আলী ইমাম মজুমদার | তারিখ: ২১-১০-২০১২
কক্সবাজার জেলার রামুসহ
বিভিন্ন স্থানে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর হামলা, লুণ্ঠন, বাড়িঘর ও উপাসনালয়
অগ্নিসংযোগ নিয়ে অনেক লেখা হয়েছে। অহিংসা যে ধর্মের মূলমন্ত্র, জগতের সব প্রাণী
সুখী হোক বলে যাঁরা প্রার্থনা করেন, তাঁদের ওপর এ নির্যাতন। কিছু লোকের দাবি, সেই
সম্প্রদায়ের একজন যুবক পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননার মতো একটি ঘটনা ঘটিয়েছে। এর জবাব
এ রকম হতে পারে না। দেশের সব বিবেকবান মানুষ এ ঘটনায় ব্যথিত। তাই ঘটনার সঙ্গে
সংশ্লিষ্ট সবার যথোপযুক্ত শাস্তি একান্ত কাম্য। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত রামু সফরে যান
প্রধানমন্ত্রী। যান সরকারি ও বিরোধী দলের অনেক নেতা। সেখানে গেছেন মানবাধিকার
সংগঠনগুলোর নেতারা। অকুস্থলে কিংবা ফিরে এসে তাঁদের কেউ কেউ কিছু মন্তব্য করেছেন।
সেগুলো তদন্ত কিংবা বিচারকে প্রভাবিত করবে কি না, সে বিষয়টি এ নিবন্ধের বিবেচ্য
নয়।
রামু সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের
প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ আর দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি হবে বলেও ঘোষণা করেছেন। তাঁর এ
সফর কাঙ্ক্ষিত ও সময়োচিত ছিল। সফরকালে স্থানীয় অশীতিপর বৌদ্ধধর্মীয় নেতা ও রামু
সীমাবিহারের অধ্যক্ষ সত্যপ্রিয় মহাথেরো তাঁর সঙ্গে কিছু আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী
রামু ত্যাগের পর এ বিষয়ে তিনি কয়েকজন সাংবাদিককে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমার অনুরোধ
রাখায় আমি কৃতজ্ঞ।’ কী অনুরোধ করেছিলেন, এ প্রশ্নের জবাবে শ্রদ্ধেয় মহাথেরো বলেন,
‘পুড়িয়ে দেওয়া আমাদের ৩০০ বছরের ঐতিহ্যের সীমাবিহার তিনি দেখতে আসেন। সেখানে জাতির
জনকের কন্যা আমাকে বলেন, তাঁর সরকার ক্ষতিগ্রস্ত সব বিহার ও মন্দির পুনরায় নির্মাণ
করে দেবে। এ কথা শুনে আমি তাঁকে বিনীত অনুরোধ করি, দয়া করে সেনাবাহিনীকে এ কাজের
দায়িত্বটা দেবেন। কেননা এমপি বলেন আর চেয়ারম্যান বলেন, অথবা ডিসি আর ইউএনও—সবাই
আপনার সরকারের টাকা মেরে দেওয়ার কাজে ওস্তাদ। প্রধানমন্ত্রী আমার অনুরোধ রেখেছেন।’
(কালের কণ্ঠ, ৯ অক্টোবর ২০১২)। শ্রদ্ধেয় মহাথেরো সম্ভবত রামু কিংবা কক্সবাজারের
অভিজ্ঞতা থেকেই কথাগুলো বলেছেন। দাবিটির সংবেদনশীলতা ও বাস্তবতা বিবেচনায়
প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তটিকেও সঠিকই বলতে হবে।
রামু আর কক্সবাজারের অন্যান্য
স্থানের ঘটনায় প্রশাসন ও পুলিশের ভূমিকা আজ বড় রকমের প্রশ্নবিদ্ধ। ঘটনাটি সম্পর্কে
আগাম গোয়েন্দা-সতর্কতা ছিল বলে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের মতো দায়িত্বশীল
ব্যক্তি মন্তব্য করেছেন। তা-ই যদি হয়, তবে প্রশাসন ও পুলিশের শৈথিল্যের কোনো কৈফিয়ত
দেখি না কেন? তাদের ওপর জনগণ আস্থা রাখবে কী করে? সে বিবেচনায় মহাথেরোর সংশয়
যথার্থ। যে তিনজন সাংবাদিক কক্সবাজার থেকে খবরটি পাঠিয়েছেন, তাঁদের একজনের সঙ্গে এ
নিবন্ধকারের সে জেলায় কর্মরত থাকাকালীন থেকেই অন্তরঙ্গ সম্পর্ক রয়েছে। এর যথার্থতা
পুনরায় যাচাই করতে টেলিফোনে তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে উদ্ধৃত
বক্তব্যটি অবিকল তা-ই ছিল।
কিন্তু এখানে মহাথেরোর বক্তব্যটি কক্সবাজারকেন্দ্রিক
হলেও অনেকের বিবেচনায় গোটা দেশে কিছু সম্মানজনক ব্যতিক্রম থাকলেও প্রায় সব স্থানের
