মামুনুর রশীদ | তারিখ: ১৯-১০-২০১২
ছোটবেলা থেকেই গৌতম বুদ্ধের চোখ দুটো আমাদের আকৃষ্ট করত। স্থির-নিশ্চল কিন্তু আহ্বানভরা চোখ দুটি যেন কথা বলত। অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর চোখ দুটো যেন নড়তে শুরু করত। সেই চোখ দুটো যখন উধাও হয়ে যায় বুদ্ধের মূর্তি থেকে, তখন কেমন লাগে? রীতিমতো ভয় লাগে—কল্পনায় দেখতে থাকি অনেক কিছু; থিয়েটারের ছাত্র হিসেবে মনে পড়ে ইদিপাসের চোখ দুটো। সে চোখ আমরা দেখিনি, কিন্তু কল্পনা করতে পারি শলাকাবিদ্ধ চোখ দুটো কেমনই বা হতে পারে। কিন্তু উখিয়া বা রামুতে কল্পনা করতে হয়নি। দুই চোখ তুলে নেওয়ার পর গৌতম বুদ্ধকে কেমন দেখায়? কী অসহায় নেত্রহীন গৌতম বুদ্ধ। রামু, উখিয়াতে গিয়েছিলাম ধ্বংসযজ্ঞ দেখার জন্য, কিন্তু ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে নেত্রহীন গৌতম বুদ্ধের মূর্তি দেখে চমকে উঠলাম, বিষণ্ন হয়ে গেলাম। মনের মধ্যে প্রশ্ন, কেন গৌতম বুদ্ধের চোখ জোড়া ওদের টার্গেটে পরিণত হলো? যদিও এক জায়গায় ছিন্নমস্তক বুদ্ধকেও দেখতে পেলাম। একজন অবশ্য বলল, চোখটা যে ধাতু দিয়ে তৈরি হয়, তা নাকি সবচেয়ে মূল্যবান। লুটেরাদের কাছে তা সত্যি মূল্যবান মনে হয়েছে।বুদ্ধের যে শায়িত মূর্তিটি আছে, ১০০ ফুট যার দৈর্ঘ্য— বিশাল হাতুড়ি দিয়ে তার ওপর আক্রমণ। আক্রমণের ফলে ফাটল ধরেছে, কিন্তু ভেঙে চুরমার করতে পারেনি। রামুর বড় মন্দিরটির হাজার বছরের পুরোনো পাণ্ডুলিপিগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ৮৩ বছরের বৃদ্ধ ভান্তে বললেন, ‘আমার এত বছরের সাধনা শেষ হয়ে গেল।’ তিনি হস্তলিপি ও পাণ্ডুলিপি উদ্ধারের একজন বিশেষজ্ঞ। ওই সব লিপিতে যা ছিল তা তিনি অনুবাদও করেছেন। সব পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
ভান্তেরা প্রাণে বেঁচেছেন, লুকিয়ে বেঁচেছেন। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষজনও প্রাণে বেঁচেছেন, লুণ্ঠিত হয়েছে তাঁদের সম্পদ। একটি ভিত্তিহীন ফেসবুকের ছবিকে কেন্দ্র করেই কি শুধু তাণ্ডব সৃষ্টি করা হলো? তাহলে বুদ্ধের চোখ উপড়ে ফেলা, হাজার বছরের তাম্রলিপি, পাণ্ডুলিপি ধ্বংস করা? নানা প্রশ্ন মনে জাগছে।
গৌতম বুদ্ধ তো মানুষ, রক্ত-মাংসের মানুষ। তিনি অহিংসার বাণী নিয়ে এসেছিলেন, যখন হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবী। পৃথিবীর এই ক্রান্তিকালেই মহামানবদের আবির্ভাব হয়। এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তাঁর প্রভাব। আমাদের পার্বত্য অঞ্চলে তাঁর বাণী এসে পৌঁছেছিল। বিপুলসংখ্যক আদিবাসী ও বাঙালি এই ধর্ম গ্রহণ করেছিল। এক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে হাজার বছর ধরে চলছিল তাদের জীবনযাপন। কিয়াংয়ের ঘণ্টাধ্বনি শান্তির সুবাতাস বয়ে আনত। মসজিদ, মন্দির, গির্জা আর কিয়াংয়ের সম্মিলিত আহ্বানে মানুষ শান্তিতে বসবাস করত।
সত্তরের দশকের মাঝামাঝি থেকেই অশান্ত হয়ে পড়ে পার্বত্য অঞ্চল। বারবারই বারুদের গন্ধে পরিবেশ আক্রান্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু বৌদ্ধবিহার বা মন্দির কখনো আক্রান্ত হয়নি। এমনকি একাত্তরে নিষ্ঠুর পাকিস্তান সেনাবাহিনীও এসব মন্দিরে আক্রমণ করেনি। আমাদের গর্বের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ভাগ্যে জুটল এক কলঙ্কতিলক। মনে পড়ে, হিন্দু শাসকেরা একদা বৌদ্ধবিহারকে আক্রমণ করেছিলেন, প্রায় কচুকাটা করেছিলেন। বৌদ্ধ ভান্তেরা তখন বাঁচার জন্য অস্ত্র ধারণের অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের সে নির্দেশ মেলেনি। কারণ, বৌদ্ধদের অস্ত্র ধারণ মানেই তার ধর্মের পতন। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে চরম ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়েছে বৌদ্ধদের। পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা অবশ্য অস্ত্র ধারণ করেছিল, কিন্তু কোনো ভান্তে বা বৌদ্ধমন্দির কখনো অংশ নেয়নি। বাংলাদেশের বিক্রমপুরের সন্তান অতীশ দীপংকর সেই তিব্বতে গিয়ে ধর্ম প্রচারে যুক্ত হয়েছিলেন।
কেন এই বৌদ্ধবিহার আক্রমণ? এটা কি শুধু মুহূর্তের উত্তেজনা বা মৌলবাদী জঙ্গিদের পরিকল্পনার অংশ? জবাব মেলে না। বিএনপির সাংসদের একক উদ্যোগ? আওয়ামী লীগের লোকদের আড়াল করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য? সম্প্রতি মিয়ানমারে মুসলমানদের ওপর আক্রমণের প্রতিশোধ? বিষয়টি অনেক অনুসন্ধানের অপেক্ষা রাখে। নিজেকে প্রশ্ন করতেই বুকটা হু হু করে ওঠে। যে মৌল আদর্শের ভিত্তিতে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, সেখান থেকে কত দূরে সরে এসেছি আমরা?
