নভেম্বর ৪, ২০১২
আহসান সুমন : বিশেষ প্রতিবেদক, সিবিএন :
জানা আর অজানা কিছু সূত্র মিলেছে অনেক আগেই। তা হল উত্তমের আইডি থেকে বন্ধু ফারুকের ফেইসবুকে ট্যাগ করা ছবিটি কম্পিউটারে দেখেই চিৎকার দিয়ে মানুষ জড়ো করেছিল মুক্তাদির। সেদিন ফেইসবুকে পবিত্র কোরআন শরীফ অবমাননাকর ওই ছবিটি ছড়ানোর কারণে ২৯ সেপ্টেম্বর রামু ও পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর উখিয়া-টেকনাফের বৌদ্ধ মন্দির এবং বড়–য়াদের বসত বাড়িতে হামলা, লুটপাট আর অগ্নিসংযোগের ভয়াবহ কিছু ঘটনা ঘটানো হয়।
জানা যায়, উত্তম, ফারুক ও মুত্তাদিরের বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগের তীর ছুড়ে দেয়া হলেও তা মুলত: ইস্যু হিসেবে ব্যাবহার হয়েছে বলে ধারনা করছেন অনেকেই। কারণ খতিয়ে দেখে জানা গেলো, হামলাকারীদের পূর্বপরিকল্পনার প্রমাণ সরূপ মন্দির পুড়ানোতে গ্যান পাওডার ব্যবহার এবং গ্যানেট উদ্ধার হওয়াসহ নানা উপাদান খুঁজে পেয়েছেন সিআইডি টিম। তাছাড়া বিভিন্ন জায়গা থেকে পূর্বপ্রস্তুতির আরও অনেক আলামত উদ্ধার হয়েছিল সেদিন। হঠাৎ কোথা থেকে আসলো এতো লোক। লাঠি হাতে নিয়ে ট্রাক বোঝাই করে কারা এসেছিল। কারা-ই বা লুট করেছে রম্যভূমি রামুর শত শত বছরের পুরোনোসব মুল্যবান বৌদ্ধ মুর্তি। রোহিঙ্গা জঙ্গি বা কোন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী অর্থের যোগান দিয়েছে তা যথাযথ হিসেব মিলাতে পারলেই খুঁজে পেতে দেরী হবেনা আসল সমীকরণ। সেদিন দুস্কৃতিকারীদের দেয়া প্রতিহিংসার ওই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের চেনায় লালিত দীর্ঘবছরের অসাম্প্রদায়িক মানবতাও। অপরদিকে কৌশলে বারবার পর্দার আড়ালেই রয়ে যাচ্ছে ইন্দনদাতারা। যদিও ঘটনার পর থেকে প্রাপ্ত আলামতের সূত্র মতে পেছনে লুকিয়ে থাকা মুল সমীকরণ মিলাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সরকার, বিরোধী দল, গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন। এরই মধ্যে পৌনে ৩ শতাধিক সন্ধেহভাজন মানুষকে আটক করা হয়। তাছাড়া ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন সিনিয়র রাজনৈতিক নেতার বসত বাড়িতে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন বিষেশ অভিযান চালিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। অপরদিকে আটক হওয়ার আতংকে অনেক সিনিয়র রাজনৈতিক নেতা এখন গা ঢাকা দিয়েছেন। সরকারের পক্ষে পুলিশের আইজিপি’র দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনের সূত্র মতে জড়িতদের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বেশ কিয়েকজন সিনিয়র নেতাও রয়েছে। ফলে দেরীতে হলেও ধীরে ধীরে বের হয়ে আসতে শুরু করেছে রামু, উখিয়া ও টেকনাফের বৌদ্ধ পল্লীতে হামলায় জড়িত নাটের গুরুদের পরিচয়। কিন্তু রামুর বৌদ্ধ মন্দির ও উখিয়া-টেকনাফে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনাটি এক মাস সময় সীমা পেরিয়ে গেলেও নানা কারনে কোন ভাবেই মিলছেনা সহিংস এসব ঘটনার আসল সমীকরণ।
বিভিন্ন সুত্রে প্রাপ্ত তথ্যে আরও জানা যায়, রামু, উখিয়া ও বৌদ্ধ বসতি ও বিহারে হামলার ঘটনায় রোহিঙ্গা ছাড়াও স্থানীয় ২ শতাধিক ব্যক্তির স¤পৃক্ততা পেয়েছে প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি। এছাড়াও মিয়ানমারের জঙ্গি সংগঠন আরএসওসহ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা এ ঘটনায় সরাসরি অর্থের জোগান দিয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ঘটনার পরদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রামুর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেন। চট্রগ্রাম রেঞ্জের পুলিশের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোঃ নুরুল ইসলামকে প্রধান করে গঠিত ৪ সদস্য বিশিষ্ট ওই তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করেছে। দাখিল করেছে