Ukhiya in Cox's Bazar and Patiya in Chittagong, BNP told foreign diplomats yesterday.
An eight-member BNP delegation led by Moudud Ahmed briefed the envoys about the findings of the main opposition party's probe into the incidents that took place on September 29 and 30.
Ambassadors, high commissioners or their representatives of the US, UK, Japan, China, France, Canada, Australia, Norway, Sweden, Switzerland, Spain, Indonesia and Singapore were present at the programme at a city restaurant.
None from the India, Pakistan, Thailand and Myanmar missions were in attendance.
“It was our responsibility to inform the foreign diplomats about the shameful incidents,” Moudud, BNP's standing committee member, told reporters after the two-hour meeting.
“We took the initiative so that the diplomats get the right picture of the brutality,” he said, claiming this would brighten the country's image.
Asked if the envoys wanted to know about the local BNP lawmaker's role in the Ramu rampage, Moudud replied, “We have given the diplomats evidence that shows our MP had in fact tried to combat the violence. But he could not succeed as rioters were many in number.”
The BNP leader also said the CDs containing the entire probe report, video footage and paper clippings on the incidents were given to the guests. He claimed the diplomats had expressed satisfaction over the inquiry report and the other materials provided.
বুধবার | ১৭ অক্টোবর ২০১২ |
রামু নিয়ে রাজনীতি না করাই উত্তম
বুধবার | ১৭ অক্টোবর ২০১২ |
রামু নিয়ে রাজনীতি না করাই উত্তম
বৌদ্ধদের ওপর হামলা
জিতেন্দ্রলাল বড়ূয়া
সুপ্রাচীনকাল থেকে বৌদ্ধরা এ দেশে বসবাস করে আসছে। একসময় ভারতবর্ষের সর্বত্র বৌদ্ধময় ছিল। দ্বাদশ শতক পর্যন্ত বৌদ্ধরা এ দেশে সংখ্যাগুরু ছিল। অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত পাল আমলের বৌদ্ধ রাজারা বর্তমান বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু অংশ শাসন করেছেন। মৌর্য সম্রাট অশোকের শাসনামলে ভারতবর্ষে অভাবনীয় উন্নতি ও শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজমান ছিল। অন্যদিকে বাংলাদেশে বৌদ্ধ রাজাদের আমলেই বাংলা ভাষার আদিগ্রন্থ চর্যাপদ রচনা করেছেন বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যরা। বাঙালি সংস্কৃতি ও বাঙালি জাতীয়তাবোধের উন্মেষ ঘটেছে বৌদ্ধ পাল রাজাদের আমলে। বৌদ্ধ পাল রাজাদের দীর্ঘ চারশ' বছর ছিল বাংলাদেশের স্বর্ণযুগ। সেই আমলে শিক্ষা-সংস্কৃতির অগ্রদূত ছিল নালন্দা, বিক্রমশীলা ও পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়। ঐতিহাসিক সূত্র মতে, বৌদ্ধরা ভারত-বাংলাদেশের আদিবাসী। এ দেশের মাটি খুঁড়লে বৌদ্ধ সভ্যতা ও বৌদ্ধ সংস্কৃতির সন্ধান পাওয়া যায়। জাতিসংঘের সদর দফতরে পোড়া মাটির যে নীলপদ্ম শোভা পাচ্ছে তা বৌদ্ধ আমলের। লন্ডন, কলকাতা, করাচি ও ঢাকার জাদুঘরগুলোতে এ উপমহাদেশের সভ্যতার যে প্রাচীন নিদর্শনগুলো দেখানো হচ্ছে তা অধিকাংশই বৌদ্ধদের।