জন্যই প্রযোজ্য। বেসামরিক প্রশাসনের সব অঙ্গ আজ গুরুতর আস্থার সংকটে ভুগছে—এটা তো
রাখঢাক করে বলার বিষয় আর নেই। তেমনি আস্থার সংকটে আছেন জনপ্রতিনিধিরা, সহজবোধ্য
কারণেই। অথচ তাঁরা তো জনগণের ভোটেই নির্বাচিত। এ আস্থাহীনতার জন্য সাধারণ ছোটখাটো
কাজে সামরিক বাহিনীকে দায়িত্ব দিতে হচ্ছে। যেমনটা দেওয়া হয়েছে রাস্তা নির্মাণ, সেতু
মেরামত ও ফ্লাইওভার নির্মাণকাজে। জনগণ বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আস্থা রাখতে
পারছে না বলেই তো এ ধরনের কাজেও সামরিক বাহিনী নিয়োগের দাবি আসে। এ
প্রতিষ্ঠানগুলোকে এত তাড়াতাড়ি আমরা বিপন্ন করলাম কীভাবে আর এর পরিণতিই বা কী?
নিকট অতীতের দিকে যদি আমরা দেখি, আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত মেয়াদে ১৯৯৮ সালে
দেশব্যাপী ব্যাপক বন্যা হয়েছিল। গোটা দেশের দুই-তৃতীয়াংশ তলিয়ে ছিল প্রায় এক মাস।
বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল সড়ক ও রেল যোগাযোগব্যবস্থা। সরকার সে সময়ে দেশি-বিদেশি সব
আশঙ্কাকে ভুল প্রমাণ করে ব্যাপক সফল ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করে
প্রধানত জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে। অল্প কিছুকালের মধ্যেই মহাপ্লাবনের ক্ষয়ক্ষতি
কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়; কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচি ও ক্ষতিগ্রস্ত যোগাযোগব্যবস্থার
দ্রুত মেরামতের মাধ্যমে। দু-একটি ছোটখাটো বিচ্যুতি ছাড়া উল্লেখ করার মতো দুর্নীতি,
কর্তব্যে অবহেলা এমনকি দলীয় বা ব্যক্তিস্বার্থে ত্রাণ ব্যবহারের তেমন অভিযোগ কি তখন
ছিল? এককথায় জবাব দেওয়া যায়, তেমনটা ছিল না। সম্পূর্ণ পেশাদারির নিরিখেই সর্বোচ্চ
থেকে সর্বনিম্ন মহল সেই সফল ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনায় অংশ নেয়। ভেবে
বিস্মিত হই, মাত্র কয়েকটি বছরে এত ব্যাপক অবক্ষয় কীভাবে ঘটল বেসামরিক
প্রশাসনযন্ত্রটিতে।
যত দোষ নন্দ ঘোষ নয়, এই অবস্থার জন্য মূলত দায়ী আগের জোট ও
বর্তমান মহাজোট সরকারের রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বত্র ব্যাপক দলীয়করণ। নিয়োগ, বদলি,
পদোন্নতি—সর্বক্ষেত্রে এর ছাপ সুস্পষ্ট। দল দুটোর আগের সরকারের আমলে এটা অতি অল্প
মাত্রায়ই ছিল। গত বছর দশেকের (২০০৭-২০০৮ বাদ রেখে) অধিক সময় ধরে নিয়োগ, পদায়ন,
পদোন্নতির ক্ষেত্রে দক্ষতা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা অগ্রাধিকার না দিয়ে দলীয় আনুগত্যের
প্রাধান্য দেওয়া হয়। ফলে এ প্রতিষ্ঠানগুলো এখন জনস্বার্থে তেমন কার্যকর ভূমিকা
রাখতে পারছে না। ব্যর্থতার জন্য নয়, শাস্তি জোটে আনুগত্যহীনতার অজানা অভিযোগে।
ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর লেলিয়ে দিলে আবার এসব প্রতিষ্ঠানেই প্রবল ও ভয়ংকর রকম
কার্যকর হয়ে ওঠে। দলের স্থানীয় নেতাদের আজ্ঞাবহ করা হয়েছে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের
সব প্রতিষ্ঠানকে। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতারা যত অপকর্মই করুক, প্রশাসন প্রায়
নির্লিপ্ত থাকছে। দু-একটি ক্ষেত্রে (যেমন পাবনা) সক্রিয় হতে গিয়ে অধিক মাশুল
দিয়েছেন কর্মকর্তারাই। তাই সে পথ ছেড়ে সুযোগ বুঝে রাজনৈতিক প্রভুদের সহচর হয়ে
প্রশাসনের একটি অংশ নেমে পড়েছে আখের গোছানোর কাজে।
দলীয়করণের পাশাপাশি