ওই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন। তদন্ত কমিটির সদস্য কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ঘটনায় রোহিঙ্গা ছাড়াও ২ শতাধিক ব্যক্তির স¤পৃক্ততা পাওয়া গেছে। ভিডিও দৃশ্য এবং ছবি দেখে তােেদর শনাক্ত করা হয়েছে। অপরএকটি সুত্র বলছে, হামলাকারীদের মধ্যে রোহিঙ্গা জঙ্গি ছাড়াও আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জামায়াতসহ অন্যান্য ইসলামীপন্থি দলের নেতাকর্মীও শনাক্ত করা হয়েছে। সেই সাথে জড়িত ব্যক্তিদের নাম পরিচয় তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। জানা গেছে, ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর রামু, উখিয়া ও টেকনাফের বৌদ্ধবসতি এবং বিহারে হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ২০টি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে ওয়ামী সদস্যসহ এ পর্যন্ত আটক হয়েছে পৌনে ৩০০ জন। এবং এর মধ্যে ৭ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এদের স্বীকারোক্তিতে পুলিশ চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, আটককৃতদের দেয়া জবানবন্দির সূত্র ধরে পুলিশ আরও অনেককে সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করতে পেরেছেন আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অনুসন্ধান টিম।
এবিষয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার সেলিম মোঃ জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর রামু, উখিয়া ও টেকনাফে হামলার ঘটনায় দায়ের করা ২০টি মামলায় পুলিশ এ পর্যন্ত মোট প্রায় পৌনে ৩০০জনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে। এবং মূল হোতাদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।
তিনি আরও জানান, এর আগে ১৭ টি মামলার এজাহারে ৩শ ২১ জন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছিল। পরে দায়ের করা আরও ৩টি মামলায় মোট কতজনকে আসামী করা হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। এছাড়া মামলায় আরও অজ্ঞাতপরিচয় ১৪ হাজার ৬শ ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্য থেকে বেশিরভাগ আটক করা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে এজাহারভুক্ত আসামি রয়েছেন ১শ ৩০ জন। অপর ৯০ জনকে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া আটককৃতদের মধ্যে ৭ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে পুলিশ সুত্র জানায়। একই সঙ্গে ঘটনায় ব্যবহৃত ২টি ট্রাক ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করা হয়েছে। এদিকে আদালত সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থেকে ট্রাকসহ আটক হেলপার রামু উপজেলার দক্ষিণ রাজারকুলের বদিউল আলমের ছেলে রমজান আলী (২০) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। উখিয়ায় আটক বোরহান উদ্দিন নামে এক যুবক ঘটনায় জড়িত আরও ৯ জনের নাম প্রকাশ করে কা. বি. ১৬৪ ধারামতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বলে আদালত সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সেই সাথে ঘটনার দিন ব্যবহৃত পিকআপ ভ্যানসহ আটক মোহাম্মদ রুবেল আরও ৪ জনের নাম উল্লেখ করে
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। রামুতে আটক আবুল হাশেম রামুর পূর্ব কাটালিয়া পাড়ার সুধাংশু বড়–য়ার বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৮ জনের নাম প্রকাশ করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