অথচ সেই বৌদ্ধদেরই ভিটেছাড়া ও দেশছাড়া করার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের রামু উপজেলায় বৌদ্ধপল্লী ও উপাসনালয়ে পরিকল্পিত হামলা হলো। প্রকাশিত খবর থেকে মনে হয় শুধু তাৎক্ষণিক কোনো উত্তেজনার প্রতিক্রিয়ায় এত বড় ঘটনা ঘটেনি। এর পেছনে স্বার্থান্বেষী মহলের উস্কানি ও ইন্ধনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কারণ এক বৌদ্ধ যুবকের ফেসবুকে পবিত্র কোরআনের অবমাননার ছবি ট্যাগ করা হয়েছিল শনিবার রাত ৮টার দিকে। আর রাত ১০টার মধ্যেই হাজার হাজার মানুষ লাঠিসোটা নিয়ে রামুতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ শুরু করে দেয়। আগে থেকে পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ না নিলে একটি গ্রামে গভীর রাতে এভাবে শত শত লোক জড়ো করা কোনোভাবেই সম্ভব হতে পারে না। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ট্রাকে করে মানুষ নিয়ে আসা, ট্যাগ করা ছবির হাজার হাজার কপি বিলি করা এবং পোস্টার তৈরি করা_ এসব হঠাৎ করে ব্যবস্থা করা যায় না। তা ছাড়া গান পাউডার, স্প্রে ও কেরোসিনের টিনও তারা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল। সর্বোপরি, বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দেশে অতি ক্ষুদ্র একটি ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষের পক্ষে এমন দুঃসাহসী কাজ করা কি আদৌ সম্ভব?
শনিবার রাতভর রামুতে এ বর্বর ঘটনা ঘটার পরদিন রোববার দুপুর থেকে টেকনাফ, উখিয়ায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল জোরদার করার পরও বৌদ্ধবিহার ও বৌদ্ধদের ঘরবাড়িতে অগি্নসংযোগ করা হয়। আগের দিন একটি নারকীয় ঘটনা ঘটার পরদিন আরও দুটি উপজেলায় তার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসন কেন সক্ষম হলো না?
ওইদিন সন্ধ্যায় রামু চৌমুহনীতে ফেসবুকে ইসলামবিরোধী ছবি যুক্ত করার প্রতিবাদে সমাবেশ হয়েছে। তাতে সরকারি দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দিয়েছেন এবং তাদের উপস্থিতিতেই বৌদ্ধবিহার ও বৌদ্ধপল্লীতে হামলা করা হয়েছে। রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও সেই সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন। এদের কেউ-ই হামলাকারীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেননি।
তিন উপজেলার বৌদ্ধবিহার ও বৌদ্ধপল্লীতে হামলার ঘটনা যেভাবে ঘটেছে তাতে স্পষ্টই মনে হয় এটি একটি পরিকল্পিত হামলা। এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য কী? বৌদ্ধদের ভিটেবাড়ি ও দেশছাড়া করে সেখানে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসিত করা? যেমন_ একসময় বিভিন্ন এলাকা থেকে নদীভাঙা, ছিন্নমূল গরিব লোকজনকে নিয়ে সরকারি সহায়তায় পার্বত্য চট্টগ্রামে সেটেলার নাম দিয়ে পুনর্বাসিত করা হয়েছিল? আরাকানে বিতাড়িত হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের নজর পড়েছে দরিদ্র, নিরীহ সংখ্যালঘু বৌদ্ধদের ভিটেমাটির ওপর। ত্রাস সৃষ্টি করে আরাকানের কাছাকাছি এ বৌদ্ধদের তাড়াতে পারলে জায়গাজমি দখল করা যাবে। পৃথিবীর অধিকাংশ জাতি বা ধর্ম সম্পর্কীয় বিরোধের মূল কারণ এই ভূমি।
