Saturday, December 8, 2012

ভারতের হায়দরাবাদে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীর সংখ্যা বাড়ছে

Prothom Alo
 তারিখ: ০৪-১২-২০১২
ভারতের হায়দরাবাদের হুসেইন সাগরের বুদ্ধমূর্তি।
ভারতের হায়দরাবাদের হুসেইন সাগরের বুদ্ধমূর্তি।
ছবি . ইন্টারনেট


বৌদ্ধধর্মের যাত্রা শুরু হয়েছিল ভারত থেকে। কিন্তু ইতিহাস বলে, এই ভারতেই ভীষণ বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। অনেকে পুরনো ধর্ম ছেড়ে নতুন ধর্মও গ্রহণ করে। কয়েক শ বছর পর আবারও বৌদ্ধধর্মের দিকে মুখ ফেরাতে শুরু করেছে ভারতের হায়দরাবাদের অনেকে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে আজ মঙ্গলবার বলা হয়েছে, প্রতিবছর শত শত মানুষ বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করছে। 
হায়দরাবাদ রাজ্যের একটি বহুজাতিক সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বি রাজকুমার বলেন, ‘আমি এক বছর ধরে বৌদ্ধধর্ম পালন করছি। আমার কাছে এটি খুবই অনাড়ম্বর এবং জীবন্ত। আজকাল আমার মতো অনেক তরুণ সুখশান্তি চান। আমার মতে বৌদ্ধধর্মই হলো এর পথ।’
রাজকুমারের সুরে কথা বলেছেন আরও শত শত তরুণ। ২০০২ সালে ওই রাজ্যে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীর সংখ্যা হাতে গোনা যেত, কিন্তু, এখন তা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। শহরে এই হার অনেক বেশি। রাজ্যটিতে ১৫০টি বৌদ্ধ স্থাপনা আছে। এসবের মধ্যে প্রসিদ্ধ হলো হুসেইন সাগরের বুদ্ধমূর্তি। এ মূর্তিটি অতীতের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের কথা মনে করিয়ে দেয়। 
খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতকে উপকূলীয় অঞ্চলটিতে বৌদ্ধধর্ম বেশ জনপ্রিয় ছিল। সে সময় বৌদ্ধধর্মের তিনটি প্রধান শাখা চার্বাক, মহাযান ও বজ্রযান চর্চা করা হতো। 
পরের শতকগুলোতে হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের বিকাশ ঘটলে বৌদ্ধধর্মের চল কমে যায়। ঐতিহাসিকদের ধারণা, হিন্দু ও মুসলিম আমলে অনেক বৌদ্ধবিহারের ধ্বংস ধর্মটির পতনের মূল কারণ।
ভিক্ষু ও স্থানীয় লোকেরা জানান, হায়দরাবাদে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীর সংখ্যা বৃদ্ধি না হলে হয়তো মঠগুলো আবার নতুন করে তৈরি করা হতো না।
মজার বিষয় হলো, নতুন ধর্মাবলম্বীদের অধিকাংশই তরুণ, যাঁদের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছর। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রাজা চৌধুরী বলেন, ‘বৌদ্ধধর্ম উগ্রবাদের বদলে একটি মধ্যম পথ অবলম্বন করে। আমার পেশাগত জীবনে এর একটি মূল্য আছে। নিজেকে স্থির রেখে কিভাবে ঝগড়াটে সহকর্মী বা উগ্র কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা যায়, তা আমি এখান থেকে শিখেছি।’ কিছুদিন আগে রাজ তাঁর স্ত্রী ও সন্তান থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘ধ্যানের মাধ্যমে আমি আমার ভেতরের সত্তাকে জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি। এরপর স্ত্রী ও সন্তানকে ফিরে পেয়েছি। এখন আমি একজন সুখী মানুষ।’
ভিক্ষুরা বলছেন, বৌদ্ধ দর্শনের প্রতি এত মানুষের আকর্ষণের পেছনে কাজ করছে বিভিন্ন চাপ, পেশাগত জীবনের ঝামেলা, পারিবারিক সম্পর্কের জটিলতা ও সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে চলাসহ বেশ কিছু বিষয়। 
রাজ্যের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধবিহার হলো মাহেন্দ্র হিলসের আনন্দ বৌদ্ধবিহার। এখানে প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে। ছুটির দিনে তা অনেক গুণ বেড়ে যায়। এ কারণে বিহারে পরামর্শ দানকারী ভিক্ষুর সংখ্যা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। 
আনন্দ বৌদ্ধবিহার ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সংঘরক্ষিত মহাথেরো বলেন, ‘এখানে দর্শনার্থীরা তাঁদের পারিবারিক ও পেশাগত সমস্যা, সম্পর্ক নিয়ে জটিলতা, পড়াশোনায় ব্যর্থতা এবং দুর্বল স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা করেন। এসব সমস্যা মোকাবিলায় তাঁরা কী করতে পারেন, তা আমাদের কাছে জানতে চান। তাঁদের সহায়তা করতে পেরে আমরা ধন্য।’
একটি টেলিকম কোম্পানিতে কাজ করেন রাজেশ সুঠারি। তিনি প্রায় এক বছর আগে ‘যুব বৌদ্ধ দল’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বলেন, ‘কীভাবে বৌদ্ধ ধর্ম পালন করতে হবে, অনেকেই তা আমাদের কাছে জানতে চান। বৌদ্ধধর্ম মেনে অনেক মানুষ এখন একটি স্থায়ী পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবন যাপন করতে পারছেন। অনেকেই তাঁদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন।’

No comments:

Post a Comment