উখিয়ায় আটক কামাল পশ্চিম মরিচ্যা দীপঙ্কর বৌদ্ধ বিহারে হামলার ঘটনায় তিনিসহ জড়িত ৫ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার আরও জানান, স্বীকারোক্তিতে যাদের নাম পাওয়া গেছে, তাদের আটকের চেষ্টা চলছে। সেই সঙ্গে ঘটনায় জড়িত শনাক্ত করা ব্যক্তিদেরও আটকের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সর্বশেষ তদন্ত প্রতিবেদনে মুল পরিকল্পনাকারী বা সরাসরি জড়িতদের অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমদের বাসায় ডিবি পুলিশ অভিযান চালায়। তবে অভিযানের আগেই পালিয়ে যান চেয়ারম্যান। যদিও কি কারণে এই অভিযান চালানো হয় এ বিষয়ে মুখ খুলছেনা পুলিশ। তবে তাকে গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে অভিযান চালানো হয়েছে বলে অসমর্থিত একটি সূত্র জানিয়েছে। অভিযানের কথা স্বীকার করেছে কক্সবাজার ডিবি। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজারের রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের একটি দল নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা কমপ্লেক্সের পাশে উপজেলা চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমদের বাসায় অভিযান চালায়। পুলিশ এ সময় তার বাসা ঘেরাও করে রাখে ও বাসার ভিতরে তল্লাশী চলায়। ঘটনার খবর পেয়ে আগে ভাগেই সটকে পরেন জামায়াত সমর্থিত এই উপজেলা চেয়ারম্যান। ডিবি পুলিশের নেতৃত্ব দেন কক্সবাজার ডিবির কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর জাকির হোসেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, উপজেলা চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যেই এ অভিযান চালানো হয়েছে। তবে আগে ভাগে খবর পৌঁছে যাওয়াতে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান বাসা থেকে পালিয়ে যায়। অপরদিকে উখিয়ায় বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার মামলায় অভিযুক্ত উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা এডভোকেট শাহজালাল চৌধুরীও গা ঢাকা দিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তিনি সম্প্রতি উচ্চ আদালতে বেশ কয়েকবার আগাম জামিন চেয়েও জামিন পাননি বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম সুত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জানা আর অজানা কিছু সূত্র মিলেছে অনেক আগেই। তা হল উত্তমের আইডি থেকে বন্ধু ফারুকের ফেইসবুকে ট্যাগ করা ছবিটি কম্পিউটারে দেখেই চিৎকার দিয়ে মানুষ জড়ো করেছিল মুক্তাদির। সেদিন ফেইসবুকে পবিত্র কোরআন শরীফ অবমাননাকর ওই ছবিটি ছড়ানোর কারণে ২৯ সেপ্টেম্বর রামু ও পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর উখিয়া-টেকনাফের বৌদ্ধ মন্দির এবং বড়–য়াদের বসত বাড়িতে হামলা, লুটপাট আর অগ্নিসংযোগের ভয়াবহ কিছু ঘটনা ঘটানো হয়।
জানা যায়, উত্তম, ফারুক ও মুত্তাদিরের বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগের তীর ছুড়ে দেয়া হলেও তা মুলত: ইস্যু হিসেবে ব্যাবহার হয়েছে বলে ধারনা করছেন অনেকেই। কারণ খতিয়ে দেখে জানা গেলো, হামলাকারীদের পূর্বপরিকল্পনার প্রমাণ সরূপ মন্দির পুড়ানোতে গ্যান পাওডার ব্যবহার এবং গ্যানেট উদ্ধার হওয়াসহ নানা উপাদান খুঁজে পেয়েছেন সিআইডি টিম। তাছাড়া বিভিন্ন জায়গা থেকে পূর্বপ্রস্তুতির আরও অনেক আলামত উদ্ধার হয়েছিল সেদিন। হঠাৎ কোথা থেকে আসলো এতো লোক। লাঠি হাতে নিয়ে ট্রাক বোঝাই করে কারা এসেছিল। কারা-ই বা লুট করেছে রম্যভূমি রামুর শত শত বছরের পুরোনোসব মুল্যবান বৌদ্ধ মুর্তি। রোহিঙ্গা জঙ্গি বা কোন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী অর্থের যোগান দিয়েছে তা যথাযথ হিসেব মিলাতে পারলেই খুঁজে পেতে দেরী হবেনা আসল সমীকরণ। সেদিন দুস্কৃতিকারীদের দেয়া প্রতিহিংসার ওই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের চেনায় লালিত দীর্ঘবছরের অসাম্প্রদায়িক মানবতাও। অপরদিকে কৌশলে বারবার পর্দার আড়ালেই রয়ে যাচ্ছে ইন্দনদাতারা। যদিও ঘটনার পর থেকে প্রাপ্ত আলামতের সূত্র মতে পেছনে লুকিয়ে থাকা মুল সমীকরণ মিলাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সরকার, বিরোধী দল, গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন। এরই মধ্যে পৌনে ৩ শতাধিক সন্ধেহভাজন মানুষকে আটক করা হয়। তাছাড়া ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন সিনিয়র রাজনৈতিক নেতার বসত বাড়িতে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন বিষেশ অভিযান চালিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। অপরদিকে আটক হওয়ার আতংকে অনেক সিনিয়র রাজনৈতিক নেতা এখন গা ঢাকা দিয়েছেন। সরকারের পক্ষে পুলিশের আইজিপি’র দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনের সূত্র মতে জড়িতদের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বেশ কিয়েকজন সিনিয়র নেতাও রয়েছে। ফলে দেরীতে হলেও ধীরে ধীরে বের হয়ে আসতে শুরু করেছে রামু, উখিয়া ও টেকনাফের বৌদ্ধ পল্লীতে হামলায় জড়িত নাটের গুরুদের পরিচয়। কিন্তু রামুর বৌদ্ধ মন্দির ও উখিয়া-টেকনাফে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনাটি এক মাস সময় সীমা পেরিয়ে গেলেও নানা কারনে কোন ভাবেই মিলছেনা সহিংস এসব ঘটনার আসল সমীকরণ।
বিভিন্ন সুত্রে প্রাপ্ত তথ্যে আরও জানা যায়, রামু, উখিয়া ও বৌদ্ধ বসতি ও বিহারে হামলার ঘটনায় রোহিঙ্গা ছাড়াও স্থানীয় ২ শতাধিক ব্যক্তির স¤পৃক্ততা পেয়েছে প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি। এছাড়াও মিয়ানমারের জঙ্গি সংগঠন আরএসওসহ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা এ ঘটনায় সরাসরি অর্থের জোগান দিয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ঘটনার পরদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রামুর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেন। চট্রগ্রাম রেঞ্জের পুলিশের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোঃ নুরুল ইসলামকে প্রধান করে গঠিত ৪ সদস্য বিশিষ্ট ওই তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করেছে। দাখিল করেছে ওই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন। তদন্ত কমিটির সদস্য কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ঘটনায় রোহিঙ্গা ছাড়াও ২ শতাধিক ব্যক্তির স¤পৃক্ততা পাওয়া গেছে। ভিডিও দৃশ্য এবং ছবি দেখে তােেদর শনাক্ত করা হয়েছে। অপরএকটি সুত্র বলছে, হামলাকারীদের মধ্যে রোহিঙ্গা জঙ্গি ছাড়াও আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জামায়াতসহ অন্যান্য ইসলামীপন্থি দলের নেতাকর্মীও শনাক্ত করা হয়েছে। সেই সাথে জড়িত ব্যক্তিদের নাম পরিচয় তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। জানা গেছে, ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর রামু, উখিয়া ও টেকনাফের বৌদ্ধবসতি এবং বিহারে হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ২০টি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে ওয়ামী সদস্যসহ এ পর্যন্ত আটক হয়েছে পৌনে ৩০০ জন। এবং এর মধ্যে ৭ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এদের স্বীকারোক্তিতে পুলিশ চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, আটককৃতদের দেয়া জবানবন্দির সূত্র ধরে পুলিশ আরও অনেককে সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করতে পেরেছেন আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অনুসন্ধান টিম।
এবিষয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার সেলিম মোঃ জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর রামু, উখিয়া ও টেকনাফে হামলার ঘটনায় দায়ের করা ২০টি মামলায় পুলিশ এ পর্যন্ত মোট প্রায় পৌনে ৩০০জনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে। এবং মূল হোতাদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।
