লিখেছেনঃ সোনা কান্তি বড়ুয়া Sunday, 28 October 2012 16:28
টরন্টো, বিগত ১৩ই এবং ১৫ই অক্টোবর ২০১২ কানাডায় বসবাসকারী বাঙলাদেশের নাগরিকগণ সহ বিভিন্ন দেশের বৌদ্ধগণ সম্মিলিত ভাবে ‘বাংলাদেশে বৌদ্ধ মন্দিরে উগ্র ইসলামী মৌলবাদীদের হামলার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন এবং প্রতিবাদ জানিয়েছেন টরন্টো শহরের কেন্দ্রস্থল নাথন ফিলিপস সেন্টার, মন্ট্রিয়াল শহরের সিটি সেন্টার এবং কানাডার রাজধানী অটোয়ায় সংসদ ভবন (পার্লিয়েমেন্ট হিল) প্রাঙ্গনে। ‘মানুষের চেয়ে নহে কিছু বড়, নাই কিছু মহিয়ান।’
মম লেখা কবিতা এবং প্রবন্ধ কহে
সব মানুষের রক্তে সত্যের (আল্লাহ,ঈশ্বর) প্রবাহ বহে ।
আমার ভাইয়ের বসতি জ্বালানো ২৯ শে সেপ্টেম্বর
আমি কি ভুলিতে পারি, হে করুনাঘন জগদীশ্বর!
ইসলাম নাম ধরি ২৫ হাজার জঙ্গীদের প্রচন্ড অন্যায়
মানব বৌদ্ধ জনপদ বিহার ধ্বংস করে বলের বন্যায় ।
হে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কথা বল তুমি
রামুর বড়–য়াদের বসতি পোড়ায় জঙ্গী ইসলামী।
বেহায়া ধর্মান্ধ ইসলামী জঙ্গীদের নিল্লর্জ অমনুষতা
হাহাকারে ধূলিজালে ক্ষুভিল স্বাধীনতা।
কবিতায় গল্পে শহীদুল্লাহ নজরুল বুদ্ধের জীবনী পড়ে,
ইসলামী জঙ্গীরা কেন বৌদ্ধবিহার ধ্বংস করে?
শত মায়ের চোখে শুধু ভয় হয়
কখন বৌদ্ধ বিহারে জঙ্গীদের আক্রমন হয় ?
বিহারে বিহারে কাঁদিছে উপাসক ভন্তেকে খোঁজ করি
বুদ্ধ মন্দিরে বাজেনাক ঘন্টা সকাল সন্ধ্যা ভরি।
বোধিঘর সে ধ্বংস যজ্ঞে ভরা, সোনার প্রদীপ লয়ে,
বুদ্ধ পূজায় ভয় হয় উপাসিকার, বুদ্ধ বন্দনা কয়ে।
বিহারের আঙিনায় শিউলি কুড়াইতে চোখে আসে জল,
বৌদ্ধ বিহারে ধ্বংসযজ্ঞ মুক্তিযুদ্ধের কি কর্মফল ?
ভাঙা বৌদ্ধ বিহার আবার গড়িব, আসুন ভন্তে ফিরি,
শক্তহাতে আমরা তাড়াবো ইসলামী জঙ্গীদের গলা ধরি।
আমি লিখি “বৌদ্ধবিহারে ইসলামি জঙ্গিদের আক্রমন”
বুদ্ধের বাংলাদেশ মনে রেখো, হে ইসলামি মৌলবাদীগণ।
“আমি একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশ থেকে কথা বলি
আমি হিংসা উন্মত্ত মধ্যরাত্রি থেকে আওয়াজ তুলি।
জঙ্গিরা হোলি খেলেছিল আমার বৌদ্ধ বিহারে
ধর্মান্ধরা বৌদ্ধ জনপদে আগুন জ্বালিয়ে নেচেছিল।
মুক্তিযুদ্ধ জাগ্রত দ্বারে আমার, আমি মহাশান্তি মহাপ্রেম
আমি বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে কথা বলি
আগুনের ভিতরে আজ পরশ মনির নেই লেশ
বৌদ্ধ বিহারের ছায়ায় বুদ্ধের আশির্বাদ অশেষ।
পুলিশ যারা চুপ ছিল, যারা সব দেখে ও কিছুই দেখেনি
জঙ্গিদের সব ষড়যন্ত্র জেনেও বৌদ্ধ জনতাকে রক্ষা করেনি।
মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে রাষ্ঠ্রশক্তি জনতার দান
জঙ্গিরা সবাই তালেবান মানবতার কি অবসান?
