Monday, October 1, 2012

বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা


কক্সবাজার : কক্সবাজারের রামু উপজেলার বৌদ্ধ ধর্মাম্বলী এক যুবক ফেইসবুকে পবিত্র কুরআনের ওপর মহিলার দুই পাদেয়া একটি ছবি ট্যাগ করার ঘটনায় উপজেলা সদরসহ আশপাশের এলাকায় সাতটি বৌদ্ধ মন্দির ও অন্তত ২০টি বসতবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধরা।
পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসন অতিরিক্ত পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনী বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করেছে।
জেলা প্রশাসক জয়নুল বারি জানিয়েছেন, এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ইতিমধ্যে বিজিবির দুই প্লাটুন জওয়ান টহল দিচ্ছে। পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত টহল অব্যাহত থাকবে। চট্টগ্রাম রেঞ্জ থেকে অতিরিক্ত আরো ৩শ পুলিশ সদস্য রোববার সকালে কক্সবাজারে এসে পৌঁছেছে।
প্রশাসন বলছে, তদন্ত করে দেখা হবে কারা এ ঘটনার সাথে জড়িত ও এটি পূর্বপরিকল্পিত কি না। ওই ঘটনায় আরো ৩টি মন্দির ও অর্ধশতাধিক বসতবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। শনিবার রাত ১১টার দিকে হঠা শুরু হওয়া বিক্ষোভ এক ঘণ্টার মধ্যেই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠে।
রামু সদরের আশপাশের এলাকা থেকে আসা সাধারণ মানুষ বৌদ্ধ মন্দির ও বড়ুয়া পাড়ার বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ওই ব এলাকায় দমকল বাহিনীর গাড়ি ও দমকল কর্মীদের যেতে দেয়নি বিক্ষোবকারীরা। প্রথমে একটি মিছিল বের হবার পর মিছিলটি বৌদ্ধ পাড়ায় যেয়ে হামলা করে। টানা ৩টা ঘণ্টা ধরে আগুনে পুড়ে যায় বসতবাড়ি ও মন্দির।
পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও রামু উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজলসহ জনপ্রতিনিধিরা চেষ্টা করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি। তবে রাত দেড়টার দিকে বিজিবি ও রাত ২টার পর সেনাবাহিনী আসার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।
সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য লুফুর রহমান কাজল, রামু উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবি চন্দ, ভাইস-চেয়ারম্যান নুশরাত জাহান মুন্নি ও রামু থানার ওসি নজিবুল ইসলাম মাইকে বক্তৃতা দিয়ে বিক্ষুব্ধ মুসলমানদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।
রাত ১১টার দিকে রামু চৌমুহনী চত্ত্বরে বক্তৃতা চলাকালেই বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা চালায় উচ্ছৃঙ্খল লোকজন। আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির সীমা বিহার, সাদা চিং, লাল চিং ও আর্য বংশ বৌদ্ধ বিহারসহ ৭টি বৌদ্ধ মন্দির। রামু খিজারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছেই বড়ুয়া পাড়ায় আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয় ২০টির বেশি বসতবাড়ি।
রামু থানার ওসি নজিবুল ইসলাম ঘটনাস্থলে বিক্ষোভরত জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিয়ে অভিযুক্ত যুবককে গ্রেপ্তারের প্রতিশ্রুতি দিয়েও পরিস্থিতি শান্ত করতে পারেননি।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম জানান, রামু সদরের মানুষ এই ঘটনা ঘটায়নি। আশপাশের এলাকা থেকে আসা লোকজনই মূলত বৌদ্ধ মন্দির ও বসতবাড়িতে আগুন দেয়।
ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর রাত ৪টার দিকে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন ও পুলিশ সুপার সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ঘটনাস্থলে যান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আকতার জানিয়েছেন, সম্ভাব্য অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রোববার সকাল ৭টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য রামু সদর ও আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
অন্যদিকে ফেইসবুকে বিতর্কিত ছবি ট্যাগকারী উত্তম বড়ুয়া পলাতক থাকলেও তার মা ও বোনকে পুলিশ নিরাপত্তা হেফাজতে নিয়েছে।
উল্লেখ্য, উত্তম কুমার বড়ুয়া রামু সদরের বড়ুয়া পাড়া চেরাংঘাটা এলাকার সুদত্ত বড়ুয়ার ছেলে। তিনি তার ফেইসবুক একাউন্টে কুরআনের ওপর মহিলার দুই পা’, আল্লাহু শব্দের বিকৃতি ও পবিত্র কাবা শরীফের ছবিতে কেউ নামাজ পড়ছেন, কেউ পূজা করছেনএমন কয়েকটি ছবি ট্যাগ করেছেন।
www.unitednews24.com
সম্পাদনায়: আউটপুট এডিটর/নিউজরুম/ ইউএন/নিউজরুম এডিটর

No comments:

Post a Comment