দীর্ঘ সেনাশাসন, এর মধ্যে স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার সুযোগ, বারবার সংবিধান ক্ষতবিক্ষত হওয়া, রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামের সংযোজন, মাদ্রাসা শিক্ষার নামে তৎপর বিভিন্ন গোষ্ঠীর কার্যকলাপ—এসবের মধ্যে দিয়ে কী ঘটেছে? প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে রক্তের মধ্যে একটা সাম্প্রদায়িক চেতনা কি প্রোথিত হয়ে যায়নি? এসবের জবাব কী? দ্বিদলীয় শাসনব্যবস্থায় ভোটের রাজনীতিও কি যুক্ত হয়নি? বিএনপি-জামায়াতের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কারণে একটা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হয়ে যায়নি? উখিয়াতে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতা চৌধুরী সাহেব মাত্র আটজন লোক নিয়ে শটগানের ২২টি গুলি ফুরিয়ে কি তিনি বৌদ্ধমন্দিরকে রক্ষা করেননি? রামুতে সরকারদলীয় কর্মীরা কী করলেন? প্রশাসন কী করল?
একটা উপজেলা বা গ্রাম পর্যায়ে সব নেতা-কর্মী একসঙ্গেই বসেন, কথা বলেন, সব সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেন। এত বড় একটা ঘটনা কী করে ঘটল যে সবাই জানতে পারল না? ভাবতে অবাক লাগে। শত শত লোক অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠনে অংশ নিল, তারা কি শুধুই একজোটভুক্ত? তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে অন্য জোট তাদের প্রতিরোধ করল না কেন?
অবাক লাগে, যখন প্রধানমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে বিএনপির নেতা বলেন। মওদুদ আহমদ প্রথমে আওয়ামী লীগ, পরে বিএনপি, পরে জাতীয় পার্টি এবং বর্তমানে বিএনপিতে। একজীবনে তিনি কতগুলো দলের নেতা হন? তাঁকে কোন দলের নেতা বলব? এই চরিত্রই বাংলাদেশের রাজনীতিকে প্রভাবিত করছে না? জনগণও কি এই চরিত্র অর্জন করছে?
একটা কথা স্বীকার করতেই হবে যে জনগণও আদর্শিক জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না। তাই একটা সুবিধামতো অবস্থানই নিয়ে নিচ্ছে, সে অবস্থান কতটা আদর্শিক, কতটা অসাম্প্রদায়িক—তা খোঁজার তোয়াক্কা করছে না। উখিয়ার চৌধুরী সাহেব কেন এই ঝুঁকি নিলেন, তা-ও প্রশ্ন জাগে।
রামুতে গান পাউডার, পেট্রল নিয়ে যে সহিংসতা ঘটিয়েছে, তা রাজনৈতিক দলের পারস্পরিক বিবৃতিতে শেষ হওয়া উচিত নয়। যশোরে উদীচীর বোমা হামলা, রমনার বটমূলে আক্রমণ, কমিউনিস্ট পার্টির পল্টনের ঘটনার রহস্য উন্মোচিত হয়নি। শেখ হাসিনার প্রাণনাশে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনার পুরো রহস্য এখনো ভেদ হয়নি। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডেরও কোনো গ্রহণযোগ্য সমাধান হয়নি। কেন? তদন্তকারী দলগুলো কি নানা ধরনের রাজনৈতিক চাপে বিভ্রান্ত? তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে নাগরিকদের জীবন কতটা অনিশ্চিত! দেশটা কি তাহলে নানা ধরনের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কারণে সত্য অনুসন্ধান থেকে বিরত থাকবে?
কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকার ও বিরোধী দলকে এক জায়গায় থেকে সত্য অনুসন্ধান প্রয়োজন। দুর্ভাগ্য, সে সংস্কৃতি আমাদের দেশে এখনো অবর্তমান। এসবের পরিণতিও বড় নাশকতাপূর্ণ কর্মকাণ্ড। উখিয়া, রামু, পটিয়ার ঘটনা আমাদের বৈদেশিক নীতির ওপর বড় রকমের প্রভাব ফেলবে। আমাদের অসাম্প্রদায়িক ও তথাকথিত মডারেট মুসলিম স্টেটকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত, কিন্তু ভেঙে যাওয়া অসাম্প্রদায়িক সমাজকে মেরামত করাও প্রয়োজন। চারদলীয় জোটের উসকে দেওয়া রাজনীতি এবং মহাজোটের পাল্টা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ভোটের রাজনীতির একটা কূলকিনারা হতে পারে, কিন্তু কী হবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ?
রামু থেকে ফিরে আসার পর একটা প্রশ্নই বারবার আমার এবং আমার সহযাত্রীদের বিদ্ধ করছিল যে আমরা কি সত্যিই সংখ্যালঘু? আমরা কি একেবারেই সমাজ-বিচ্ছিন্ন? সমাজের ভাবনাটা আমরা ধরতে পারছি না? সমাজটা কি ৪০ বছর পর একটা সাম্প্রদায়িক জায়গায় চলে এসেছে?
আমাদের দৌড় কি জাদুঘরের সামনে থেকে টিএসসি—বড়জোর শহীদ মিনার পর্যন্ত?
সবকিছু ছাপিয়ে গৌতম বুদ্ধের নেত্রহীন দেহটাকেই মনে পড়ছে। আমরাও তৃতীয় নয়নহীন নাগরিকে পরিণত হয়েছি? অথবা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন অন্ধ?