মনে রাখা জরুরি, বৌদ্ধরা এ দেশের আদি অধিবাসী। তারা অন্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, দেশের জন্য শহীদ হয়েছে। বৌদ্ধদের মধ্যে কোনো বিশ্বাসঘাতক রাজাকার নেই। তাই এসব হামলায় তারা সহজে দেশ ছেড়ে যাবে না।
সুদূর অতীতেও বৌদ্ধদের ওপর এ দেশে এর চেয়ে বড় হামলা হয়েছে। ৬০৬ খ্রিস্টাব্দে শশাঙ্ক গৌড়ের রাজা হয়ে চরম বৌদ্ধবিদ্বেষী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। রাজা শশাঙ্কের সহায়তায় হিন্দু ব্রাহ্মণ্যবাদী গোষ্ঠী বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ, বিহার, চৈত্য ও স্তূপগুলো ধ্বংস করতে থাকে এবং বৌদ্ধভিক্ষু ও বৌদ্ধদের নানা নির্যাতন শুরু করেন। শশাঙ্ক বুদ্ধগয়ার বোধিবৃক্ষের মূলোচ্ছেদ করে অবশিষ্টাংশ অগি্নতে ভস্মীভূত করেছিলেন। সে সময়কার উজ্জয়নীর রাজা সুধর্মার নির্দেশ ছিল, 'রামেশ্বর সেতুবন্ধ হতে হিমালয় পর্যন্ত বৃদ্ধ হোক, বালক হোক, বৌদ্ধ দেখলে সংহার করতে হবে। যে তা করবে না তাকে সংহার করতে হবে।'
দ্বাদশ শতকে লক্ষ্মণ সেনের রাজত্বের শেষ দিকে তুর্কি বীর ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বখতিয়ার খিলজি বাংলাদেশ আক্রমণ করেন। বাংলার হাজার বছরের বৌদ্ধবিহার, সংঘারাম ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বখতিয়ারের তরবারি ও অশ্ব ক্ষুরের আঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল। এগুলোর মধ্যে ছিল নালন্দা, বিক্রমশীলা ও তদন্তপুরী মহাবিহার। বাংলাদেশে সুলতানী শাসন আরম্ভ হওয়ার পর থেকে বৌদ্ধদের ওপর অত্যাচার শুরু হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বৌদ্ধবিহারের লুণ্ঠন, ধর্মান্তরিতকরণ ও বৌদ্ধবিহার ধ্বংস বা দখল করা।
২০০১ সালে আফগানিস্তানের বামিয়াম উপত্যকায় ষষ্ঠ শতকে নির্মিত দুটি বিশালাকৃতির বুদ্ধমূর্তি ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিল তালেবানরা। সেখানে কোনো বৌদ্ধ বসতি না থাকলেও উগ্র সাম্প্রদায়িক তালেবান গোষ্ঠী তা সহ্য করতে পারছিল না। কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার ঘটনা অবশ্য অন্য ধরনের। এই নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞে কারা জড়িত_ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করলেই বের হয়ে আসবে। ইতিমধ্যে পত্রপত্রিকায় কারা এ হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে, কারা গাড়ি দিয়েছে, কারা গান পাউডার ও কেরোসিন কেনার টাকা দিয়েছে সব ছাপা হচ্ছে। পরস্পরকে দোষারোপ না করে সরকার বা বিরোধী দলের এ বিষয়ে রাজনীতি না করাই উত্তম।
সপ্তম শতাব্দী থেকে এ পর্যন্ত বহু অত্যাচার-নির্যাতনকে মোকাবেলা করে বৌদ্ধরা এ দেশে টিকে আছে। যে পরিকল্পনা বা উদ্দেশ্য নিয়ে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার বৌদ্ধবিহার এবং বৌদ্ধ বসতিতে হামলা করা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন কখনও সম্ভব হবে না। কারণ জনগণের সহায়তায় বৌদ্ধরা এ দেশে টিকে থাকবে।
প্রফেসর ড. জিতেন্দ্রলাল বড়ূয়া :সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ
গবেষক ও গ্রন্থকার
অথচ সেই বৌদ্ধদেরই ভিটেছাড়া ও দেশছাড়া করার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের রামু উপজেলায় বৌদ্ধপল্লী ও উপাসনালয়ে পরিকল্পিত হামলা হলো। প্রকাশিত খবর থেকে মনে হয় শুধু তাৎক্ষণিক কোনো উত্তেজনার প্রতিক্রিয়ায় এত বড় ঘটনা ঘটেনি। এর পেছনে স্বার্থান্বেষী মহলের উস্কানি ও ইন্ধনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কারণ এক বৌদ্ধ যুবকের ফেসবুকে পবিত্র কোরআনের অবমাননার ছবি ট্যাগ করা হয়েছিল শনিবার রাত ৮টার দিকে। আর রাত ১০টার মধ্যেই হাজার হাজার মানুষ লাঠিসোটা নিয়ে রামুতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ শুরু করে দেয়। আগে থেকে পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ না নিলে একটি গ্রামে গভীর রাতে এভাবে শত শত লোক জড়ো করা কোনোভাবেই সম্ভব হতে পারে না। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ট্রাকে করে মানুষ নিয়ে আসা, ট্যাগ করা ছবির হাজার হাজার কপি বিলি করা এবং পোস্টার তৈরি করা_ এসব হঠাৎ করে ব্যবস্থা করা যায় না। তা ছাড়া গান পাউডার, স্প্রে ও কেরোসিনের টিনও তারা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল। সর্বোপরি, বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দেশে অতি ক্ষুদ্র একটি ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষের পক্ষে এমন দুঃসাহসী কাজ করা কি আদৌ সম্ভব?
শনিবার রাতভর রামুতে এ বর্বর ঘটনা ঘটার পরদিন রোববার দুপুর থেকে টেকনাফ, উখিয়ায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল জোরদার করার পরও বৌদ্ধবিহার ও বৌদ্ধদের ঘরবাড়িতে অগি্নসংযোগ করা হয়। আগের দিন একটি নারকীয় ঘটনা ঘটার পরদিন আরও দুটি উপজেলায় তার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসন কেন সক্ষম হলো না?
ওইদিন সন্ধ্যায় রামু চৌমুহনীতে ফেসবুকে ইসলামবিরোধী ছবি যুক্ত করার প্রতিবাদে সমাবেশ হয়েছে। তাতে সরকারি দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দিয়েছেন এবং তাদের উপস্থিতিতেই বৌদ্ধবিহার ও বৌদ্ধপল্লীতে হামলা করা হয়েছে। রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও সেই সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন। এদের কেউ-ই হামলাকারীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেননি।
তিন উপজেলার বৌদ্ধবিহার ও বৌদ্ধপল্লীতে হামলার ঘটনা যেভাবে ঘটেছে তাতে স্পষ্টই মনে হয় এটি একটি পরিকল্পিত হামলা। এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য কী? বৌদ্ধদের ভিটেবাড়ি ও দেশছাড়া করে সেখানে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসিত করা? যেমন_ একসময় বিভিন্ন এলাকা থেকে নদীভাঙা, ছিন্নমূল গরিব লোকজনকে নিয়ে সরকারি সহায়তায় পার্বত্য চট্টগ্রামে সেটেলার নাম দিয়ে পুনর্বাসিত করা হয়েছিল? আরাকানে বিতাড়িত হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের নজর পড়েছে দরিদ্র, নিরীহ সংখ্যালঘু বৌদ্ধদের ভিটেমাটির ওপর। ত্রাস সৃষ্টি করে আরাকানের কাছাকাছি এ বৌদ্ধদের তাড়াতে পারলে জায়গাজমি দখল করা যাবে। পৃথিবীর অধিকাংশ জাতি বা ধর্ম সম্পর্কীয় বিরোধের মূল কারণ এই ভূমি।