কিছুসংখ্যক রাজনৈতিক নেতার সহযোগী হয়ে মাঠ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের একটি অংশের
বিরুদ্ধে খোলামেলা দুর্নীতির অভিযোগ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুর্নীতি আগেও ছিল
কিন্তু গত এক দশকে তা অনেকটা বেপরোয়া বা লাগামহীন হয়ে পড়েছে। পিয়ন, ঝাড়ুদারসহ বহু
চাকরির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতারা চাকরিদাতাদের কাছে একটি তালিকা ধরিয়ে দেন। বলা হয়,
এরা দলের ত্যাগী কর্মী। দু-একজন হতেও পারে। তবে অধিকাংশই সেই তালিকায় স্থান পায়
টাকার জোরে—এ জনশ্রুতি প্রবল। পুলিশ কনস্টেবলের চাকরির জন্যও কয়েক লাখ টাকা ঘুষ
নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে প্রায় সারা দেশে। চাকরিদাতাদের একটি অংশ সুযোগ বুঝে রাজনৈতিক
নেতৃত্বের সঙ্গে ভাগ-বাঁটোয়ারায় নেমে পড়েছে। বিষয়টি নির্ঝঞ্ঝাট করতে সে পক্ষও এটাই
নিরাপদ ভাবছে। স্থানীয় ঠিকাদারি থেকে স্কুল-কলেজের ভর্তিতেও একই বাণিজ্যের অভিযোগ
আসে বহু স্থান থেকে। জনপ্রতিনিধিদের একটি অংশ কিংবা তাঁদের স্থানীয় প্রতিনিধি
সহযোগী হয়েই মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তারা প্রশাসন চালাচ্ছেন। রাজনৈতিক সখ্য আর বখরার
কারণেই জোটে পছন্দমতো পদায়ন। তাই চাকরির স্বাভাবিক চেইন অব কমান্ড আজ বিপন্ন। এ
অবস্থায় বেসামরিক প্রশাসনের ওপর ভুক্তভোগী জনগণ আস্থা রাখবে কীভাবে? পক্ষান্তরে
সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরে সবকিছুই ঠিকঠাক চলছে এমনটি হয়তো নয়। তবে এ ধরনের ঢালাও
অভিযোগের কোনো সুযোগই নেই তাদের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা ও মর্যাদা ধরে রাখা
ও বৃদ্ধি করার বিষয়ে তারা সাফল্যের ছাপ রেখে চলছে। তাই স্বাভাবিকভাবে বিপন্ন মানুষ
তাদেরই খুঁজবে সহায়তার জন্য। সামরিক বাহিনী এ দেশেরই প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের অধীনেই
তাদের অবস্থান। তারা তাদের অবস্থান মজবুত করতে পারলে বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলো পারছে
না কেন, তা খুঁজে দেখে প্রতিকার করা আজ সময়ের দাবি।
এ কথা বহুবার আলোচিত হয়েছে,
গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা টিকে থাকার ও মজবুত হওয়ার একটি প্রধান শর্ত হচ্ছে
রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে সক্রিয় ও সবল হতে হবে। দুর্যোগ মোকাবিলা ও
শান্তিশৃঙ্খলার গুরুতর অবনতি হওয়ার আশঙ্কা না থাকলে কিংবা যেখানে বেসামরিক
প্রশাসনের প্রয়োজনীয় সামর্থ্য নেই, তা ব্যতীত বেসামরিক কাজে সেনাবাহিনীকে ডেকে আনা
ঠিক নয়। নিকট অতীতের ইতিহাস; অমৃতসরে স্বর্ণমন্দিরে ভারতীয় সেনা অভিযানের পর
তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ওপর প্রাণঘাতী হামলা হতে পারে বলে
দায়িত্বশীল মহল তাঁকে সেনাবাহিনীর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিতে পুনঃপুন পরামর্শ দিয়েছিল।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সরকারপ্রধানের জন্য সামরিক নিরাপত্তাবলয় বেমানান বলে তিনি তা
নিতে অস্বীকার করেন। প্রাণ দিয়েছেন কিন্তু এ নীতির প্রশ্নে আপস করেননি।
ভবিষ্যতে যাতে কোনো অগণতান্ত্রিক শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতায় না আসতে পারে, তার জন্য
আমরা সম্প্রতি সংবিধানে একটি অনুচ্ছেদ যুক্ত করেছি। সেই অনুচ্ছেদটিকে অর্থবহ করতে