মামুনুর রশীদ: নাট্যব্যক্তিত্ব।
যারা হামলা প্রতিরোধ করেছিলেন তাদেরও আসামি করা হচ্ছে
লেখক: কক্সবাজারপ্রতিনিধি | শুক্রবার, ১৯ অক্টোবর ২০১২, ৪ কার্তিক ১৪১৯
উখিয়ার ঘটনায় মন্দির কমিটির হলফনামা
উখিয়ায় বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশের গ্রেফতার নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। এবার খোদ মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হলফনামা মূলে দাবি করেছেন, যে মুসলিম ব্যবসায়ী বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রক্ষায় সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন তাকেও ভাংচুর মামলার আসামি করে জেল হাজতে প্রেরণের ঘটনায় তারা বিস্মিত।
বৃহস্পতিবার দুুপুরে কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে লিখিত হলফনামা দাখিল করেন হামলার শিকার পশ্চিম রত্না শাসন তীর্থ সুদর্শন বিহারের সভাপতি মধুসূধন বড়ুয়া ও সাধারণ সম্পাদক প্রশন্ত বড়ুয়া। হলফনামায় তারা দাবি করেন, বিহারের আশপাশের দোকানের মালিক ও ভাড়াটিয়াদের তারা ব্যক্তিগতভাবে চেনেন। বিহারের পাশের হাজী আলী হোসেন মার্কেটের মালিক দরবেশ আলীকেও তারা ব্যক্তিগতভাবে চেনেন। ওই ব্যবসায়ী বড়ুয়া (বৌদ্ধ) সম্প্রদায়ের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করছিলেন এবং তাদের বিপদে-আপদে সবসময়ই এগিয়ে যেতেন। মধুসূধন বড়ুয়া ও প্রশন্ত বড়ুয়া আদালতকে বলেন, ‘৩০ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে দুর্বৃত্তরা মিছিল সহকারে সুদর্শন বিহারে হামলা করলে ব্যবসায়ী দরবেশ আলী বিহার রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন।’
আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু ওবাইদা হলফনামা দু’টি নথিভুক্ত করে অধিকতর শুনানির জন্য আগামী ২২ অক্টোবর দিন ধার্য করেন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রামু বৌদ্ধ মন্দির ও বৌদ্ধ বসতিতে এবং পরদিন উখিয়া ও টেকনাফে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এসব ঘটনায় গত বুধবার পর্যন্ত ২০টি মামলায় নাম উল্লেখ করে ৩২১ জনসহ ১৫ সহস াধিক লোককে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ২২৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মামলাগুলোতে বিপুল সংখ্যক মানুষ আসামি হওয়ার সুযোগে অনেক গ্রাম্য দালাল সাধারণ মানুষকে পুলিশের মাধ্যমে আসামি করার কথা বলে হয়রানি করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিদেশিসহ ৩ সাংবাদিককে জিজ্ঞাসাবাদ
কক্সবাজারে এক বিদেশি সাংবাদিকসহ ৩ সংবাদকর্মীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। পুলিশ দাবি করেছে, ‘সন্দেহজনক’ভাবে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করার অভিযোগে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে কয়েকঘণ্টা পর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। এরা হচ্ছেন নরওয়ে থেকে প্রকাশিত ‘অসলো টাইমস’ পত্রিকার প্রধান বার্তা সম্পাদক মুকতার হাফিদ, বাংলাদেশি বেসরকারি টিভি চ্যানেল ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যান হাসান ও মডেল প্রিয়া। বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে কক্সবাজার বিমান বন্দর থেকে তাদের আটক করা হয়। সন্ধ্যায় জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়া হয়। তারা ঢাকায় ফিরে গেছেন। কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, সন্দেহজনক গতিবিধির অভিযোগ পেয়েই ওই ৩ জনকে কক্সবাজার বিমান বন্দর থেকে পুলিশ হেফাজতে আনা হয়েছিল। তারা কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন।
তিনি জানান, জিজ্ঞাসাবাদে তারা রোহিঙ্গাদের নিয়ে প্রমাণ্যচিত্র তৈরির বিষয়টি জানিয়েছেন। তাদের পরিচয় এবং তথ্য যাচাইয়ের পর ছেড়ে দেয়া হয়।
শুক্রবার, ১৯ অক্টোবর ২০১২
আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের প্রতিবেদন রামুতে প্রশাসন ছিল নির্বিকার
স্টাফ রিপোর্টার: কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন নির্বিকার, নির্লিপ্ত ও নেতৃত্ববিহীন ছিল বলে পরিদর্শন প্রতিবেদন দিয়েছে সরকার সমর্থক সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ। রামু, টেকনাফ এবং উখিয়া পরিদর্শন শেষে ঢাকা ফিরে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে আইনজীবী পরিদর্শন দলের প্রতিবেদন তুলে ধরেন পরিষদের আহ্বায়ক ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই এলাকায় সংঘটিত ঘটনাগুলো নিছক ধর্মীয় অনুভূতির উপর আঘাতের প্রতিফলন নয়। বরং ঘটনাগুলো পূর্বপরিকল্পিত এবং আক্রমণগুলো পূর্ব ধারণাকৃত। পুলিশ সুপারের ভাষ্য অনুযায়ী রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ রাখছিলেন। সন্ধ্যা রাত থেকে এগারোটা পর্যন্ত তিনি মিটিং মিছিলের খবর পাচ্ছিলেন। ওসি পুলিশ সুপারকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, অপ্রীতিকর কোন ঘটনা ঘটবে না। কিন্তু পুলিশ সুপার নিজে বা অন্য কোন এজেন্সি এ ব্যাপারে কোন তৎপরতা গ্রহণ করেছে বলে কোন তথ্য আমরা পাইনি। বরং ভুক্তভোগীরা টেলিফোনে যোগাযোগ করে ফোর্স পাঠানোর তাগিদ ও ১৪৪ ধারা বা কারফিউ জারি করার দাবি জানানো সত্ত্বেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি বলে সকলের অভিযোগ। এমনকি ফায়ার ব্রিগেডকে ফোন করে জানালেও তারা ওই সময়ে ঘটনাস্থলে যেতে অপারগতা প্রকাশ করে। ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক বলেন তিনি গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে কোন খবর পাননি। তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারে অবস্থানরত বিজিবি’র কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বিজিবি জানায় তাদের নিযুক্ত হতে হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সদস্য সচিব সুব্রত চৌধুরী, ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী, সাবেক সম্পাদক নুরুল ইসলাম সুজন এমপি, মো. মাহবুব আলী প্রমুখ।
শুক্রবার, ১৯ অক্টোবর ২০১২, ৪ কার্তিক ১৪১৯
হামলাকারীরা সংগঠিত হতে দীর্ঘ সময় পেয়েছে, প্রশাসন ব্যর্থ
০ পরিকল্পিত হামলা, বড় রকমের ষড়যন্ত্র
০ জামায়াত-বিএনপি ও রোহিঙ্গা উগ্রবাদীরা ছিল ঘটনার নেপথ্যে, আওয়ামী লীগের কিছু লোকও ধর্মীয় উত্তেজনায় সম্পৃক্ত হয়
