Saturday, November 10, 2012

রামুর ঘটনার গুরুত্ব বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলেন ডিসি এসপি



লেখক: ইত্তেফাক রিপোর্ট  |  রবিবার, ১১ নভেম্বর ২০১২, ২৭ কার্তিক ১৪১৯
পুলিশের তদন্ত রিপোর্ট
কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপর হামলা এবং বিহার ও মন্দিরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় রামুর তত্কালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে নজিবুল ইসলামের গাফিলতি পেয়েছে পুলিশের তদন্ত কমিটি।
কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংঘটিত ওই হামলার ঘটনা নিয়ন্ত্রণে তিনি সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে যথাসময় সঠিক তথ্য দিয়ে অবহিত না করে সরকারি দায়িত্ব পালনে চরম গাফিলতির পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়া কক্সবাজারের সেই সময়ের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জয়নুল বারী এবং পুলিশ সুপার সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরও ঘটনার গুরুত্ব উপলব্ধিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। জেলায় দেড় বছর যাবত্ কর্মরত থাকার পরও পুলিশ সুপারের জনসংযোগ কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে না থাকা এবং পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন শরীফ অবমাননার বিষয়টির গুরুত্ব ও চূড়ান্ত পরিণতি কোন পর্যায়ে যেতে পারে তা অনুধাবনে তিনি মুন্সীয়ানার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। যার ফলে যথাসময়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন না করায় হামলা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের ডিভিশন বেঞ্চে সম্প্রতি এই প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
প্রসঙ্গত রামুর ঘটনার পর চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা জয়নুল বারীকে ওএসডি করা হয়। প্রত্যাহার করা হয়েছে পুলিশ সুপার সেলিমকেও। এছাড়া ওসি নজিবুলকে ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যেই প্রত্যাহার করা হয়।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক মো. নওশের আলীকে প্রধান করে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনার সময় কক্সবাজারের সার্কিট হাউসে জেলা প্রশাসকের বিদায়ী অনুষ্ঠান চলছিল। সেখানে জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন সব কর্মকর্তারা ছিলেন। জেলা প্রশাসক সংবাদ পাওয়ার পরও এ ধরনের স্পর্শকাতর এবং ভয়াবহ জটিল পরিস্থিতির চূড়ান্ত পরিণতি অনুধাবন করতে না পারায় তিনি নিজে ঘটনাস্থলে যাননি। ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তাকেও পাঠাননি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ সুপার রাত ১০টায় ঘটনাটি শোনেন। তিনি প্রথম দফায় ১০ জন এবং পরবর্তী সময়ে দুই দফার মোট ৩০ জনের বাহিনী পাঠিয়েছিলেন। ধ্বংসাত্মক ঘটনা চলাকালে রামুতে উপস্থিত হলেও তা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেননি তারা। প্রতিবেদনে বলা হয়, রামুর ওসি নজিবুল ফেসবুকের মাধ্যমে পবিত্র কোরআন শরীফ অবমাননার ছবিগুলো প্রকাশিত ও প্রচারিত হওয়ার ঘটনাটি যথাসময়ে জানতে পারেননি। যদিও ঘটনাটি ঘটেছে থানা সদরে অবস্থিত জনবহুল রামু বাজারে। প্রাথমিক বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণকারী নেতৃবৃন্দ ওসির পরিচিত হওয়ার প্রেক্ষিতে তিনি ঘটনাটির গুরুত্ব অনুধাবন করতে ব্যর্থ হন। এই কারণে তিনি ঘটনার শুরুতে প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণে পারদর্শিতা দেখাতে ব্যর্থ হন। এছাড়া পুরো বিষয়টি পুলিশ সুপারকে যথাসময়ে অবহিত না করায় ঘটনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সুপার-এর নিকট হতে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা নিতে না পারার কারণে ঘটনাটির বিস্তার ও ব্যাপকতা রোধ করতে তিনি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট ইউনূস আলী আকন্দের দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি নাঈমা হায়দারের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ পুলিশের আইজিকে তদন্ত কমিটি গঠন করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। ঐ নির্দেশ মোতাবেক কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

No comments:

Post a Comment