Monday, October 8, 2012

রোহিঙ্গা ও বৌদ্ধদের অভিন্ন নিয়তি

মশিউল আলম | তারিখ: ০৮-১০-২০১২




কক্সবাজার জেলার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রতিক হামলার সঙ্গে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর গত জুনে যে হামলা হয়েছিল, তার কোনো সম্পর্ক আছে কি না? এ রকম প্রশ্ন শোনা যাচ্ছে। গত শনিবার রাতে বিবিসি বাংলা বিভাগ পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনিকে প্রশ্ন করেছিল, রামুর হামলা আরাকানের সহিংসতার প্রতিক্রিয়া কি না? দীপু মনি বললেন, তিনি তা মনে করেন না। তাঁর বক্তব্য এ রকম, প্রতিক্রিয়াই যদি হতো, তাহলে রামুর ঘটনাটি তখনই, অর্থাৎ জুন মাসেই ঘটত। কিন্তু রামুতে বৌদ্ধরা আক্রান্ত হয়েছেন আরাকানের সহিংসতার তিন মাস পর। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিবিসির কাছে মন্তব্য করেছেন, দেশকে অস্থিতিশীল করা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ায় বাধাবিঘ্ন সৃষ্টি করা ইত্যাদি অপচেষ্টার অংশ হিসেবে রামুতে এ ঘটনা পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে।
আরাকানের সহিংসতার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া এটি নয় বটে। কিন্তু বিলম্বিত প্রতিক্রিয়াও যে নয়, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। এক বৌদ্ধ তরুণের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ট্যাগ করা ছবি প্রত্যক্ষ উপলক্ষ হিসেবে কাজ করেছে বটে, কিন্তু সেই উপলক্ষটি যে পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়নি তা-ও তো হলফ করে বলা যায় না। স্বতঃস্ফূর্ত গণ-উত্তেজনা কিছু ছিল, সুপরিকল্পিত উদ্যোগও ছিল। কক্সবাজার জেলার জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল জিএম রহিমুল্লাহ গত বুধবার কক্সবাজার শহরে আমাকে বলেন, “‘বার্মা’ ইস্যুতে রোহিঙ্গারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, কিন্তু আমরা তাদের প্রশ্রয় দিইনি।” এ থেকে এই আভাস স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয়প্রাপ্ত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কোনো না কোনো অংশ মিয়ানমারের সহিংসতার জবাবে এই দেশে কিছু একটা ঘটানোর চেষ্টা করছিল, সে জন্য জামায়াতে ইসলামীর সহযোগিতা চেয়েছিল। জামায়াতে ইসলামীর কক্সবাজারের নেতা বলছেন, তাঁরা রোহিঙ্গাদের প্রশ্রয় দেননি। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিএনপি-জামায়াত রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করেছে, যদিও এ বক্তব্যের সমর্থনে সরকার কোনো তথ্য-প্রমাণ এখনো তুলে ধরেনি।
রামু ও উখিয়া অঞ্চল ঘুরে আমরা রোহিঙ্গাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পেয়েছি। রামুতে আক্রমণকারীদের বড় অংশ এসেছিলেন বাইরে থেকে, বিভিন্ন যানবাহনে করে তাঁদের নিয়ে আসা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোহিঙ্গা ছিলেন, মাদ্রাসাছাত্র ছিলেন—এ রকম অভিযোগ আমরা রামুতে শুনেছি। উখিয়ায় আমরা শুনেছি, আক্রমণকারীরা বাইরে থেকে আসেননি। তাঁরা আশপাশের গ্রামগুলোর মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ, তাঁদের মধ্যে রোহিঙ্গারাও ছিলেন। এই রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ মিয়ানমার থেকে এসেছেন অনেক আগে, বিভিন্ন গ্রামে তাঁরা বিয়েশাদি করে স্থায়ী বসত গড়ে নিয়েছেন। উখিয়ায় একটি কলেজের অধ্যক্ষ আমাদের বললেন, ওই অঞ্চলের অনেক মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন রোহিঙ্গা। উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের বাইরে প্রচুরসংখ্যক অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থীর বাস; তাঁদের অনেকেই মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে নানা ধরনের অপরাধবৃত্তির সঙ্গে জড়িত—এমন অভিযোগও আমরা শুনতে পেয়েছি।
মিয়ানমারে অত্যাচার-নিপীড়নের শিকার হয়ে ভিটেমাটি ছেড়ে রোহিঙ্গারা এ দেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। এমনিতেই বাস্তুচ্যুত মানুষের মনে ঘৃণা-জিঘাংসা কাজ করে, উপরন্তু এই দেশে তাঁদের জীবন-জীবিকার সুবন্দোবস্ত হয়নি। তাঁদের জীবন অত্যন্ত কষ্টের, প্রায় দিশেহারা দশা। এমন পরিস্থিতিতে অপরাধবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়া, কিংবা বেআইনি, সহিংস, নাশকতামূলক তৎপরতায় ব্যবহূত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর হামলায় কোনো গোষ্ঠী তাঁদের ব্যবহার করেছে কি না সেটা তদন্তের বিষয়; কিন্তু হামলাকারীদের মধ্যে রোহিঙ্গারা যে ছিলেন, তা আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বৌদ্ধ ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের অনেক মানুষের মুখে শুনতে পেয়েছি। আরাকানের বৌদ্ধদের হাতে বিতাড়িত হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। এখানে এসে তাঁরা দেখতে পেয়েছেন, এই দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায় দুর্বল ও নিরীহ, এখানে বৌদ্ধদের অবস্থা ঠিক তেমনই নাজুক, যেমনটি আরাকানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের। আরাকানে তাঁদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করেছেন সেখানকার বৌদ্ধরা। এখানে তাঁদের ভিটেমাটি প্রয়োজন। উখিয়ায় এই বিষয়টিই আমাদের বেশি করে মনে হয়েছে। সেখানকার রোহিঙ্গাদের নজর পড়েছে দরিদ্র, নিরীহ, সংখ্যালঘু বৌদ্ধদের ভিটেমাটির ওপর। ত্রাস সৃষ্টি করে তাঁদের তাড়িয়ে দিয়েই কেবল তাঁদের ভিটেমাটি দখল করা যায়। পৃথিবীর যেখানেই জাতি-ধর্মগত বিরোধ থেকে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে, সেখানেই ভূমি কাজ করেছে অন্যতম প্রধান ফ্যাক্টর হিসেবে।