০ সরকারী তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেশ
০ জামায়াত-বিএনপি ও রোহিঙ্গা উগ্রবাদীরা ছিল ঘটনার নেপথ্যে, আওয়ামী লীগের কিছু লোকও ধর্মীয় উত্তেজনায় সম্পৃক্ত হয়
০ সরকারী তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেশ
শুক্রবার, ১৯ অক্টোবর ২০১২, ৪ কার্তিক ১৪১৯
রামুর ঘটনার মূল উদ্দেশ্য বিশ্বে ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা
সম্মিলিত আইনজীবী পরিষদের তদন্ত প্রতিবেদন
আইনজীবীদের টিমে যে সমস্ত নেতা ছিলেন তারা হলেন, ব্যারিস্টার এম. আমীরুল ইসলাম (আহ্বায়ক) সৈয়দ রেজাউর রহমান- সদস্য, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, সুব্রত চৌধুরী সদস্য সচিব মুনসুরুল হক চৌধুরী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর, মোঃ আব্দুল্লাহ আবু, কে, এম সাইফুদ্দিন আহম্মদ, মোঃ নুরুল ইসলাম সুজন, এমপি, মোঃ মাহবুব আলী, রকিবুল হক মিয়া রিপন, মোঃ হেলাল উদ্দিন, সৈয়দ মামুন মাহবুব, মোহাম্মদ আলী, নজিবুর রহমান, শেখ আলী আহাম্মদ খোকন, ও প্রণব সাহা।
শুক্রবার | ১৯ অক্টোবর ২০১২ |
সারোয়ার সুমন, চট্টগ্রাম ব্যুরো
কক্সবাজারে নাশকতার নেপথ্য নায়কদের চিহ্নিত না করেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হলো উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত রিপোর্ট। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটি ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত দুই শতাধিক ব্যক্তির নাম-ঠিকানা উল্লেখ করেছে তাদের রিপোর্টে। স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ আছে তদন্ত কমিটির রিপোর্টে। তবে নেপথ্যে থেকে কারা এ পরিকল্পিত নাশকতা ঘটিয়েছে, তাদের নাম-ঠিকানা বের করতে পারেনি তদন্ত কমিটি। সিআইডির ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দলও খুঁজে পায়নি ঘটনার নেপথ্য নায়কদের। এমনকি আলামত হিসেবে সংগৃহীত বিস্ফোরক জাতীয় সব পদার্থের নমুনাও এখনও পাঠানো হয়নি সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে। পাওয়া যায়নি ১৫ দিন আগে পাঠানো নমুনার ফলও। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা স্বীকার করে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার সিরাজুল ইসলাম খান বলেন, 'তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সিলগালা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। এ রিপোর্ট এখন জনসমক্ষে প্রকাশ হবে কি-না, তা সিদ্ধান্ত নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।'
অন্যদিকে
ঘটনাস্থল
থেকে বিস্ফোরকের আলামত সংগ্রহ করা সিআইডির এএসপি হ্লা সিং প্রু বলেন, 'ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত আলামত আমরা তদন্ত কর্মকর্তাকে দিয়ে এসেছি। গডফাদারদের চিহ্নিত করার স্বার্থে প্রয়োজনে এসব আলামত সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব কিংবা ঢাকার ল্যাবে পাঠাতে পারেন তদন্ত কর্মকর্তা। আমি যতটুকু জানি সংগৃহীত সব আলামত এখনও সিআইডির চট্টগ্রাম ল্যাবে পাঠানো হয়নি। দাহ্য জাতীয় কিছু পদার্থের আলামত পাঠানো হলেও সেগুলোর রিপোর্ট এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ঢাকা থেকেও আসেনি গান পাউডার জাতীয় পদার্থের চূড়ান্ত ফল। ফলে নেপথ্য নায়কদেরও চিহ্নিত করার কাজটি সম্পন্ন হয়নি।'
জানা গেছে, উচ্চ পর্যায়ের এ তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্টে সরাসরি হামলার ঘটনায় জড়িত দুই শতাধিক ব্যক্তির নাম-ঠিকানা উল্লেখ করেছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দি ও পুলিশের কাছে থাকা ভিডিও ফুটেজ দেখে সংশ্লিষ্টদের ব্যাপারে নিশ্চিত হয় তদন্ত কমিটি। কোরআন অবমাননার বিষয়টিকে পুঁজি করে সারাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করতে ঘটনাটিতে ইন্ধন দিয়েছে জামায়াত-শিবিরসহ সমমনা কয়েকটি ইসলামী দলের কর্মী সমর্থকরা। নাশকতা দমাতে বিএনপি দলীয় স্থানীয় এমপি লুৎফুর রহমান কাজল ও আওয়ামী লীগ দলীয় উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সারওয়ার কাজল চেষ্টা করলেও তাদের উদ্যোগ যথেষ্ট ছিল না। রামু থানার তৎকালীন ওসি নজিবুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবী চন্দের সঙ্গে কক্সবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসক জয়নুল বারী ও পুলিশ সুপার সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ছিল। ঘটনার গুরুত্ব তারা কেউই যথাযথভাবে অনুধাবন করতে পারেননি বলে রিপোর্টে উল্লেখ করেছে তদন্ত কমিটি।
প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পাল্টাপাল্টি দোষারোপ
রামু, টেকনাফ ও উখিয়াতে সংঘটিত ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা তদন্ত কমিটির কাছে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছেন। পুলিশ সুপার সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ঘটনা অবহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পর্যাপ্ত পুলিশ ফোর্স রামুতে পাঠিয়েছেন বলে তদন্ত কমিটির কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। পাল্টা লিখিত বক্তব্য দিয়ে তার এ দাবি অস্বীকার করেছেন রামুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবী চন্দ ও ওসি নজিবুল ইসলাম। পরে আনুষ্ঠানিকভাবেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলিশ সুপারকে ঘটনার জন্য দায়ী করে বক্তব্য দেন। এখানে তিনি নাশকতা দমাতে পুলিশ সুপার মাত্র ১০ জন অতিরিক্ত পুলিশ রামুতে পাঠিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। তদন্ত কমিটির কাছে পুলিশ সুপার ৪০ জন অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনার রাতে কক্সবাজার থেকে রামুতে পাঠিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এমন বক্তব্যই সমন্বয়হীনতা প্রমাণ করে বলে মন্তব্য করেছে তদন্ত কমিটি।
হামলাতে ইন্ধন দিয়েছে জনপ্রতিনিধিরা