হলে রাষ্ট্রের বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জোরদার করতে হবে। পক্ষান্তরে আমরা দেখছি,
ক্রমান্বয়ে সেগুলোকে দুর্বল করে ফেলা হচ্ছে। একটি জাতির জীবনে সময় কখনো ফুরিয়ে যায়
না। তাই গণতন্ত্রের স্বার্থেই রাজনৈতিক নেতৃত্ব রাষ্ট্রের সব অঙ্গকে শক্তিশালী এবং
প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখার কাজও করতে হবে।
এটা তাঁরা বুঝতে না পারায় জাতি অনেক খেসারত দিয়েছে। সঠিক পথে আবার যাত্রা শুরু
হবে—এ প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষায় রইলাম। আবার সংশয়বাদী হই, যদি বরাবরের মতো এসব কথা
উপেক্ষিত হয়। ক্ষমতায় যাঁরাই থাকছেন, তাঁরাই বলছেন, রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান আইন
অনুসারে প্রভাবমুক্তভাবে কাজ করে। এ মানসিকতা অব্যাহত থাকলে যা ঘটেছে, তার চেয়েও
অধিক ঘটবে এবং ঘটতে থাকবে। এই আশঙ্কাকে অমূলক বলা যাবে না। তবে আমরা প্রায়ই ভুলে
যাই, কেউ অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ হয় না।
আলী ইমাম মজুমদার: সাবেক মন্ত্রিপরিষদ
সচিব।
রবিবার, ২১ অক্টোবর ২০১২
রবিবার, ২১ অক্টোবর ২০১২
রামু উখিয়া টেকনাফের বিহার পুনর্নির্মাণে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ
সেনা তত্ত্বাবধানে কাজ শুরু
রামুর সহিংসতার পর সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগের প্রবণতা বেড়েছে
লেখক: কক্সবাজার প্রতিনিধি | রবিবার, ২১ অক্টোবর ২০১২, ৬ কার্তিক ১৪১৯
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলন
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ মনে করে, রামুর ভয়াবহ সহিংসতার পর সংখ্যালঘুদের মাঝে দেশ ত্যাগের প্রবণতা বেড়েছে শতকরা ৩৮.৪৬ ভাগ। এছাড়া শতকরা ৭৮.২৪ ভাগ সংখ্যালঘু মনে করেন, বাংলাদেশের সব স্থানেই সংখ্যালঘুদের স্বার্থ হুমকিতে রয়েছে।
গতকাল শনিবার সকালে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত এক লিখিত বক্তব্যে এ দাবি করেন। গত শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিষদের ৩০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল রামু, উখিয়া ও টেকনাফের বৌদ্ধ বসতিতে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। এর আগে তারা পটিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত মন্দিরও পরিদর্শন করেন।
এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের ২০০ মানুষের মাঝে একটি জরিপ চালানো হয়। ওই জরিপের ভিত্তিতে তিনি দাবি করেন, ক্ষতিগ্রস্ত ৯০ ভাগ মানুষ মনে করছেন, রামু-উখিয়া-টেকনাফ-পটিয়ায় বরাবর ধর্মীয় সম্প্রীতির পরিবেশ ছিল। ৯৭.৪৬ ভাগ মনে করেন, ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বরের হামলা পরিকল্পিত। আর ৯২.২০ ভাগ মানুষ জানান, হামলা মোকাবিলায় প্রশাসন ও আইন-শৃংখলা বাহিনী ব্যর্থ হয়েছে। ৭২.১৫ ভাগ মানুষের ধারণা এ ঘটনায় ব্যক্তিগত ও সামাজিক নিরাপত্তা বিপন্ন। তিনি বলেন, আগামী ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে এই ধরনের হামলা দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও হতে পারে বলেও মনে করেন জরিপে অংশগ্রহণকারী ৫৯.২০ ভাগ মানুষ।
এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শুরুর পর থেকেই তা বানচালের জন্য বিশেষ একটি মহল দেশে-বিদেশে অব্যাহতভাবে চক্রান্ত চালিয়ে আসছে। তিনি বৌদ্ধ বসতিতে সহিংসতার ধারাবাহিকতা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, ঐ ঘটনার আগে বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় উস্কানিমূলক গুজব বা প্রচারণা চালানো হয়েছে, কোথাও মাইকে, কোথাও প্রচারপত্র বিলি করে, কোথাও মোবাইলে, কোথাও ফেসবুকে: গোয়েন্দা সংস্থা ঘটনার ব্যাপারে আগাম তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছে বা অবহেলা করেছে বা তথ্য দিয়ে থাকলে প্রশাসন একে কোন প্রকার গুরুত্ব দেয়নি; প্রশাসনের নাকের ডগায় দীর্ঘ সময় ধরে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীরা অব্যাহতভাবে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে; তাণ্ডবলীলার সময় নানান স্থানে সন্ত্রাসীরা গান পাউডার ব্যবহার করেছে; ঘটনার সময় পুলিশ ও সিভিল প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে; কোথাও কোথাও তারা সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের উস্কানি দিয়েছে, প্রশ্রয়দাতার ভূমিকা পালন করেছে; সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থল ত্যাগের পর প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে বা বর্ডার গার্ডের টহলের ব্যবস্থা করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের ভাঁওতা দিয়েছে; ক্ষমতাসীন দল, বিরোধী দলসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে, কোথাও কোথাও নিজেরা সম্পৃক্ত হয়েছে; ঘটনা শেষে দুষ্কৃতকারী গ্রেপ্তারে পুলিশ প্রশাসন লোক দেখানো ভূমিকা পালন করেছে; আবার একই সাথে আক্রান্তদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাদের প্রশাসনিক হয়রানি করেছে এবং এভাবে শান্তি-শৃংখলা রক্ষার অজুহাতে কথিত ‘নিরপেক্ষ’ ভূমিকা গ্রহণের আড়ালে প্রকারান্তরে দুষ্কৃতকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং প্রকৃত ঘটনা আড়ালের চেষ্টা চালিয়েছে।
তিনি রামুর সহিংসতায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনকে ‘যথার্থ ও বস্তুনিষ্ঠ’ বলে দাবি করে বলেন, ‘রামুর ঘটনার ব্যাপারে সরকারি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনতিবিলম্বে জনসমক্ষে প্রকাশ ও প্রচারের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই।’ তিনি ‘প্রশাসনের ভেতরে আরেকটি প্রশাসন লুক্কায়িত অবস্থায় কাজ করছে কিনা’ তাও খতিয়ে দেখার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হ্রাস হওয়ার তথ্য তুলে ধরে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির সময় তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ২৯.৭ শতাংশ ছিল ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। ৭০-এর নির্বাচনের প্রাক্কালে তা নেমে দাঁড়ায় ২৩.৬ শতাংশে। দেশ স্বাধীন হবার পর এ দেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর হার ছিল ২১.৬ ভাগ।’ এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত দাবি করেন, ‘আজকের এ মুহূর্তে তা নেমে দাঁড়িয়েছে ৯.৩ ভাগে। ২০০১ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ৯ লক্ষ সংখ্যালঘু দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার পরিমল কান্তি চৌধুরী ও ড. জিনবোধি ভিক্ষু, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক তাপস হোড়, কক্সবাজার কমিটির আহবায়ক এড. পীযূষ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় তথ্য বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ প্রমুখ।
হামলার পরিকল্পনা দুবাইয়ে!