ওরে ভয় নাই আর
জয় বাংলা জনতার।”
ইতিহাসের গতিপথে বৌদ্ধগণ মৃত্যুর পর মৃত্যু পেরিয়ে বাংলাদেশে বেঁচে থাকতে পারবে কি? ২৬০০ বছর পূর্বে গৌতমবুদ্ধ বগুড়ার মহাস্থানগড়ে তাঁর শান্তির ধর্ম বাংলাদেশের জনতার কাছে প্রচার করেছিলেন। তিনি চর্যাপদে বাংলা ভাষার জনক এবং বাংলা বিশ্বকোষের (১৩শ ভাগ, ৬৫ পৃষ্ঠা) মতে, “রাজপুত্র সিদ্ধার্থ (বুদ্ধ) তাঁর ছেলেবেলায় বঙ্গলিপি অধ্যয়ন করেন। প্রাচীনকালে ব্রাহ্মণ্যবাদী দলিত শাসনের বিকৃতির হাত থেকে গৌতমবুদ্ধ বঙ্গলিপিকে (বিভিন্ন লিপিসহ) ব্রাহ্মণদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন (দেশ, কোলকাতা, ১ ফেব্র“য়ারি, ১৯৯২)। ” ঐতিহাসিক নানা কারনে ভারতে জাতিভেদ প্রথার উদগাতা ব্রাহ্মণ্যবাদের হাতে জাতিভেদ প্রথা বিরোধী বৌদ্ধদের মৃত্যু অবধারিত ছিল। তারপর মৌলবাদী জামাত ধর্মের আগুনে করুন রোদনে তিলে তিলে বাংলাদেশের বৌদ্ধগণ ক্ষয় হচ্ছে দিনের পর দিন।
ইসলামি মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ জাগ্রত দ্বারে। বৌদ্ধ বিহার ধ্বংসযজ্ঞ তো নিশ্চয়ই বাংলাদেশের জাতীয় লজ্জা এবং ইসলামি মৌলবাদীরা বান্দরবানের বনজঙ্গল নিয়ে আরেকটা পাকিস্তান মার্কা স্বাধীন ‘ইসলামী রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার গোপন মিশন চলছে (টরন্টোর বাংলা কাগজ, অক্টোবর ০২, ২০১২)। সারা রাতজুড়ে সম্প্রতি ইসলামী মৌলবাদীরা ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বরে রামু , উখিয়া এবং পটিয়ায় বৌদ্ধ বিহার এবং বড়–য়া বৌদ্ধদের ঘরবাড়ী সমূহে আগুন দিয়ে হরিলুট এবং ধ্বংসযজ্ঞ করে মানবতাকে কবর দিয়েছে।
বাংলা ভাষার কাছে মৌলবাদীদের পরাজয়
বাংলাদেশের জনতা সহ আমরা কি ত্রিশলক্ষ শহীদের বিনিময়ে ও স্বাধীনতার মুখ দেখবো না? এক সাগর রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল রাজাকার সহ দেশের কতিপয় সেনাশাসকগণ। বাংলাদেশে মৌলবাদীধর্মের জামাতগোষ্ঠি ও রাষ্ঠ্রক্ষমতার সাহেব বিবি গোলামদের দুর্নীতির জাঁতাকলে পিষ্ঠ ৪০ বছরের স্বাধীনতা। জনতার পেটে ভাত না থাকলে ধর্ম বা স্বাধীনতার মূল্যায়ন করা কঠিন কাজ। ক্ষুধা শাসকের চেয়ে ও বেশী শক্তিবান।
বিভিন্ন বিশ্ব রাজনৈতিক কারন সহ ইসলাম ধর্মের নামে বাংলাদেশে ‘উর্দু ভাষা ’ পাকিস্তানের মতো রাষ্ঠ্রভাষা করতে না পারায় ‘বাংলাদেশকে’ কোন মুসলমান দেশ ভারত এবং ভূটানের আগে স্বীকৃতি তো দিল না এবং আজকের মৌলবাদীদের স্বাধীন ‘ইসলামী রাষ্ঠ্র ’ প্রতিষ্ঠার গোপন মিশন ১৯৭১ সালে কোথায় ছিল? বাংলা ভাষায় জয়কে মনে মনে ইসলামী মৌলবাদী এবং আল কায়দা বৌদ্ধধর্মের জয় মনে করে ২০০১ সালে আফগানিস্তানে বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তি কে অনেক বোম মেরেছে। আলোকিত ভাষার বর্ণমালা বুদ্ধমূর্তিকে বোম মারার কর্মফল ভয়াবহ। বুদ্ধমূর্তি বিরাজমান অধর্ম হলে, মুসলমানদের অফিসে বঙ্গবন্ধুর ছবি (সৌদী আরবের বাদশাহের ছবি, খোমেনীর ছবি) এবং গৃহে কাবাগৃহের (মক্কার) ছবির কি হবে? জাতীয় পতাকাকে সালাম করার অর্থ কি? বৌদ্ধধর্মে মূর্তি পূজা নেই। বৌদ্ধধর্মের ভাষায় জীবন পঞ্চস্কন্ধের যোগফল, যথা : (১) রুপ (২) বেদনা (৩) সংজ্ঞা (৪) সংস্কার এবং (৫) বিজ্ঞান (কনসিয়াসনেস)। গভীর ধ্যানের মাধ্যমে জীবন রহস্যের সমাধান করার সহজ ব্যাখ্যা বাংলা ভাষার প্রথম বই ‘চর্যাপদে’ বিরাজমান।
জামায়াতের কাছে বাংলাদেশ রাষ্ঠ্রশক্তির মস্তক অবনত ছিল কেন? ধর্ম ও স্বাধীনতা শব্দকে অপব্যবহার করেছেন দেশের প্রশাসনের সাহেব বিবি গোলামগণ। আজ ও ধর্মকে তরোয়ালের মতো ব্যবহার করে রাষ্ঠ্রক্ষমতা, আলেম সমাজ ও জামাত জনতাকে ক্রীত দাস বানিয়ে তাঁদের স্বাধীনতা হরণ করে রাতের আঁধারে ২৫ হাজার মৌলবাদীগণ রামু, উখিয়া এবং পটিয়ায় ৫৫ বৌদ্ধ বিহারে এবং ৬৫ বড়–য়া বৌদ্ধগণের ঘর বাড়ী জুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ করেছে।
সর্ব শক্তিমান আল্লাহ সব ধর্মে নানা নামে বিরাজমান। ইসলামী মৌলবাদীরা কি বৌদ্ধ বসতিকে ধ্বংস করবে ? ইসলামী মৌলবাদীগণ রামু, উথিয়া ও পটিয়ায় বৌদ্ধগনের বৌদ্ধ বিহার এবং ঘরে আগুন দিয়ে ধ্বংস যজ্ঞ করেছে রাতের পর রাত। রামুর বৌদ্ধ জনপদে ইসলামী জামাতুল মুজাহীদ সহ জঙ্গীরা ধর্মের নামে লোভ লালসা এবং হিংসার আগুনে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ বা সৃষ্ঠির সবশ্রেষ্ঠ জীব অনুভূতি ত্যাগ করে রাক্ষস হয়ে প্রচন্ড অন্যায় কাজ করেছে।
আগামী ২০২৫ সালে বুড়িগঙ্গা, (দৈনিক ডেস্টিনি, ২১ শে মার্চ, ২০০৮) সহ বাংলাদেশের নদ-নদীর অস্তিত্ব শেষ করে জামাতুল মুজাহিদিনদের মরুভূমি মার্কা ধর্মের ভূমিতে আরো কত শত বোমা বিস্ফোরিত হবে কে জানে? বাঙালির রক্তে নানা জিনঘটিত অনেক অদ্ভুত ব্যাপার আছে। ইমপ্রিন্টস অব সেনসেটিভ সোল আমাদের স্বাধীনতাকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। অতীশ দীপংকর (৯৮২ - ১১৫৪) তিব্বতে যাবার পর বিদেশি বল্লাল সেনের জাতিভেদ প্রথায় নির্যাতীত বাংলাদেশে বকতিয়ার খিলজি ইসলাম ধর্মভিত্তিক রাষ্ঠ্রক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেন। বাঙালি ঐতিহাসিক ও শিল্পীর মন বাঙালির স্বাধীনতা (১১৫৪ - ১৯৭১) আন্দোলনের বিভিন্ন ইতিহাস জনমানসে উপস্থিত করার প্রয়াস করেছিল যথেষ্ঠ উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে।