রামুর পুলিশ প্রশাসন ঘটনার রাতে চৌমুহনী চত্বরে অনুষ্ঠিত সমাবেশ নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও অন্যান্য দুর্গম এলাকায় তখন দুষ্কৃতকারীরা সংগঠিত হয়েছে। দুষ্কৃতকারীদের পরিকল্পনা ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা। ভিডিও ফুটেজে অনেক জনপ্রতিনিধিকে বিক্ষোভ মিছিলের সামনে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি। পরে এসব মিছিল থেকেই একটি অংশ ভাংচুর ও অগি্নসংযোগের কাজে নেতৃত্ব দেয়। জনপ্রতিনিধিরা তখন তাদের নিবৃত্ত করতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। ততক্ষণে বাইরে থেকে বিভিন্ন যানবাহনে করে বহিরাগতরা এসে নেতৃত্ব দেয় ভাংচুরে। বিএনপির স্থানীয় সাংসদ লুৎফুর রহমান কাজল ও উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সারওয়ার কাজল চৌমুহনী চত্বরে বিক্ষোভ দমনে চেষ্টা করেছিলেন। পরে যখন বিক্ষোভ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তখন তারা নিষ্ক্রিয় ছিলেন। দায় এড়াতে বিএনপির সাংসদ চলে যান রামু সদরে। উপজেলা চেয়ারম্যান ১৪৪ ধারা জারি করতে প্রশাসনকে অনুরোধ করলেও সেখানে সমন্বয়হীনতা থাকায় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে দেরি হয়েছে বলে তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে।
আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা ছিল আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে
তদন্ত কমিটিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে ঘটনার দিন স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তারের বিষয়টি কাজ করায় নাশকতা বিস্তৃত হয়েছে। বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা সাইমুম সরওয়ার কমল সম্পর্কে ভাই হলেও এলাকার আধিপত্য নিয়ে তাদের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ রয়েছে। এ ইস্যুটিকে কাজে লাগিয়ে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যানকে বিপাকে ফেলতে চেয়েছে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। তাই বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মানুষজনকে সংগঠিত করে কমলের লোকজন। কাজলের লোকজন সেটি নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। দুই ভাইয়ের এ কোন্দলকে পুঁজি করে নাশকতার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে জামায়াত-শিবির ও ইসলামী ঐক্যজোটের কিছু নেতাকর্মী। তারা এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ব্যবহার করেছে বিএনপিপন্থি স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধিকেও।
আড়ালে থেকে গেছে বিস্ফোরক সংগ্রহকারী গডফাদাররা
নেপথ্যের গডফাদারদের ধরতে রাসায়নিক বিশেষজ্ঞকে নিয়ে সিআইডির ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থলে যায়। পাঁচ সদস্যের এ বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থল থেকে গান পাউডার, ককটেল, পেট্রোলসহ বিভিন্ন বিস্ফোরকের আলামত সংগ্রহ করে। পরীক্ষার জন্য এসব আলামত তদন্ত কর্মকর্তাদের দিয়ে আসে সিআইডির নেতৃত্বাধীন এ দল। সংগৃহীত এসব আলামতের সবকিছু এখনও পরীক্ষার জন্য পাঠাননি তদন্ত কর্মকর্তারা। কিছু দাহ্য পদার্থের আলামত সিআইডির চট্টগ্রাম ল্যাবে পাঠানো হলেও সেগুলোর পরীক্ষা এখনও সম্পন্ন হয়নি। আবার গান পাউডার শনাক্ত করতে সংগৃহীত আলামত আরও ১৫ দিন আগে ঢাকায় পাঠানো হলেও পাওয়া যায়নি সেগুলোর ফলাফল। ফলে পরিকল্পিত এ নাশকতায় আসলে গান পাউডার কিংবা ককটেলের মতো বিস্ফোরক ব্যবহৃত হয়েছে কি-না, হলে এগুলো কোথা থেকে এসেছে, কারা এনেছে_ গুরুত্বপূর্ণ এসব প্রশ্ন রয়ে গেছে অজানা। সিআইডির ফরেনসিক দলে থাকা এএসপি হ্লা সিং প্রু বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, 'ঘটনার নেপথ্য নায়কদের ধরতে হলে বিস্ফোরক জাতীয় পদার্থের ফলাফল পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এ কাজটি করবেন তদন্ত কর্মকর্তারা। তারা প্রয়োজন মনে করলে সিআইডি কেবল কোনো বিষয়ে তাদের সাহায্য করবে।' গডফাদারদের চিহ্নিত করার দায় এভাবে একজন আরেকজনের ওপরে চাপানোয় নেপথ্য নায়করা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির মহাসচিব আদর্শ কুমার বড়ূয়া।
অহিংস যাদের পরম ধর্ম সেই বৌদ্ধরা আক্রান্ত হয়ে বাস্তুভিটা বিচ্যুত হলো এবং একজন বৃদ্ধা নিহত হলো নিজের দেশ নিজের মাতৃভূমিতে তাদের দ্ধারা, যাদের পরম ধর্ম শান্তি।এই আক্রমনটা যদি কোন রাজনৈতিক কূটকৌশলও হয়,এবং তাতে যদি মুসলমান,হিন্দু এমনকি যদি বৌদ্ধ ধর্মালম্বীও থাকে নিশ্চিত ভাবে তারা তাদের স্ব স্ব ধর্ম থেকে অবশ্যই বিচ্যুত হয়েছেন।কারন কোন ধর্মই অন্য ধর্মকে আঘাত হানা সমর্থন করে না।
আর যদি মুসলমান হয় তারা মুসলিম সম্প্রদায়কে এবং ইসলামকে অপমান করেছেন কারন ইসলাম এ ধরনের ধংসাত্বক কাজ কোন অবস্হাতেই সমর্থন করে না বরং এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য সুস্পষ্ট ভাবে বলা আছে।
যে ধর্মর মানুষ সৃষ্টিকর্তাকে যে নামেই ডাকুক সারা বিশ্বের সব ধর্মের ধর্মপ্রান মানুষরা সৃষ্টিকর্তা যে একশ্বর এবং শেষ বিচারের মালিক তা বিশ্বাস করে।
যে ধর্মর মানুষ সৃষ্টিকর্তাকে যে নামেই ডাকুক সারা বিশ্বের সব ধর্মের ধর্মপ্রান মানুষরা সৃষ্টিকর্তা যে একশ্বর এবং শেষ বিচারের মালিক তা বিশ্বাস করে।
সৃষ্টিকর্তা ইচ্ছা করলে এক নিমেষে পৃথিবি ধংস করে দিতে পারে। তিনি তার সব সৃষ্টির, এমনকি তাঁর প্রতি অবিশ্বাসীদের প্রতিও তিঁনি দয়াময়, তাদের রুটি রোজগারের ব্যবস্হা তিনিই করেন অথচ তাঁরই সৃষ্টি মানুষ ধর্মের নামে ধংস চালিয়েই যাচ্ছে।নিজের ধর্মের প্রতি অন্যের অশোভন আচরন যদি অপমানকর হয় তাহলে অন্যের ধর্মের প্রতি অশোভন আচরনও তেমনি হওয়ার কথা।
আশরাফুল মখলুকাত বলতে সৃষ্টিকর্তা শুধু মুসলমানের কথা বলেন নি, সারা বিশ্বের সমস্ত মানব সম্প্রদায়ের কথা বলেছেন, বিশ্বের প্রতিটি ধর্মের মানুষের কথা বলেছেন,এমনকি তাঁর প্রতি অবিশ্বাসিদের কথাও বলেছেন।
ধর্মিয় বিশ্বাসের বিচার করার ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কারও নেই।
তাহলে ওরা কারা যারা সারা বিশ্বে ধর্মের নামে ধংসলীলা চালিয়ে যাচ্ছে?ধর্মিয় প্রতিষ্ঠান ধংস করছে?
সহিংসতার আশ্রয় নিয়ে শান্তির ধর্ম ইসলামকে একটি সন্ত্রাসি ধর্ম হিসাবে পরিচিতি দিতে চাচ্ছে।
যে অদৃশ্য শক্তি একশ ফিট লম্বা বৌদ্ধদের মূর্তিটি রক্ষা করেছেন সেই অদৃশ্য শক্তিই মহাবিশ্ব নিয়ন্ত্রন করেন। তিঁনি সৃষ্টিকর্তা।বিশ্বাসী,অবিশ্বাসী সবাইকে তিনিই রক্ষা করেন।
স্রষ্টার বিচারিক ক্ষমতা কি তার সৃষ্টি নিজের হাতে তুলে নিতে চাচ্ছে ?