আরাকানের রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ও আশ্রয় পাওয়া আজকের ঘটনা নয়। এই দেশে তাঁরা বাস করছেন অন্তত তিন দশক ধরে। কিন্তু আগে এ রকম ঘটনা কখনো ঘটেনি। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী বা শরণার্থীদের বিরুদ্ধে যত রকমের বেআইনি কর্মকাণ্ডের অভিযোগই থাক না কেন, এ দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায় তাঁদের দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন—এ রকম আশঙ্কা অন্তত বৌদ্ধদের মনে আগে কখনো জাগেনি। আক্রান্ত হওয়ার পরে অনেক বৌদ্ধ আমাদের বলেছেন, তাঁরা জীবনে কখনো কল্পনাও করেননি যে এ রকম ঘটতে পারে। তা হলে প্রশ্ন জাগে, কেন এ ঘটনা ঘটল? এ দেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অনুপ্রবেশ, আশ্রয়, বসবাস ও জীবন-জীবিকা—সব মিলিয়ে যে সমস্যাময় প্রক্রিয়া, সেটি কি এমনভাবে ঘনীভূত ও পরিপক্ব হয়েছে যে তা থেকে আরেক নতুন সমস্যা সৃষ্টি অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে? অথবা এই অঞ্চলের জনমিতির সমীকরণে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর বিশেষ কোনো পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু হতে চলেছে? জুন মাসে আরাকানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর ব্যাপক সহিংসতার সময় বাংলাদেশ সরকার সীমান্ত উন্মুক্ত করেনি, বরং কিছু অনুপ্রবেশকারীকে ফেরত পাঠিয়েছে। সে জন্য আন্তর্জাতিক দাতারা বাংলাদেশের সমালোচনা করেছিল। সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের চারজন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী একসঙ্গে মিয়ানমার সফর করেছেন। সেখান থেকে ঢাকা সফরে এসে তাঁরা বাংলাদেশ সরকারকে বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত উন্মুক্ত রাখতে হবে, কারণ মিয়ানমারে তাঁরা এখনো অত্যাচারিত হয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন। তাঁরা আরও বলেন, মিয়ানমার সরকার সহিংসতা বন্ধ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে, কিন্তু সফল হচ্ছে না। চার উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন, এমন খবর আমরা পাইনি। বরং তাঁরা আমাদের দেশে যে সুরে কথা বলেছেন, তাতে আমাদের মনে হয়েছে, তাঁরা যেন মিয়ানমার সরকারের পক্ষে সাফাই গাইতে আর আমাদের রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খোলা রাখার হুকুম দিতে এসেছেন।
অং সান সু চি শান্তির ক্ষেত্রে অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু আরাকানে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদ জানিয়েছেন—এমন খবর আমরা কখনো পাইনি। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা মুসলমানদের মিয়ানমারের নাগরিক বলে স্বীকার করে না। গত জুনে তাঁদের ওপর সহিংসতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রোহিঙ্গাদের রক্ষা করা দূরে থাক, আক্রমণকারীদের সঙ্গে তাঁরাও রোহিঙ্গাদের ওপর চড়াও হয়েছেন। মিয়ানমারের সরকার আসলে চায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের স্বদেশ থেকে তাড়িয়ে দিতে। আর আমেরিকাসহ আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো দৃশ্যত চাইছে, অন্যায়ভাবে বাস্তুচ্যুত সেসব রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে এসে জড়ো হোক। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন, মুসলিম এইড, মেডিসন সান্স ফ্রন্টেয়ার্স, অ্যাকশান অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গার প্রভৃতি আন্তর্জাতিক সংস্থার কাজকর্ম আরও বেড়ে যাক। মানুষকে যাতে পিতৃপুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে গিয়ে বিদেশ-বিভুঁইয়ে শরণার্থী হতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করার চেয়ে বরং শরণার্থীর সংখ্যা যেন আরও বেড়ে যায়, সেদিকেই বেশি মনোযোগ তথাকথিত আন্তর্জাতিক দাতাদের।
জানা গেল, আমাদের বৌদ্ধ ভাইবোনদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মিয়ানমারে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করেছেন। মনটা খারাপ হয়ে গেল এই ভেবে যে পৃথিবীটা এখনো ধর্মে ধর্মেই বিভক্ত রয়ে গেল। মিয়ানমারের এই বৌদ্ধ পুরোহিতরা যদি আরাকানে সহিংসতার সময় নিজের দেশের রোহিঙ্গা মুসলমান ভাইবোনদের নিরাপত্তা-সুরক্ষার জন্য পথে নামতেন, তা হলে হয়তো আজ তাঁদের বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে হতো না। তাঁদের এখনকার বিক্ষোভে বাংলাদেশে আমাদের বৌদ্ধ ভাইবোনদের নিরাপত্তা বাড়বে বলে আমাদের মনে হয় না। ধর্মীয় দৃষ্টিসীমার বাইরে যেতে না পারলে এ রকম সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। আমরা কক্সবাজারের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও স্বাধীনভাবে ধর্মপালনের অধিকার রক্ষা করতে সরকারকে বাধ্য করতে চাই এই কারণে নয় যে তাঁরা বৌদ্ধ, বরং এই কারণে যে তাঁরা মানুষ এবং তাঁরা স্বাধীন বাংলাদেশের পরিপূর্ণ নাগরিক।
নোবেল বিজয়ী শান্তিময়ী অং সান সু চি ও তাঁর দেশের বৌদ্ধ পুরোহিতদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই এখন: বাংলাদেশে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর যে অভূতপূর্ব ও অকল্পনীয় অন্যায়-অবিচার শুরু হলো, তা যখন একবার শুরু হয়েছে, তখন অসম্ভবের ধারণা চূর্ণ হয়েছে। এখন আর বলা যাবে না যে এমন ঘটনা আবার ঘটা সম্ভব নয়। বরং মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে আমাদের বৌদ্ধদের নিয়তি। আরাকানে রোহিঙ্গারা আবার আক্রান্ত হলে বাংলাদেশে বৌদ্ধরা যে আবার আক্রান্ত হবেন না—এমন নিশ্চয়তা আজ কে দিতে পারে? 
রামু-উখিয়া থেকে ফিরে
মশিউল আলম: সাংবাদিক।
mashiul.alam@gmail.com


