Monday, November 12, 2012

খালেদা জিয়ার প্রতি শেখ হাসিনা - সর্প হয়ে দংশন, ওঝা হয়ে ঝাড়ার খেলা বন্ধ করুন

 
নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ১২-১১-২০১২

শেখ হাসিনা
শেখ হাসিনা
রামুতে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে ‘খেলা’ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কক্সবাজার সফরে খালেদা জিয়ার দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলায় একটা কথা আছে না, সর্প হয়ে দংশন করে ওঝা হয়ে ঝাড়ে। আমি বিএনপির নেত্রীকে বলব, আপনি সর্প হয়ে দংশন করেন আর ওঝা হয়ে ঝাড়েন। এই খেলাটা বন্ধ করেন।’
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। রামুর বৌদ্ধবিহার ও বসতিতে হামলার ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেতা সেখানে গেছেন। আমাদের লক্ষ রাখতে হবে, তিনি ঘটনার কত দিন পর সেখানে গেলেন।’
রামু দেশের বাইরে না ভেতরে—এমন প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উনি চীনে গেলেন। উনি ভারতে গেলেন। এত দিন পর উনি রামুতে যাওয়ার সময় পেলেন!’
বিরোধী দলের নেতাকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওনার তো আবার ভুলে যাওয়ার ইতিহাস আছে। দিল্লি গিয়ে কী হয়েছিল? ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় থাকতে উনি ভারতে গিয়ে গঙ্গার পানির কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলেন। এবার তিস্তা আর টিপাইমুখের কথাও ভুলে গেছেন কি না, যাচাই করে দেখুন।’
প্রসঙ্গত, খালেদা জিয়া গত শনিবার রামুর জনসভায় অভিযোগ করেছেন, সাম্প্রদায়িক হামলার পেছনে সরকারের হাত আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল যুবলীগের আলোচনা সভায় তারই জবাব দেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে রামুতে ক্ষতিগ্রস্ত প্যাগোডা নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ, সেনাবাহিনী মোতায়েনসহ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের বর্ণনা দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে ক্ষমতার মালিক জনগণ। বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানে এটি উল্লেখ করে গেছেন। তাই আমরা যে জনগণের ক্ষমতায়নের কথা বলি, এটা নতুন কিছু না। এটা আমরা শিখেছি সংবিধান থেকে, জনগণের কাছ থেকে। কাজেই ক্ষমতায় কে থাকবে, এটা জনগণই ঠিক করবে। আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি। জনগণের জন্য কী কী করতে হবে, তা আমাদের শেখাতে হবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে ছয় হাজারের মতো নির্বাচন হয়েছে। আগে নির্বাচন মানেই ছিল আতঙ্ক, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, ভোটদানে বাধা দেওয়া। সবাই নিশ্চয় স্বীকার করবেন, মহাজোট সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। অনেক নির্বাচনে সরকারি দলের প্রার্থীরা পরাজিত হলেও জনগণের রায়কে মেনে নেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের ক্ষমতার দাপট দেখানো হয়নি। মানুষ যাঁকে ভোট দিয়েছে, তিনিই নির্বাচিত হয়েছেন।’
দেশে সুষম উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বলেন, ধনীরা শুধু ধনী হবে, গরিবরা শুধু গরিব হবে—এটা গ্রহণযোগ্য নয়। সামরিক শাসনামলে দেশে ঋণখেলাপি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। নানা সুবিধা নিয়ে তাঁরা সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। আর এঁদের ওপর ভিত্তি করেই সামরিক শাসকেরা টিকে ছিলেন। বর্তমানে দেশের সব অঞ্চলে সমান উন্নয়ন হচ্ছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকার কোনো বৈষম্য আনেনি। সব অঞ্চলে সমান উন্নয়ন হবে।
যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রমুখ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য দেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ।
এর আগে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র চত্বরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন ওমর ফারুক চৌধুরী। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জনগণের ক্ষমতায়ন: রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দর্শন শীর্ষক বইয়ের ছবি নিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করে যুবলীগ। জয়ীতা প্রকাশনীর স্বত্তাধিকারি ইয়াসীন কবীর বইটির ডিজিটাল সংস্করণ প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন, প্রধানমন্ত্রী আইপ্যাডে ক্লিক করে এর উদ্বোধন করেন। 
সম্মাননা: যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই অনুষ্ঠানে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য কয়েকজনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। ক্রিকেটে সাকিব আল হাসান, এভারেস্ট বিজয়ের জন্য মুসা ইব্রাহিম, দৃষ্টিহীনদের নিয়ে কাজের জন্য ‘মঙ্গলদীপ’, ‘আই সার্চ’ অ্যাপ্লিকেশন প্রতিষ্ঠাতা রুহুল আমিন সজীব এবং ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের উদ্ভাবক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে সম্মাননা গ্রহণ করেন। প্রথম নারী এভারেস্ট আরোহণকারী নিশাত মজুমদারের বাবা আবদুল মান্নান মজুমদার এবং পাটের জীবনরহস্য উদ্ভাবনকারী অধ্যাপক মাকসুদুল আলমের পক্ষে আল আমিন কবীর প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সম্মাননা গ্রহণ করেন। এ ছাড়া এভারেস্টে আরোহণকারী বাংলাদেশের আরেক নারী ওয়াসফিয়া নাজনিনকেও সম্মাননা দেওয়া হয়।

No comments:

Post a Comment