তবে কি কিছু মানুষ নিজেদেরকে সৃষ্টিকর্তার চেয়েও ক্ষমতাশালী মনে করে?
আবহমান কাল ধরে যে সামাজিক ও ধর্মিয় সম্প্রীতি এ দেশের অহংকার তাতে কেউ বিষবাষ্প ঢেলে দিতে চাচ্ছে।এখনি এদের রুখতে না পারলে একদিন এই বিষবাষ্প পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে বিকল করে দিতে পারে।
আশরাফুল মখলুকাত বলতে সৃষ্টিকর্তা শুধু মুসলমানের কথা বলেন নি, সারা বিশ্বের সমস্ত মানব সম্প্রদায়ের কথা বলেছেন, বিশ্বের প্রতিটি ধর্মের মানুষের কথা বলেছেন,এমনকি তাঁর প্রতি অবিশ্বাসিদের কথাও বলেছেন।
ধর্মিয় বিশ্বাসের বিচার করার ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কারও নেই।
তাহলে ওরা কারা যারা সারা বিশ্বে ধর্মের নামে ধংসলীলা চালিয়ে যাচ্ছে?ধর্মিয় প্রতিষ্ঠান ধংস করছে?
সহিংসতার আশ্রয় নিয়ে শান্তির ধর্ম ইসলামকে একটি সন্ত্রাসি ধর্ম হিসাবে পরিচিতি দিতে চাচ্ছে।
যে অদৃশ্য শক্তি একশ ফিট লম্বা বৌদ্ধদের মূর্তিটি রক্ষা করেছেন সেই অদৃশ্য শক্তিই মহাবিশ্ব নিয়ন্ত্রন করেন। তিঁনি সৃষ্টিকর্তা।বিশ্বাসী,অবিশ্বাসী সবাইকে তিনিই রক্ষা করেন।
স্রষ্টার বিচারিক ক্ষমতা কি তার সৃষ্টি নিজের হাতে তুলে নিতে চাচ্ছে ?
তবে কি কিছু মানুষ নিজেদেরকে সৃষ্টিকর্তার চেয়েও ক্ষমতাশালী মনে করে?
আবহমান কাল ধরে যে সামাজিক ও ধর্মিয় সম্প্রীতি এ দেশের অহংকার তাতে কেউ বিষবাষ্প ঢেলে দিতে চাচ্ছে।এখনি এদের রুখতে না পারলে একদিন এই বিষবাষ্প পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে বিকল করে দিতে পারে।
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ অক্টোবর ২০১২ ব্লগ
সৃষ্টিকর্তা কি ছোটোলোক? (পর্ব-১)
ক্যাটাগরী:
সব ধর্মেই বলা হয়ে থাকে সৃষ্টিকর্তা সর্ব শক্তিমান। তিনি কি কোনো জীব? না তিনি কোনো জীব নয়। তিনি কি মানুষ? জীবই যদি না হয়, তাহলে মানুষ তো নয়ই। তিনি কোনো জীব নয়, মানুষ নয়। তাহলে আমরা ‘তাকে’ ‘তিনি’ বলে সম্বোধন করি কেন? আর সৃষ্টিকর্তা শব্দটাই তো ঠিক নেই। কারন কর্তা মানে হচ্ছে ব্যক্তি (মানুষ)। সৃষ্টিকর্তার মানে দাঁড়ায়, কোনো ’ব্যক্তি’ যিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন।
সৃষ্টিকর্তার পরিবর্তে আমরা বলতে পারি সর্ব শক্তিমান কোনো ‘জিনিস’ বা ‘কিছু’। এবং এখানেই আমাদের থেমে যেতে হবে। ওই ‘জিনিস’ সম্পর্কে আর কিছু বলা যাবে না। কারন সর্ব শক্তিমান কেনো ‘জিনিস’ বা ‘কিছু’ সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণাই নেই। মানুষ সর্ব শক্তিমান নয়। আর ওখানেই না থেমে যদি ওই ’জিনিস’ সম্পর্কে আর কিছু বলা হয়, সেটা মানবিক পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয়।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো প্রতিষ্ঠিত কোনো ধর্মই এখানে থেমে যায়নি। সর্ব শক্তিমান ‘জিনিস’ বা ‘কিছুকে’ প্রতিটা ধর্মই মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করেছে। জিনিসটার সব কর্মকাণ্ডই মানুষের মতো। সর্ব শক্তিমান ওই জিনিসের মানবিক অনুভূতি রয়েছে। যেমন উপাসনা করলে তিনি সন্তুষ্ট হন। সন্তুষ্ট হওয়াটা মানবিক অনুভূতি। যার অতুষ্টি আছে তাঁর মধ্যেই সন্তুষ্টি অনুভূতি রয়েছে। মানুষের অতুষ্টি রয়েছে। কারন মানুষসহ সব জীবকেই সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়।
সর্ব শক্তিমান জিনিসের মধ্যেও কি অতুষ্টি রয়েছে? ধর্ম অনুযায়ী ‘জিনিস’টার মধ্যে মানবিক অনুভূতিও রয়েছে। সর্বোপরি প্রতিষ্ঠিত ধর্মগুলো ওই সর্বশক্তিমান জিনিসটাকে পরিপূর্ণ ’মানুষ’ বানিয়েছে। শুধু তাই নয়, মানুষটাকে বানানো হয়েছে ছোটলোক মানুষ হিসেবে।
এবার বিষয়টাকে ন্যাংটা করে বলি, সর্ব শক্তিমান ওই ‘জিনিস’টাকে বলা হয় দয়ালু। দয়ালু অনুভূতি কি মানবিক গুণ নয়? ইসলামে যে ৯৯টা গুণের কথা বলা হয়েছে তাঁর প্রতিটা গুণই মানবিক গুণ। জিনিসটা সমগ্র মহাবিশ্ব পরিচালণাও করেন মানুষের মতো। প্রধানমন্ত্রীর যেমন দেশ পরিচালনার জন্য মন্ত্রী এমপি ও আমলা লাগে। তেমনি সর্ব শক্তিমান ওই জিনিসেরও মহাবিশ্ব পরিচালনা করতে আমলা (ফেরেশতা, দেবদেবী) লাগে। ওই ‘জিনিস’টা প্রতিটা সেক্টরে আমলা রেখে দিয়েছে। মেঘবৃষ্টির জন্য মিকাইল। পাপ পূন্য লেখার জন্য কীরামান কাতিবিন। হিন্দু ধর্মে যেমন বিদ্যার দেবী স্বরস্বতী।
সর্ব শক্তিমান জিনিসের আবার আমলা লাগবে কেন বাপু? সর্ব শক্তিমান কোনো জিনিসের তো এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য আমলা লাগার কথা নয়। আর আমলা যদি লাগেই তাহলে জিনিসটা সর্ব শক্তিমান হয় কিভাবে? সব প্রতিষ্ঠিত ধর্মের ভাষ্য অনুযায়ী, সর্বশক্তিমান ‘জিনিস’টা চলে আমলাতান্ত্রিক সিস্টেমে। এভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে সবগুলো প্রতিষ্ঠিত ধর্মই ’জিনিস’টাকে পরিপূর্ণ মানুষ বানিয়েছে। এবং মানুষটা ছোটোলোক।
ছোটলোক কেন?