গণ প্রজাতান্ত্রীক বাংলাদেশে বৌদ্ধ জনতা এমন অমানবিক আক্রমন ‘মৌলবাদী ইসলামের ’ নামে মেনে নিতে পারেন না। বেআইনি রাজনীতির বিরুদ্ধে জনতা প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষনা করবেন। বৌদ্ধ জনতা মরে গেলে দেশ কি শুধু ইসলামী মৌলবাদীদের জন্যে? দেশের কুলি, ছাত্র, ছাত্রী, মজদুর ও কৃষকগণ মরে গেলে ও ভিআইপিদের টাকা বানানোর জন্যে ধর্মের রসের হাঁড়িতে রাজনীতি ভারী মজাদার হয়ে ওঠেছে। বাঙালির ধর্ম ছিল, আছে এবং থাকবে, “অহিংসা পরম ধর্ম।” মহাকবি নজরুল ইসলামের ভাষায়, “মানুষের চেয়ে নহে কিছু বড় / নাই কিছু মহিয়ান।” মানবতাবাদী (আশরাফুল মাকলুকাতের) বাংলাদেশে আদিবাসী সহ জগত জুড়িয়া এক জাতি আছে, সেই জাতির নাম মানুষ জাতি। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির নামে ধর্ম, নারী ও মানুষকে নিয়ে রাজনৈতিক পাশা খেলা বন্ধ করতে হবে এবং “হজযাত্রীর নামে সউদিতে উগ্র মৌলবাদী পাচার হচেছ। (যায় যায় দিন, ফেব্র“য়ারী ২০, ২০০৮)।”
স্বাধীনদেশে রাষ্ঠ্রক্ষমতার প্রথম ও প্রধান কাজ জনতাকে মানবিক মর্যাদায় বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করা। বাংলা মায়ের চরনতলে স্বর্গ বিরাজমান। আধুনিক বাংলাদেশে মুসলমান না হলে বড়ূয়া বৌদ্ধদের কি বেঁচে থাকার অধিকার নেই? ২৫ হাজার ইসলামি জঙ্গিগণ সম্মিলিতভাবে বৌদ্ধ বিহার, ঘর বাড়ী এবং দোকানে আগুন দিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ করার সময় আইনের শাসনের রক্ষক পুলিশ প্রশাসন কিছুই করলো না। মনুষ্যত্ব বা মানব শিশুর সংজ্ঞা কি শুধু মুসলমান? “আমাদের শক্তি মেরে, তোরাও বাঁচবি নারে।” ইসলামি জঙ্গিরা কি বৌদ্ধদের অস্তিত্ব বিলোপ করতে চায়? বিশ্বের প্রথম বাংলা বই ‘চর্যাপদের’ মতে, বাংলা ভাষার জনক গৌতমবুদ্ধ, বৌদ্ধ পাল রাজাগণ ৪০০ বছর পর্যন্ত বাংলাদেশের শাসক ছিলেন এবং বাংলাদেশ বাঙালি বৌদ্ধদের দেশ। ‘আমার বাপের ঘরে আগুন দিল কে রে, আমি খুঁজিয়া বেড়ায় তারে।’ নানা যন্ত্রনায় ৮ শত বছর বাংলাদেশের অনেক প্রাচীন বৌদ্ধগণ ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছিলেন।
প্রসঙ্গত: হাজার বছর যাবত হিন্দুমৌলবাদীগণ বৌদ্ধহত্যা যজ্ঞের পর বুদ্ধগয়া দখল করার মাধ্যমে রাজা শশাঙ্ক ৬৫০ সালে বোধিবৃক্ষ ধ্বংস করে মহাবোধি মন্দিরের ভেতর শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠায় হিন্দু মন্দিরে পরিনত করেছিলেন। বৌদ্ধদের সীমাহীন পরিশ্রম ও অহিংস মুক্তিযুদ্ধের পর ভারতের সুপ্রীম কোর্টের রায়, বুদ্ধগয়ার মহাবোধি মন্দিরের মালিক হিন্দুরা নয়, বৌদ্ধগণই উক্ত মহাবোধি মন্দিরের প্রকৃত মালিক (টাইমস অব ইন্ডিয়া, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১২)। বিশ্ববৌদ্ধদের