বিএনপির সাংসদের উসকানিতেই রামুতে হামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার | তারিখ: ০৮-১০-২০১২
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৌদ্ধবিহারে হামলার ঘটনায় বিরোধী দল বিএনপির স্থানীয় সাংসদ লুত্ফুর রহমানকে দোষারোপ করে বলেছেন, গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার দিকে রামুতে হামলার আগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন সেখানকার উত্তেজিত মানুষকে শান্ত করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু সেই সময় বিএনপির স্থানীয় সাংসদ গিয়ে সেখানে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। তারপর হাজার হাজার মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে মন্দিরে আগুন দেয়।
আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজারের রামু উপজেলার কিজারী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জনসভাস্থলে বক্তব্য দেওয়ার সময় এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। এই মাঠের পাশে রামুর কেন্দ্রীয় বৌদ্ধবিহার। গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে বিহারটি পুড়িয়ে দেয় দুষ্কৃতকারীরা। মাঠের পূর্ব পাশে বৌদ্ধদের ১৫টি ঘরও পোড়ানো হয় ওই রাতে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৌদ্ধবিহারে হামলার ঘটনায় তিনি মর্মাহত ও হতাশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এর আগে এ রকম জঘন্যতম ঘটনা ঘটেনি। আন্তর্জাতিকভাবে দেশের সম্মান ক্ষুণ্ন করতেই এই হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, হামলার ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না। জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেওয়া হবে।
জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী জানান, পুড়ে যাওয়া ১২টি বৌদ্ধবিহারের সংস্কার সরকারি অর্থে করা হবে। তিনি বলেন, বৌদ্ধবিহারগুলোর সংস্কারের জন্য যা যা করা দরকার, সরকারের পক্ষ থেকে তা করা হবে। 
শেখ হাসিনা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভান্ডার থেকে এক কোটি ৩৪ লাখ আর বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে দুই কোটি ৪৮ লাখ নগদ টাকা (মোট তিন কোটি ৮২ লাখ ৪৬ হাজার টাকা ) ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের দেওয়া হবে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের গৃহনির্মাণের জন্য ৩০৭ বান টিন, ৩৫.৬২ মেট্রিক টন চাল, ২৪৬টি কম্বল, ১০৭ বান্ডিল কাপড়চোপড় ও স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ২৯ সেট বই দেবে সরকার।
জনসভাস্থল থেকে পুড়ে যাওয়া বৌদ্ধবিহার ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বাড়িতে গিয়ে ত্রাণ দেন শেখ হাসিনা। এরপর তিনি কক্সবাজারে যাবেন। সেখানে সরকারি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন।
জনসভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, বীর বাহাদুর এমপি, তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার প্রমুখ। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ কে আহম্মেদ হোসেন। বক্তব্য দিয়েছেন পুড়ে যাওয়া রামু কেন্দ্রীয় শিলাবিহারের পরিচালক সত্যপ্রিয় মহাথেরো।
এর আগে সকাল সোয়া ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে পৌঁছান। সেখান থেকে তিনি রামুতে যান। রামুতে উগ্রবাদী দুষ্কৃতকারীদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধমন্দির ও বসতবাড়ি পরিদর্শন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ত্রাণ ও অনুদানের অর্থ বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলা সদরে দুষ্কৃতকারীদের একাধিক দল বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের শত বছরের পুরোনো ১২টি বৌদ্ধবিহার ও মন্দিরে আগুন লাগায়। পুড়িয়ে দেয় বৌদ্ধপল্লির ৪০টির মতো বসতবাড়ি। ভাঙচুর করে শতাধিক ঘরবাড়ি।
বৌদ্ধধর্মাবলম্বী এক তরুণের ফেসবুকে (সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম) পবিত্র কোরআন শরিফের অবমাননাকর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে—এমন অভিযোগে শনিবার গভীর রাতে ওই হামলা চালানো হয়।
রামুর ঘটনার পর টেকনাফ, উখিয়া, পটিয়ায় বেশ কয়েকটি বৌদ্ধবিহার ও বাড়ি এবং একটি হিন্দু মন্দিরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট চালায় দুষ্কৃতকারীরা।