একটা গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। গল্পটা আমি একজনের কাছ থেকে শুনেছি। সত্যতা কতটুকু জানি না। গল্পটা হলো, আহমদ শরীফ একবার তাঁর এক পরিচিত আস্তিক বন্ধুর সঙ্গে গল্প করছিলেন। হঠাৎ এক প্রসঙ্গে আহমদ শরীফ তাঁর ওই বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আচ্ছা, বিভিন্ন সময়ে তোমরা যে এতো ‘আল্লাহু’ ‘আল্লাহু’ মানে যিকর করো, এতে কি আল্লার রাগ হয় না? বন্ধুটি তখন প্রশ্ন করলো, কেন? আল্লাহর রাগ হবে কেন? তখন আহমদ শরীফ বললেন, ‘আমার সামনে কেউ যদি ১০ বার ‘আহমদ শরীফ’ ‘আহমদ শরীফ’ বলতে থাকে, আমি তাকে থাপ্পড় দিয়ে ফেলে দিতাম। এতোবার ডাকাডাকির কি আছে?
আশা করি গল্পটার মধ্য বিষয়টা বেশ খানিকটা ন্যাংটা হয়েছে। তথাপি বিষয়টাকে আমি আর্ও একটু ন্যাংটা করতে চাই। ধরা যাক, কোনো অপরিচিত ব্যক্তি আমার কাছে কিছুই চায় নি। তবু আমি তাকে মজার কোনো জিনিস দিলাম। এবং আমি মনে মনে চাইলাম ওই ব্যক্তি সারা জীবন আমার নাম নিক এবং আমার স্তুতি করে যাক। আমি কি তাহলে ছোটলোক মানসিকতার লোক নই? এবং যে মানুষটাকে আমি জিনিসটা দিয়েছিলাম সে যদি জানতে পারে আমার মানসিকতা এ ধরনের। তাহলে ওই মানুষটার ন্যূনতম ব্যক্তিত্ব থাকলে বলবে, তোর এই জিনিস কি আমি চেয়েছিলাম? নে ধর, ফিরিয়ে দিলাম।
আমরা কি সর্ব শক্তিমান ওই জিনিসের কাছে বলেছি বা চেয়েছি আমাকে জীবন দিয়ে দুনিয়াতে পাঠাতে? অনেক ধর্ম বলতে পারে যে, হ্যা আমরা চেয়েছি, তাই পঠিয়েছে। সেক্ষেত্রে আমার বক্তব্য চাইলেও তো আমাদের মনে নেই। কারোরই যদি মনেই না থাকে তাহলে ওই চাওয়ার কি কোনো দাম আছে? মানলাম এমন কিছু আছে যা আমাদের সৃষ্টি করেছে। তো কি হয়েছে? তার এতো পূজা অর্চনা বা উপাসনা পাওয়ার এতো খায়েশ তো ছোটলোক মানসিকতারই ইঙ্গিত বহন করে। আমরাও সর্ব শক্তিমান জিনিসটাকে বলতে পারি, তোর এই জীবন কি আমরা চেয়েছি? তুই যদি দিয়েই থাকিস তো ভালো মনে দে। এতো পূজা অর্চনা পাওয়ার খায়েশ তোর কেন?
আবার সৃষ্টিকারী ওই জিনিসের সঙ্গে মানুষের সব সম্পর্কই চাওয়াপাওয়া আর ভয় ভীতির সম্পর্ক। আমার এই পোস্টটি যারা পাঠ করছেন তাদের অনেকেই ভয়ে কয়েক বার নাউজুবিল্লাহ পাঠ করেছেন আমি নিশ্চিত। ধর্মে বলা হয়, একবার অমুক দোয়া পাঠ করলে বা অমুক কাজ করলে এতগুণ সওয়াব। বা অমুক কাজ করলে এতো হাজার বছর নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে। এসব কি কথা গো বাপু?
সর্ব শক্তিমান জিনিসকে ছোটলোক মানুষ বানিয়েছে মূলত আস্তিকেরা। জিনিসটাকে ছোট করে দেখেছে আস্তিকেরা। যুগ যুগ ধরে বহু অশান্তি, বহু যুদ্ধের মূলে রয়েছে ধর্ম। সেটা ইতিহাস বলে। নাস্তিকেরা আর যাই হোক সর্ব শক্তিমান জিনিসটাকে অন্তত ছোটোলোক মানুষ বানায়নি।
‘মা’ উপন্যাসে ম্যক্সিম গোর্কি একটা কথা লিখেছিলেন, সৃষ্টিকর্তাকে নতুন করে সৃষ্টি করতে হবে যে সৃষ্টিকর্তা হবে মানুষের বন্ধু।
আমার মামার এক নাস্তিক বন্ধু ছিলেন, নাম তাঁর সেলিম। একদিন মামার বাড়িতে খেতে বসেছি, এমন সময় তিনি হাজির হলেন। তিনিও খেতে বসে গেলেন। যথারীতি ধর্ম প্রসঙ্গ আসলো। তিনি ধর্ম সম্পর্কে কিছু কটু বাক্য বর্ষণ করলেন। এমন সময় আমার ধামিক মামী হায় হায় করা শুরু করলেন। মামির নাম আসমানী।
এক পর্যায়ে সেলিম মামা বললেন, শোন আসমানী বেগম যদি বেহেশতো-দোযথ থেকেই থাকে, তাহলে বলতো তুই আগে বেহেশতে যাবি নাকি আমি যাব? মামি চুপ।
সেলিম মামা বললেন, হাশরের ময়দানে আল্লাহ তোকে বলবে, আসমানী বেগম.., জন্মের পর থেকে তোর পরিবার-সমাজ বলেছে, ‘আমি আছি। আমি দয়ালু। তাই তুই আমাকে সেভাবেই মেনেছিস, আমাকে ভালো ভেবেছিস।’ কিন্তু তোর পরিবার এবং তোর সমাজ যদি বলতো আমি শয়তান। তাহলে তুই তো আমাকে শয়তানই ভাবতিস। তোর তো নিজের কোনো আক্কেলবুদ্ধিই হয়নি। আমি সমগ্র মানবজাতিকে প্রথমে পড়াশোনা করতে বলেছি। জ্ঞানার্জনের কথা বলেছি। তুই তো আমার প্রথম নির্দেশই পালন করিস নাই। তুই তো আমাকে বিচার করার ক্ষমতাই অর্জন করিস নাই ।
কিন্তু এই সেলিম ছেলেটি পড়াশোনা করেছে। জ্ঞানার্জন করেছে। নিজের বিবেককে জাগ্রত করার চেষ্টা করেছে। পরে, ওর মনে হয়েছে, আমি নেই। তাতে কি হইছে? আর যাইহোক কারও ক্ষতি করে নাই। গাধা আস্তিকের চেয়ে বিবেকবান নাস্তিক আমার কাছে শ্রেষ্ঠ। কাজ্যেই সেলিম তুমি যাও, বেহেশতে গিয়ে ফূর্তিফার্তা শুরু করো। এদিকে দেখি আসমানীর মতো ছাগলদের কি ব্যবস্থা করা যায়!!