ধর্মীয় অনুভূতির মূলে কুঠারাঘাত করিয়াছে (বুদ্ধ পূর্ণিমা, ৬ই মে ২০১২ সালে) আনন্দবাজার পত্রিকার কার্টুনে লেখা ছিল, “হ্যাঁ রে আজ না কি বুদ্ধ পূর্ণিমা? বলিস কী, এখন ও নাম বদলায় নি।” নাম বদলানোর ইতিহাসে হিন্দুরাজনীতি বৌদ্ধধর্মকে হাইজ্যাক করে হিন্দুধর্ম বানিয়েছে এবং বৌদ্ধদের বোধিসত্ত্ব তারাদেবীকে (চর্যাপদে নৈরাত্মা দেবী) দূর্গা বানিয়ে দূর্গা পূজায় হিন্দুধর্মের মহিমা প্রকাশ করে।
বাংলাদেশের জনৈক অভিজ্ঞ লেখকের ভাষায়, “গান্ধী গেছেন গুলির মধ্যে, জিন্না গেলেন মারা, নাজীমুদ্দীন হইছেন রাজা, হিন্দুর দফা সারা, মোমিন মুসলমান। মুখে আল্লারসুল সবে বল। (কোরাস)। কয়েক বছর আগে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার মেজর (অব) এম খায়রুজ্জামান জেল হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। হযরত শাহজালালের মাজারে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর বোমা হামলার পর ১১ বছর হয়ে গেছে, ওই বোমা হামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে কি? ইসলামি ”জঙ্গিদের নবজাগরণ (ভোরের কাগজ, ১৮ আগষ্ট, ২০০৭), “ দেশের জন্য অমঙ্গল জেনে ও প্রিন্সিপ্যাল ষ্টাফ অফিসার লে: জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশে ধর্মীয় জঙ্গিদের কোন ঘাটি নেই (সম্পাদকীয়, ভোরের কাগজ, ১২ই আগষ্ট, ২০০৭)।”
ধর্মকে রাজনীতির হাঁড়িতে মিশে বিষক্রিয়ায় বিগত জোট সরকার বাংলাদেশের সমাজ জীবনের ও ব্যক্তি জীবনের সর্বত্র তালেবান ও আলকায়দা ধর্মকে বিষিয়ে দিয়ে নিজেদের আধিপত্যের শেখড় রাজনীতির গভীরে নিয়ে গিয়েছিল। আইনের শাসনের মাধ্যমে অহিংসা, সত্য, ঈমান, শৃঙ্খলা, পরিশুদ্ধ মন ও মৈত্রীকে মানব সমাজে প্রতিষ্ঠা করাই ছিল যে কোন ধর্মের উদ্দেশ্য। রাজনীতির বাইরে মানুষের মানবতা বলে একটা জিনিষ আছে, যাহা মানুষের মনুষ্যত্ব এবং আজ মানবাধিকার ভিত্তিক স্বাধীনতায় জনতা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অন্যায়কে কি ইসলামের নাম দিয়ে হালাল করা যায়? বাংলাদেশে তো উর্দূ ভাষাকে ইসলামের নামে হালাল করা যায় নি। জনতার স্বাধীনতা ফিরে পেতে বর্তমান রাজনীতির অভিজ্ঞতায় ইউরোপীয়ান এনলাইটেনমেন্টের আলোকে আলোকিত বাংলাদেশ রচনা করতে জামায়াতের অন্ধকার সাম্প্রদায়িক শক্তির অবসানই একমাত্র পথ। সন্ত্রাসী শিবির ও জামাতের ইসলাম ধর্মে কি মানবাধিকার আছে? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করেছেন বলে কি দেশের সাবেক রাষ্ঠ্রক্ষমতাধারীরা বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী, পুত্র, কন্যা সহ বন্ধু বান্ধব সবাইকে মেরে ফেলবে?