মনে রাখা জরুরি, বৌদ্ধরা এ দেশের আদি অধিবাসী। তারা অন্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, দেশের জন্য শহীদ হয়েছে। বৌদ্ধদের মধ্যে কোনো বিশ্বাসঘাতক রাজাকার নেই। তাই এসব হামলায় তারা সহজে দেশ ছেড়ে যাবে না।
সুদূর অতীতেও বৌদ্ধদের ওপর এ দেশে এর চেয়ে বড় হামলা হয়েছে। ৬০৬ খ্রিস্টাব্দে শশাঙ্ক গৌড়ের রাজা হয়ে চরম বৌদ্ধবিদ্বেষী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। রাজা শশাঙ্কের সহায়তায় হিন্দু ব্রাহ্মণ্যবাদী গোষ্ঠী বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ, বিহার, চৈত্য ও স্তূপগুলো ধ্বংস করতে থাকে এবং বৌদ্ধভিক্ষু ও বৌদ্ধদের নানা নির্যাতন শুরু করেন। শশাঙ্ক বুদ্ধগয়ার বোধিবৃক্ষের মূলোচ্ছেদ করে অবশিষ্টাংশ অগি্নতে ভস্মীভূত করেছিলেন। সে সময়কার উজ্জয়নীর রাজা সুধর্মার নির্দেশ ছিল, 'রামেশ্বর সেতুবন্ধ হতে হিমালয় পর্যন্ত বৃদ্ধ হোক, বালক হোক, বৌদ্ধ দেখলে সংহার করতে হবে। যে তা করবে না তাকে সংহার করতে হবে।'
দ্বাদশ শতকে লক্ষ্মণ সেনের রাজত্বের শেষ দিকে তুর্কি বীর ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বখতিয়ার খিলজি বাংলাদেশ আক্রমণ করেন। বাংলার হাজার বছরের বৌদ্ধবিহার, সংঘারাম ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বখতিয়ারের তরবারি ও অশ্ব ক্ষুরের আঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল। এগুলোর মধ্যে ছিল নালন্দা, বিক্রমশীলা ও তদন্তপুরী মহাবিহার। বাংলাদেশে সুলতানী শাসন আরম্ভ হওয়ার পর থেকে বৌদ্ধদের ওপর অত্যাচার শুরু হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বৌদ্ধবিহারের লুণ্ঠন, ধর্মান্তরিতকরণ ও বৌদ্ধবিহার ধ্বংস বা দখল করা।
২০০১ সালে আফগানিস্তানের বামিয়াম উপত্যকায় ষষ্ঠ শতকে নির্মিত দুটি বিশালাকৃতির বুদ্ধমূর্তি ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিল তালেবানরা। সেখানে কোনো বৌদ্ধ বসতি না থাকলেও উগ্র সাম্প্রদায়িক তালেবান গোষ্ঠী তা সহ্য করতে পারছিল না। কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার ঘটনা অবশ্য অন্য ধরনের। এই নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞে কারা জড়িত_ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করলেই বের হয়ে আসবে। ইতিমধ্যে পত্রপত্রিকায় কারা এ হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে, কারা গাড়ি দিয়েছে, কারা গান পাউডার ও কেরোসিন কেনার টাকা দিয়েছে সব ছাপা হচ্ছে। পরস্পরকে দোষারোপ না করে সরকার বা বিরোধী দলের এ বিষয়ে রাজনীতি না করাই উত্তম।
সপ্তম শতাব্দী থেকে এ পর্যন্ত বহু অত্যাচার-নির্যাতনকে মোকাবেলা করে বৌদ্ধরা এ দেশে টিকে আছে। যে পরিকল্পনা বা উদ্দেশ্য নিয়ে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার বৌদ্ধবিহার এবং বৌদ্ধ বসতিতে হামলা করা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন কখনও সম্ভব হবে না। কারণ জনগণের সহায়তায় বৌদ্ধরা এ দেশে টিকে থাকবে।
প্রফেসর ড. জিতেন্দ্রলাল বড়ূয়া :সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ
গবেষক ও গ্রন্থকার
No comments:
Post a Comment