নওগাঁর
ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় বাড়লেও বাড়েনি আধুনিক
পর্যটন সুবিধা। জানা গেছে, গত
বছরের জুলাই মাস থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস
পর্যন্ত ১ হাজার ১৪০ জন বিদেশি পর্যটক ও ১ লাখ ১৭ হাজার ৪শ’ জন দেশী
দর্শনার্থী এ
বৌদ্ধবিহার পরিদর্শন করেছেন। এ ৮ মাসে বৌদ্ধবিহারে আসা দর্শনার্থীদের টিকিট বিক্রি
থেকে আয় হয়েছে ১৪ লাখ ৮৬ হাজার ৪শ’ টাকা। এ বৌদ্ধবিহার থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ
রাজস্ব আদায় হলেও এর উন্নয়নে সরকারের নেই কোন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। দুঃখজনক হলেও
সত্য এ ঐতিহাসিক স্থানকে ঘিরে এখনো আধুনিক পর্যটন সুবিধা গড়ে ওঠেনি। অনুন্নত যোগাযোগ
ব্যবস্থা ও ভাল মানের হোটেল-মোটেলের অভাবে শুধু দেশের নয় বিদেশি পর্যটকরাও এখানে
বেড়াতে এসে নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।
এ
বিহারে মোট ১৭৭টি ঘর রয়েছে। ঘরগুলোতে বৌদ্ধভিক্ষুরা বাস করতেন। বিহারের ঠিক মাঝখানে
রয়েছে একটি মন্দির। মন্দিরটি দৈর্ঘ্যে ৪শ’ ফুট, প্রস্থে প্রায় ৩৫০ ফুট ও উচ্চতায়
৭০ ফুট। কালের পরিক্রমায় মন্দিরের সবচেয়ে উপরের অংশ ধসে গেছে। বাইরের দেয়ালে
বুদ্ধমূর্তি, হিন্দুদের
দেবী মূর্তি ও প্রচুর পোড়ামাটির ফলকচিত্র রয়েছে। এসব চিত্রে
সাধারণ মানুষের জীবনগাথা ও আদিম জীবনাচার চিত্রিত হয়েছে। বিহারের মূল বেষ্টনির
দেয়াল প্রায় ২০ ফুট চওড়া। বেষ্টনির মধ্যে রয়েছে আরেকটি মন্দির। এছাড়া এর আশেপাশে
আরো কিছু স্থাপত্যের নিদর্শন দেখা যায়। বিহার থেকে ১৬০ ফুট দূরে রয়েছে ইট ও পাথর
দিয়ে বাঁধানো একটি ঘাট। এ ঘাটের পাশ দিয়ে সে সময় প্রবহমান একটি নদী ছিল। নরওয়ে সরকারের
আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে ১৯৯৩ সালে
এখানে একটি যাদুঘর তৈরি করা হয়। এ যাদুঘরে খলিফা হারুনুর রশিদের শাসনামলের রূপার
মুদ্রাসহ বিভিন্ন সময়ের প্রাচীন মুদ্রা, কয়েক হাজার পোড়ামাটির ফলকচিত্র, পাথরের
মূর্তি, তাম্রলিপি, শিলালিপি
ইত্যাদি স্থান পেয়েছে। এছাড়া বিহারের চারপাশের প্রাকৃতিক
সৌন্দর্যও পর্যটকদের সহজেই আকৃষ্ট করে। এছাড়া জেলা সদর থেকে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার
যাওয়ার রাস্তাটিরও করুণ অবস্থা। এ কারণে এখানে আসা পর্যটকদের প্রতিদিন চরম
দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিহারে কর্মরত কর্মকর্তা আবুল কালাম হোসেন জানান, বিহারের
চতুর্দিকে বাউন্ডারি ওয়াল না থাকায় অনেক দর্শনার্থী টিকিট না করেই খোলা
জায়গা দিয়ে প্রবেশ করে।
লেখক: মহাদেবপুর (নওগাঁ) সংবাদদাতা |
বুধবার , ২১ মার্চ ২০১২, ৭ চৈত্র ১৪১৮
No comments:
Post a Comment