বৌদ্ধ বিহার ধ্বংসই জাতীয় লজ্জা এবং এর আসামী হাজির:
ধর্ম নামক ভাইরাস এবং রাজনৈতিক দুঃখের দহনে করুন রোদনে তিলে তিলে ক্ষয় হচ্ছে বাংলাদেশে জনগণ। মুসলমান না হলে বাংলাদেশে বৌদ্ধগণ কি মানুষ নয়? আধুনিক ভদ্র সমাজে রাতের আঁধারে বৌদ্ধ জনপদে আক্রমন কি ‘ইসলামের জয়গান করে ?’ আসল কথা ইসলামিক মৌলবাদীরা বাংলা ভাষার কাছে হেরে গেছে। গানের কথায়, “ মোল্লা মার্কা সন্ত্রাসী, চোরাইয়া বুদ্ধমন্দিরে আগুন দিয়ে এবং বুদ্ধমূর্তি চুরি করে মসজিদে ঘুমায়।” উক্ত বৌদ্ধমন্দির ধ্বংস যজ্ঞের আসামী আজ ও পুলিশ খুঁজে পাইনি অথচ জনতা চেনেন সেই আসামি রাজপুরুষদেরকে। কড়ির খেলায় দেশের পাত্র মিত্ররা আড়ালে, ফেঁসেছে মুঠোফোনের ভিডিউতে সন্ত্রাসী মুসলমানগণ। বুদ্ধমূর্তিকে বোমা মারা এবং সন্ত্রাস করলেই টাকা। টাকা ওয়ালারা রাজনীতি ও ধর্মের টুপি পরে শরনার্থী মুসলমানদেরকে নিয়ে সন্ত্রাসী আবশ্যকের বাজার খোলে বসে আছে।
সবাই বৌদ্ধ বিহার ধ্বংস যজ্ঞের আসামিদেরকে চেনে, কিন্তু নাম বলতে অনেকে ভয় পায়। মহাভারতে মহারাজা ধৃতরাষ্ঠ্রের রাজ সভায় রাজ বধু দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণের সময় রাজার পাত্রমিত্র সবাই দেখেছে, কিন্তু সেনাপতি গঙ্গাপুত্র ভীষ্ম পর্যন্ত অপরাধী দুর্যোধনের নাম বলছেন না। হাতী ঘোড়া গেল তল, মৌলবাদীরা কয়, কতজল? তেমনি দেশের সাহেব বিবি গোলামেরা সব জেনে শুনে ভাণ করছেন কিছুই জানেন না। আধুনিক সভ্য সমাজের সংজ্ঞা কি? জন অরণ্যের মৌলবাদী মানুষ নামক পশুরা ধর্মের ছলে দূর্বল বিধর্মী মানুষ নিয়ে পাশা খেলে। কড়ি দিয়ে রাজশক্তির অদল বদল করতে গায়ের জোরে ঈশ্বরের নামে বুদ্ধের গায়ে আগুন লাগায়। মনে যদি সত্য না জাগে, ধর্মের টুপি মাথায় দিয়ে চোখ ভুলানো যায় রে শুধু, মন ভুলানো যায় না আর। শেষ বিচারের আশায়, আমরা বসে আছি।
ইতিহাসের মতে, কর্ণাটকের সেন বংশের রাজাগণ ব্রাহ্মণ্যধর্মের যাঁতাকলে বাংলাদেশের বৌদ্ধগণকে নির্যাতন করেন। তারপর ১২০২ সালে বখতিয়ার খিলজি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় নালন্দা সহ শত শত বৌদ্ধ মন্দির, বিহার এবং বাংলাদেশ জুড়ে বিভিন্ন ধ্বংস যজ্ঞের মাধ্যমে লক্ষন সেনকে পরাজয় করে। ধর্মকে নিয়ে পাকিস্তানের সামরিক শাসকগণ সহ তালেবান ও আলকায়দা অমানবিক রাজনীতির জন্য হিংসায় উন্মত্ত হয়ে অপাপবিদ্ধ সাধারণ মানুষদেরকে বোমা মেরে দুঃখের বিষাদসিন্ধু রচনা করে চলার পর শান্তি কি ফিরে আসবে?
বৌদ্ধবিহার ধ্বংসযজ্ঞের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশে একমাত্র রাষ্ঠ্রদ্রোহী রাজনৈতীক দল জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের পরম মিত্র এবং বহাল তবিয়তে ধর্ম ব্যবসায় রাষ্ঠ্রধর্মের অসীম শক্তি নিয়ে বিরাজমান। চলমান ৪০ বছরে ২১ বার রক্তাক্ত সামরিক বিদ্রোহের স্মৃতি নিয়ে জনতার মনে গভীর ক্ষত আজ ও বিদ্যমান। বিগত বিডিআরে বিদ্রোহের নামে সদর দফতর পিলখানায় সত্তরের ও বেশী সেনা কমকর্তা সহ অনেকে হতাহত হওয়ায় জাতি শোকস্তব্দ। শোকাহত বাংলাদেশ। “তোমার বদন খানি মলিন হলে / আমি নয়ন জলে ভাসি।” বিডিআর তরুন সদস্যদের বিদ্রোহের নামে হত্যাযজ্ঞের পেছনে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র রয়েছে কি না জানতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “চক্রান্ত চলছে, সতর্ক থাকুন।”
লেখক এস বড়য়া, সভাপতি, কানাডা বাংলাদেশ বৌদ্ধ পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধ গ্রন্থ প্রণেতা এবং প্রবাসী কলামিষ্ঠ।
No comments:
Post a Comment