তিনি আরও জানান, এর আগে ১৭ টি মামলার এজাহারে ৩শ ২১ জন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছিল। পরে দায়ের করা আরও ৩টি মামলায় মোট কতজনকে আসামী করা হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। এছাড়া মামলায় আরও অজ্ঞাতপরিচয় ১৪ হাজার ৬শ ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্য থেকে বেশিরভাগ আটক করা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে এজাহারভুক্ত আসামি রয়েছেন ১শ ৩০ জন। অপর ৯০ জনকে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া আটককৃতদের মধ্যে ৭ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে পুলিশ সুত্র জানায়। একই সঙ্গে ঘটনায় ব্যবহৃত ২টি ট্রাক ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করা হয়েছে। এদিকে আদালত সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থেকে ট্রাকসহ আটক হেলপার রামু উপজেলার দক্ষিণ রাজারকুলের বদিউল আলমের ছেলে রমজান আলী (২০) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। উখিয়ায় আটক বোরহান উদ্দিন নামে এক যুবক ঘটনায় জড়িত আরও ৯ জনের নাম প্রকাশ করে কা. বি. ১৬৪ ধারামতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বলে আদালত সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সেই সাথে ঘটনার দিন ব্যবহৃত পিকআপ ভ্যানসহ আটক মোহাম্মদ রুবেল আরও ৪ জনের নাম উল্লেখ করে
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। রামুতে আটক আবুল হাশেম রামুর পূর্ব কাটালিয়া পাড়ার সুধাংশু বড়–য়ার বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৮ জনের নাম প্রকাশ করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
উখিয়ায় আটক কামাল পশ্চিম মরিচ্যা দীপঙ্কর বৌদ্ধ বিহারে হামলার ঘটনায় তিনিসহ জড়িত ৫ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার আরও জানান, স্বীকারোক্তিতে যাদের নাম পাওয়া গেছে, তাদের আটকের চেষ্টা চলছে। সেই সঙ্গে ঘটনায় জড়িত শনাক্ত করা ব্যক্তিদেরও আটকের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সর্বশেষ তদন্ত প্রতিবেদনে মুল পরিকল্পনাকারী বা সরাসরি জড়িতদের অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমদের বাসায় ডিবি পুলিশ অভিযান চালায়। তবে অভিযানের আগেই পালিয়ে যান চেয়ারম্যান। যদিও কি কারণে এই অভিযান চালানো হয় এ বিষয়ে মুখ খুলছেনা পুলিশ। তবে তাকে গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে অভিযান চালানো হয়েছে বলে অসমর্থিত একটি সূত্র জানিয়েছে। অভিযানের কথা স্বীকার করেছে কক্সবাজার ডিবি। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজারের রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের একটি দল নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা কমপ্লেক্সের পাশে উপজেলা চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমদের বাসায় অভিযান চালায়। পুলিশ এ সময় তার বাসা ঘেরাও করে রাখে ও বাসার ভিতরে তল্লাশী চলায়। ঘটনার খবর পেয়ে আগে ভাগেই সটকে পরেন জামায়াত সমর্থিত এই উপজেলা চেয়ারম্যান। ডিবি পুলিশের নেতৃত্ব দেন কক্সবাজার ডিবির কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর জাকির হোসেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, উপজেলা চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যেই এ অভিযান চালানো হয়েছে। তবে আগে ভাগে খবর পৌঁছে যাওয়াতে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান বাসা থেকে পালিয়ে যায়। অপরদিকে উখিয়ায় বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার মামলায় অভিযুক্ত উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা এডভোকেট শাহজালাল চৌধুরীও গা ঢাকা দিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তিনি সম্প্রতি উচ্চ আদালতে বেশ কয়েকবার আগাম জামিন চেয়েও জামিন পাননি বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম সুত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
No comments:
Post a Comment