Saturday, December 29, 2012

নির্দেশদাতারা ঘোরেফেরে চুনোপুঁটিরা কারাগারে


শনিবার | ২৯ ডিসেম্বর ২০১২ | ১৫ পৌষ ১৪১৯ | ১৫ সফর ১৪৩৪

সারোয়ার সুমন, চট্টগ্রাম/খালেদ শহীদ, রামু

রামু ট্র্যাজেডির আজ তিন মাস পূর্ণ হলেও হামলার নির্দেশদাতাদের এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি এ ঘটনায় নাইক্ষ্যংছড়ির জামায়াত সমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদকে অন্যতম ইন্ধনদাতা হিসেবে চিহ্নিত করলেও এখন পর্যন্ত তার টিকিটিও ছুঁতে পারেনি পুলিশ। বরং প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সামনেই ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে সালাম গ্রহণ করেন জামায়াতের এই নেতা! পলাতক আসামির এভাবে সালাম গ্রহণের ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলে পুলিশ ও গোয়েন্দারা তার বাড়িতে অভিযান চালায়। কিন্তু পুলিশকে বোকা বানিয়ে 'পলাতকই' থাকেন এই জামায়াত নেতা! শুধু তোফায়েল নন; স্মরণকালের এই জঘন্যতম ঘটনায় পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি নেপথ্যে থাকা কোনো গডফাদারকেই। গত ২৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বর 
রামু, টেকনাফ, উখিয়া ও চট্টগ্রামের পটিয়ায় অন্তত ৩০টি বৌদ্ধপল্লীতে ভাংচুর, লুটপাট ও অগি্নসংযোগ করা হলেও মামলার এজাহারে থাকা অর্ধেক আসামিকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। কক্সবাজারের ঘটনায় ১৭টি মামলা দায়ের হলেও এখন পর্যন্ত কোনো মামলারই চার্জশিট দিতে পারেনি পুলিশ। নেপথ্য নায়করা অন্তরালে থাকলেও পুলিশ এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪২৭ জনকে আটক করেছে। তবে আটক ব্যক্তিদের বেশিরভাগই সন্দেহভাজন! আবার তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্টে স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বহীনতার কথা উল্লেখ করলেও এখন পর্যন্ত শাস্তি নিশ্চিত হয়নি কারোরই। আইওয়াশ হিসেবে তৎকালীন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, রামু থানার ওসি ও নাইক্ষ্যংছড়ির ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়। 
এ প্রসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ূয়া বলেন, 'কক্সবাজার ও রামুর ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে ভবিষ্যতে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে। সরকারকে অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে তদন্ত কমিটির সুপারিশ। গ্রেফতার করতে হবে নেপথ্যের সব ইন্ধনদাতাকেও।' 
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার নুরুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটি ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ২০৫ ব্যক্তির নাম-ঠিকানা উল্লেখ করেছে তাদের রিপোর্টে। 
তালিকা দেওয়ার পরও গ্রেফতার হয়নি অনেকে : রামু পুলিশ এখন পর্যন্ত এজাহারে উলি্লখিত ৭৮ ও তদন্তে সন্দেহভাজন ৭১ আসামিকে গ্রেফতার করেছে। অথচ সরকারি তদন্ত দল ২০৫ জনের নাম উল্লেখ করে রিপোর্ট দেয়। আবার বৌদ্ধ সমিতিও রামুতে হামলা-ভাংচুর-অগি্নসংযোগের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়। এ তালিকার অনেকে এখনও গ্রেফতার হয়নি। এ তালিকায় নাম রয়েছে রাহামত উল্লাহ, আবদুল কাদের, জাফর আলম, আবদুছ ছালাম, সৈয়দ আলম, মৌলভী নুরুল ইসলাম, আবদুল্লাহ, সেয়াফত আলী, হেলাল, ফজল, ওয়াদুল, সাদ্দাম হোসেন, রমজান আলী, ওসমান গণি, মোজাফ্ফর আহমদ, মৌলভী শফিক আহাম্মদ, হাফেজ হাবিবুল্লাহ, মেহেদী, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল কাশেম, মৌলভী ও হাফেজ আহমদ, রশিদ আহাম্মদ, মহিউদ্দিন, মৌলভী আবদুল রশিদ, আবুল ছৈয়দ, হানিফ, ছবি্বর আহমদ, বদিউল আলম, আমিনুর কবির, শফিউল কবির, সরওয়ার আলম, আবুল কাশেম, আবদুল মাসুদ, দেলোয়ার হোসেন, জহির আহমদ, দিদারুল আলম দিদার, আজিজ, জহির আহম্মদ, গিয়াসউদ্দিন, মিজান মেম্বার, সাফী, নুরুল উল্লাহ ও ইলিয়াসের।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আজাদ মিয়া বলেন, 'ইন্ধনদাতাদের গ্রেফতার করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। ৮ নভেম্বর আমি নতুন এ কর্মস্থলে যোগদান করার আগে আটকের সংখ্যা ছিল ২৯৮। এখন আটকের সংখ্যা ৪২৭। তখন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিল ৭ জন। এখন সেই সংখ্যা ২১। এই অগ্রগতি অব্যাহত থাকলে আশা করছি শিগগির এসব মামলার চার্জশিটও দিতে পারব আমরা।'

No comments:

Post a Comment