সারোয়ার সুমন, চট্টগ্রাম ব্যুরো
কক্সবাজারে নাশকতা সংঘটিত হওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে আরব আমিরাতের দুবাইয়ে। গত জুলাই মাসে মিয়ানমারের আরাকান-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও)
সঙ্গে নাইক্ষ্যংছড়ি ইউনিয়নের জামায়াত সমর্থিত চেয়ারম্যান তোফায়েলের বৈঠক হয় দুবাইয়ে। সরকার গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া রিপোর্টে এমন ইঙ্গিত দিয়েছে। তাই দুবাই বৈঠকে কারা ছিল সে ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিতে শুরু করেছে গোয়েন্দারা। জানা গেছে, একই সময় ওমরাহ পালন করতে সপরিবারে সৌদি আরব গিয়েছিলেন কক্সবাজার সদর ও রামু থানার এমপি লুৎফুর রহমান কাজলও। সেখান থেকে আরব আমিরাত হয়ে বাংলাদেশে ফেরত আসেন তিনি।
ওমরাহ পালন করতে গত জুলাইয়ে সপরিবারে সৌদি আরব যাওয়ার কথা সমকালের কাছে স্বীকার করেছেন এমপি কাজল। তিনি বলেন, 'মা, স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে রমজানের আগে ওমরাহ পালন করতেই সৌদি আরব যাই আমি। সেখান থেকে ফেরার পথে আরব আমিরাতে ২৪ ঘণ্টার ট্রানজিট সময় কাটাই। আমার সঙ্গে তোফায়েলের দেখাও হয়নি। কক্সবাজারে নাশকতা চালানোর আগেপড়েও তার সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি। প্রয়োজনে আবার মোবাইল কল লিস্ট পরীক্ষা করে দেখতে পারে গোয়েন্দারা। দেখতে পারে পাসপোর্টও।' এমপি কাজল জানান, স্থানীয় প্রশাসনের অনুরোধে নাশকতা দমানোর চেষ্টা করতে গিয়ে সরকার এখন তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। অথচ প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করতে তদন্ত কমিটির কাছে লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বাধীন কমিটি হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত দুই শতাধিক ব্যক্তির নাম-ঠিকানা দিলেও ঘটনার নেপথ্য নায়কদের সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে পারেনি। তবে সন্দেহভাজন নাইক্ষ্যংছড়ি চেয়ারম্যান ঘটনার দুই মাস আগে আরএসওর সঙ্গে দুবাইয়ে বৈঠক করার বিষয়টি তুলে ধরেন। এই ইঙ্গিতের সূত্র ধরে এখন এগোচ্ছে গোয়েন্দারা। দুবাইয়ের সেই বৈঠকে কারা উপস্থিত ছিলেন সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তারাও।
এ ব্যাপারে ঘটনাস্থলে যাওয়া সিআইডির এএসপি হ্লা সিং প্রু সমকালকে বলেন, 'তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্টে দুবাইয়ে নাশকতা পরিকল্পনা হওয়ার ব্যাপারে ইঙ্গিত দিলে সেটি যাচাই-বাছাই করে দেখবে তদন্ত কর্মকর্তা। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চাইলে ইন্টারপোলের মাধ্যমেও দুবাইয়ে বৈঠকের ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজখবর নিতে পারবে।
তদন্ত কমিটি জানায়, সন্দেহভাজন ইউপি চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার হওয়া শিবিরকর্মী মুক্তাদিরের। উত্তমের ফেসবুক থেকে কোরআন অবমাননা সংক্রান্ত ছবিটি ডাউনলোড করেন মুক্তাদির। আবার এ মুক্তাদিরের সঙ্গেই ঘটনার আগের দিন ২৮ সেপ্টেম্বর বৈঠক করেন জামায়াত সমর্থিত ইউপি চেয়ারম্যান তোফায়েল। মুক্তাদির চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রশিবিরের ক্রীড়া সম্পাদক। আবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা তোফায়েলও ছাত্রজীবনে ছিলেন শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