সর্ব শক্তিমানের ক্ষেত্রে ‘জিনিস’ বা ‘কিছু’ শব্দটাও আসলে প্রযোজ্য নয়। কারন ‘জিনিস বা ‘কিছু’ বলতে বললে তাঁর আকার-আকৃতি বোঝায়। কিন্তু সৃষ্টিকারী ওই জিনিসের তো আকার-আকৃতি নেই। তাহলে কি বলা যায়? স্রষ্টা? না স্রষ্টা বললেও সক্রিয় কোনো কিছুর অস্তিত্ব বোঝা যায়। তাহলে? সর্বশক্তিমান থেকে আমরা ওই জিনিসটাকে শুধু ‘শক্তি’ বলতে পারি। শক্তির কোনো আকার-আকৃতি নেই। এবং শক্তির নিত্যতা বিধি অনুযায়ীও শক্তি সর্ব শক্তিমান। যার কোনো ধ্বংস নেই। যার কোনো স্রষ্টা নেই। এবং আমার এখনকার ধারণা অনুযায়ী জগতে সর্ব শক্তিমান ওই জিনিসটা হলো শক্তি। যা সব পদার্থের মধ্যে বিদ্যমান। সব কিছুর মধ্যেই শক্তি বিরাজমান। শক্তিকে পূজা করার কিছু নেই।
মানুষই সর্ব শক্তিমান তথা শক্তির স্বরূপ দিয়েছে মানবিকভাবে। ধর্ম অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তার মানবিক অনুভূতি ও সত্ত্বা রয়েছে, কিন্তু দুনিয়ার কোনো অমানবিক পরিস্থিতিতে তার কোনো তৎপরতা দেখা যায় না। অনেক শিশু পাপ করার আগে দুনিয়াতেই জন্মে খোঁড়া, অন্ধ ও বিকলাঙ্গ হয়ে। ধর্মের নামে সংঘর্ষে বিপুল মানুষ নিহত হয়। কোথায় থাকে তখন ঈশ্বরের মানবিক অনুভূতি ?
চলবে…..।
বিশেষ দ্রব্য: পোস্টটিতে সুনির্দিষ্ট কোনো ধর্ম নিয়েও আলোচনা করা হয়নি। আলোচনা করা হয়েছে সৃষ্টিকর্তার মানসিক সত্ত্বা নিয়ে। কাজেই কোনো ধর্মই এখানে আঘাতপ্রাপ্ত হয়নি। কাজেই যেচে এসে ব্যক্তিগত আক্রমণ কাম্য নয়। আর লেখাটায় কোনো সিদ্ধান্ত নেই।
একই সঙ্গে যারা আগে পড়েননি তাদের আমার আর একটি পোস্ট পড়ার আহবান জানাই -
Friday, Oct 19th, 2012
ঈশ্বর আল্লাহ তেরে নাম,সব কো সুমতি দে ভগবান
ফ রি দু জ্জা মা ন
রামু-উখিয়া-টেকনাফ-পটিয়া ধ্বংসযজ্ঞের বিচার চেয়ে বাঙালি আজ রাস্তায় রাস্তায় মানববন্ধন করছে। তাঁরা বুকে ধারণ করছেন-"আমরা হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান যতসত্য ;তার চেয়ে অধিক সত্য আমরা বাঙালি। বাংলার হিন্দু, বাংলার মুসলিম, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খ্রিষ্টান আমরা সবাই বাঙালি। সবার উপরে মানুষ সত্য তার উপরে নাই। হিন্দু না ওরা মুসলিম এটা জিজ্ঞাসি কোন জন, কান্ডারি বল ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মার।” হাজার বছর ধরে এ ভূখন্ডে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান বসবাস করে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে একটি অসাম্প্রদায়িক স্বাধীন স্বার্বভৌম ভাষারাষ্ট্র সৃষ্টি করেছে। মানবতা ও স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী এ ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিবাদ জানানোর জন্য আজ পথে প্রান্তরে শোভাযাত্রা। যে কোন উপাষণালয়ের উপর আঘাত বাঙালি জাতির উপরই আঘাত। সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি অটুট রাখতেই আমাদেরকে এ আঘাতকে প্রতিহত করতে হবে। বিপন্ন মানবতার ক্রন্দনে বিশ্ববিবেকের কাছে আমাদের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। নিকট অতীতে আমরা আফগানিস্তানে তালেবান কর্তৃক বুদ্ধ বিগ্রহ ধ্বংসের দৃশ্য দেখে হতবাক হয়েছি। এমনটা বাংলাদেশে আমরা হতে দেব না। জঙ্গি দানব রাষ্ট্রেব বিরুদ্ধে আমাদের এ সংগ্রামে পরাজিত হওয়া মানে প্রগতিশীলতার যবনিকাপাত। আমাদের পিট আজ দেয়ালে ঠেকে গেছে। সাম্প্রদায়িকতার বিষ দাঁত ভাঙার এখনই সময়। জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক এমন দীক্ষায় দীক্ষিত হওয়ার মন্ত্র বড় বেশী প্রয়োজন আজ। কবির কথাই বলতে হয়-দিকে দিকে মানবাত্মার ক্রন্দন। রূহের ঝরকায় আর্ত্মনাদ। ক্ষমতা ভবনের প্রহরীরা তন্দ্রাচ্ছন্ন যেন। মানব সম্পর্কের বুনটে ফাটল। ধর্মের বেসাতি বদগুণ মানবতা করিতেছে খুন। উড়ে যায়- প্রেম, সংহতি আত্মীয়তা – আস্থার হীরামন পাখি কথকতা। প্রাণ ভোমরার দেহে কতো ক্ষত এঁকে চলে পাপ।ধ্বংস্তুপের নিচে পোড়া বুদ্ধের বিগ্রহ যেন পুড়ে যায় শান্তির রোম। কালের নিরোরা লোফে ধর্মান্ধের ওম। গান্ধীর সুরে শুধু সেই পরম সত্য চেতনা- ঈশ্বর আল্লাহ তেরে নাম/ সব কো সুমতি দে ভগবান।
No comments:
Post a Comment