রামুর ঘটনা ষড়যন্ত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ০৮-১০-২০১২
      জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেছেন, কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ বসতি ও মন্দিরে হামলার ঘটনা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।
মিজানুর রহমান গতকাল রোববার তাঁর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ মন্তব্য করেন। এদিন খাদ্যের অধিকার এবং এ ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা অক্সফামের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে সই করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
মিজানুর রহমান রামুর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেন। তবে বিচারের নামে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে যেন হয়রানি করা না হয়, সে ব্যাপারে তিনি সরকারকে সতর্ক করে দেন। 
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘সেখানে যে ঘটনা ঘটেছে, তা দুঃখজনক। তাই এটি নিয়ে রাজনীতি নয়, সবাইকে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে হবে। এ ঘটনা নিয়ে নোংরা রাজনীতি করার অবকাশ নেই। মিজানুর রহমান বলেন, ‘রামুতে আমরা ওই এলাকার সবার সঙ্গে কথা বলেছি। স্থানীয় প্রশাসন, ধর্মীয় গুরু—সবার মতামত নিয়েছি। আমরা ঘটনা বিশ্লেষণ করে করণীয় নিয়ে সরকারকে সুপারিশ করব। আমার মনে হয়েছে, এটি পূর্বপরিকল্পিত ঘটনা। আগে থেকে প্রস্তুত করা একটি নীলনকশা। শুধু বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী নয়, এটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।’ গত শুক্রবার রামুর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের সময় হামলার ব্যাপারে পুলিশ কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানান তিনি। হামলার ঘটনায় নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতারও তিনি সমালোচনা করেন।

No comments:

Post a Comment