ঘটনার দিন চৌমুহনী চত্বরে সমাবেশ শেষে এমপি কাজল মোবাইল ফোনে একজন মৌলভীর সঙ্গে কথা বলার বিষয়টিকেও সন্দেহের চোখে দেখছে গোয়েন্দারা। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটিও এমপি কাজলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। বিষয়টি স্বীকার করে এমপি কাজল বলেন, '২৯ সেপ্টেম্বর রামুতে ঘটনা যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল তখন ধর্মীয় উন্মাদনা থামাতেই একজন মৌলভীর সঙ্গে কথা বলেছি আমি। মুসলমানদের ধর্মীয় উত্তেজনা প্রশমন করতে তাকে ভূমিকা রাখার অনুরোধ করেছি। এ সময় আমার পাশে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও ছিলেন।' পাল্টা প্রশ্ন করে এমপি কাজল বলেন, 'এমপি হিসেবে নাশকতা নিরসন করার চেষ্টা যদি অপরাধ হয় তবে আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ দলীয় স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সারওয়ার কাজল কোথা থেকে ৩৫ কেজি ওজনের মূর্তি উদ্ধার করলেন সেটি নিয়ে কেন কোনো প্রশ্ন করা হচ্ছে না। তার থেকে এ প্রশ্নের জবাব চাইলে নতুন একটা ক্লু পেতে পারত সরকার। আবার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের দেওয়া হামলাকারীর তালিকা পর্যালোচনা করেও নেপথ্যের কিছু ব্যক্তিকে শনাক্ত করা যেত। কারণ তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বেশিরভাগই কমল ও কাজলের এলাকার লোকজন।'
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সারওয়ার কাজল বলেন, 'দুবাইয়ে পরিকল্পনার কথা ধামাচাপা দিতেই ৩৫ কেজি ওজনের মূর্তি উদ্ধারের প্রসঙ্গ তুলছেন এমপি কাজল। গোয়েন্দারা এমপির বিদেশকালীন গতিবিধি ও ঘটনার দিনের গতিবিধি মেলালে নেপথ্য নায়ককে চিহ্নিত করতে পারবে। কারণ এমপি কাজল বিএনপির লোক। আর দুবাইয়ে গিয়ে যে বৈঠক করেছেন তিনিও জামায়াতের লোক। আবার ঘটনার দিন উত্তমের ফেসবুক থেকে যে ছবিটি ডাউনলোড করেছে সে ছাত্রশিবিরের লোক।'
হামলার পরিকল্পনা দুবাইয়ে!
সারোয়ার সুমন, চট্টগ্রাম ব্যুরো
কক্সবাজারে নাশকতা সংঘটিত হওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে আরব আমিরাতের দুবাইয়ে। গত জুলাই মাসে মিয়ানমারের আরাকান-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও)
সঙ্গে নাইক্ষ্যংছড়ি ইউনিয়নের জামায়াত সমর্থিত চেয়ারম্যান তোফায়েলের বৈঠক হয় দুবাইয়ে। সরকার গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া রিপোর্টে এমন ইঙ্গিত দিয়েছে। তাই দুবাই বৈঠকে কারা ছিল সে ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিতে শুরু করেছে গোয়েন্দারা। জানা গেছে, একই সময় ওমরাহ পালন করতে সপরিবারে সৌদি আরব গিয়েছিলেন কক্সবাজার সদর ও রামু থানার এমপি লুৎফুর রহমান কাজলও। সেখান থেকে আরব আমিরাত হয়ে বাংলাদেশে ফেরত আসেন তিনি।
ওমরাহ পালন করতে গত জুলাইয়ে সপরিবারে সৌদি আরব যাওয়ার কথা সমকালের কাছে স্বীকার করেছেন এমপি কাজল। তিনি বলেন, 'মা, স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে রমজানের আগে ওমরাহ পালন করতেই সৌদি আরব যাই আমি। সেখান থেকে ফেরার পথে আরব আমিরাতে ২৪ ঘণ্টার ট্রানজিট সময় কাটাই। আমার সঙ্গে তোফায়েলের দেখাও হয়নি। কক্সবাজারে নাশকতা চালানোর আগেপড়েও তার সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি। প্রয়োজনে আবার মোবাইল কল লিস্ট পরীক্ষা করে দেখতে পারে গোয়েন্দারা। দেখতে পারে পাসপোর্টও।' এমপি কাজল জানান, স্থানীয় প্রশাসনের অনুরোধে নাশকতা দমানোর চেষ্টা করতে গিয়ে সরকার এখন তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। অথচ প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করতে তদন্ত কমিটির কাছে লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বাধীন কমিটি হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত দুই শতাধিক ব্যক্তির নাম-ঠিকানা দিলেও ঘটনার নেপথ্য নায়কদের সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে পারেনি। তবে সন্দেহভাজন নাইক্ষ্যংছড়ি চেয়ারম্যান ঘটনার দুই মাস আগে আরএসওর সঙ্গে দুবাইয়ে বৈঠক করার বিষয়টি তুলে ধরেন। এই ইঙ্গিতের সূত্র ধরে এখন এগোচ্ছে গোয়েন্দারা। দুবাইয়ের সেই বৈঠকে কারা উপস্থিত ছিলেন সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তারাও।
এ ব্যাপারে ঘটনাস্থলে যাওয়া সিআইডির এএসপি হ্লা সিং প্রু সমকালকে বলেন, 'তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্টে দুবাইয়ে নাশকতা পরিকল্পনা হওয়ার ব্যাপারে ইঙ্গিত দিলে সেটি যাচাই-বাছাই করে দেখবে তদন্ত কর্মকর্তা। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চাইলে ইন্টারপোলের মাধ্যমেও দুবাইয়ে বৈঠকের ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজখবর নিতে পারবে।
তদন্ত কমিটি জানায়, সন্দেহভাজন ইউপি চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার হওয়া শিবিরকর্মী মুক্তাদিরের। উত্তমের ফেসবুক থেকে কোরআন অবমাননা সংক্রান্ত ছবিটি ডাউনলোড করেন মুক্তাদির। আবার এ মুক্তাদিরের সঙ্গেই ঘটনার আগের দিন ২৮ সেপ্টেম্বর বৈঠক করেন জামায়াত সমর্থিত ইউপি চেয়ারম্যান তোফায়েল। মুক্তাদির চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রশিবিরের ক্রীড়া সম্পাদক। আবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা তোফায়েলও ছাত্রজীবনে ছিলেন শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
ঘটনার দিন চৌমুহনী চত্বরে সমাবেশ শেষে এমপি কাজল মোবাইল ফোনে একজন মৌলভীর সঙ্গে কথা বলার বিষয়টিকেও সন্দেহের চোখে দেখছে গোয়েন্দারা। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটিও এমপি কাজলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। বিষয়টি স্বীকার করে এমপি কাজল বলেন, '২৯ সেপ্টেম্বর রামুতে ঘটনা যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল তখন ধর্মীয় উন্মাদনা থামাতেই একজন মৌলভীর সঙ্গে কথা বলেছি আমি। মুসলমানদের ধর্মীয় উত্তেজনা প্রশমন করতে তাকে ভূমিকা রাখার অনুরোধ করেছি। এ সময় আমার পাশে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও ছিলেন।' পাল্টা প্রশ্ন করে এমপি কাজল বলেন, 'এমপি হিসেবে নাশকতা নিরসন করার চেষ্টা যদি অপরাধ হয় তবে আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ দলীয় স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সারওয়ার কাজল কোথা থেকে ৩৫ কেজি ওজনের মূর্তি উদ্ধার করলেন সেটি নিয়ে কেন কোনো প্রশ্ন করা হচ্ছে না। তার থেকে এ প্রশ্নের জবাব চাইলে নতুন একটা ক্লু পেতে পারত সরকার। আবার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের দেওয়া হামলাকারীর তালিকা পর্যালোচনা করেও নেপথ্যের কিছু ব্যক্তিকে শনাক্ত করা যেত। কারণ তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বেশিরভাগই কমল ও কাজলের এলাকার লোকজন।'
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সারওয়ার কাজল বলেন, 'দুবাইয়ে পরিকল্পনার কথা ধামাচাপা দিতেই ৩৫ কেজি ওজনের মূর্তি উদ্ধারের প্রসঙ্গ তুলছেন এমপি কাজল। গোয়েন্দারা এমপির বিদেশকালীন গতিবিধি ও ঘটনার দিনের গতিবিধি মেলালে নেপথ্য নায়ককে চিহ্নিত করতে পারবে। কারণ এমপি কাজল বিএনপির লোক। আর দুবাইয়ে গিয়ে যে বৈঠক করেছেন তিনিও জামায়াতের লোক। আবার ঘটনার দিন উত্তমের ফেসবুক থেকে যে ছবিটি ডাউনলোড করেছে সে ছাত্রশিবিরের লোক।'
No comments:
Post a Comment