Monday, April 2, 2012

সংখ্যালঘু ৭ টি পরিবারের বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে পুলিশের নীরব ভূমিকা॥ পূর্বপরিকল্পিত হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট।


    চারিদিক আগূণে পোড়ে ছাই হয়ে গেছে, চাকদহা গ্রামের ৭টি সংখ্যালঘু পরিবার। হাঁড়ি পাতিল, কাপড় ছোপড়, ঘরের সকল আস্বাব পএ আগূণে পোড়ে ছাড়কার হয়ে গেছে। সব হারিয়ে দীর্ঘশ্বাস  নিচ্ছে চাকদহা গ্রামের ৭টি সংখ্যালঘু পরিবার গূলো। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব পরিবারে সহায় সম্বল ইত্যাদি সবই ছিল। সোমবার সকালে এসব পরিবারে চলছে সব হারানোর হা হা কার বেদনা।  রোদে নেই মাথা গোঁজার ঠাই । গৃহবধূ থেকে স্কুলছাত্র সকলেই একটি পরিধেয় বস্ত্রে এখন দিন কাটাচ্ছে। রবিবার রাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত এ সব পরিবারে কোন চুলো জ্বালানো সম্ভব হয়নি। ভাংচুর, লুটপাট আর অগ্নিসংযোগে এরা এখন নিঃস্ব। কালিগঞ্জের ফতেপুরে ধর্মান্ধদের তা-বের পর চাকদহা গ্রামের নারকীয় তা-ব হার মানিয়েছে ’৭১-এর পাকসেনা ও তাদের দোসরদের। চাকদহা গ্রামে যেভাবে হামলা করা হয়
    ফতেপুর গ্রামের লক্ষ্মীপদ ম-লের মেয়ে নমিতা চাকদহা গ্রামের শ্যামাপদ সরদার পরিবারের গৃহবধূ। শনিবার রাতে হামলাকারীরা পুড়িয়ে দেয় ফতেপুরের লক্ষ্মীকান্তের বসতবাড়ি। রবিবার দুপুরে বাড়ির পুকুর ঘাটে বসে শ্যামাপদের স্ত্রী ললিতা সরদার (৪৫) ও পাশের গ্রামের ফজর আলির স্ত্রী আনুরা (৪০)এর মধ্যে কথা হয় ফতেপুরের হামলার ঘটনা নিয়ে। ফতেপুরের নিরীহ গ্রামবাসীর বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া অন্যায় হয়েছে এমন মন্তব্যে নাখোশ হয় আনুরা বেগম। নবীজি সম্পর্কে কটূক্তি করেছে ললিতা এমন প্রচারে বিকাল থেকেই এই সরদার পরিবারের বাড়ির সামনে লোক জড়ো হতে থাকে। সন্ধ্যার কিছু আগে স্থানীয় নাজিমগঞ্জ বাজার কমিটির সভাপতি ফিরোজ কবীর কাজল, স্থানীয় ইউপি মেম্বারসহ সকলে ললিতার বাড়িতে বসে তাকে এধরনের কথা বলার জন্য ক্ষমা চাইতে চাপ প্রয়োগ করে। সমঝোতা বৈঠকে উত্তেজিত হয়ে ওঠে বাইরের গ্রাম থেকে আসা ২ শতাধিক যুবক ও ক্যাডার। তারা লাথি মেরে তাদের ভারতে পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে জড়ো হতে থাকে, এসব বাড়ি থেকে প্রায় ৫শ’ গজ দূরের চৌরাস্তায়। 
    পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে পারে এই আশঙ্কায় সেখানে প্রায় ৩০ সদস্যের পুলিশ রাখা হয। সন্ধ্যার পর প্রায় ৭টার দিকে মোবাইলের মাধ্যমে ডেকে আনা হয় উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে কয়েক হাজার কিশোর যুবককে। পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে থাকা এসকল বহিরাগতরা আধাঘণ্টার মধ্যেই চিৎকার দিতে দিতে জড়ো হয় এসকল বাড়ির সামনে। পুলিশের উপস্থিতিতে তারা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে বাড়ির মধ্যে। একপর্যায়ে জীবন বাঁচাতে পরিবারের নারী ও শিশু সদস্যরা ঘর থেকে বের হয়ে নিরাপদ আশ্র্রয়ের জন্য ছুটতে থাকলে শুরু হয় লুটপাট। দরজা জানালা ভেঙ্গে তারা ঘরে ঢুকে টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মূল্যবান কাপড়সহ জমির দলিল, মূল্যবান কাগজপত্র সব কিছু লুট করতে থাকে দলবদ্ধ ভাবে। ঘর থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় তারা সুজিতের স্ত্রীর কানের দুল খুলে নেয়। ললিতার হাতে থাকা সোনার গয়নার কৌটা কেড়ে নেয় তারা কৃষ্ণপদ, শ্যামাপদ, রন সরকার, সুধীর সরদার, নিরঞ্জন, শিবু, ভবরঞ্জন, জগদীশ, বিশ্বজিতসহ ১০টি পরিবারের ওপর হামলা চালিয়ে সর্বস্ব লুট করা হয়। লুটের মালামাল নিরাপদ স্থানে রেখে এসে তারা পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় শ্যামাপদ সরদারের পাকা ঘরে। এ সময় পুড়িয়ে দেয়া হয় কৃষ্ণপদের ৩টি, শ্যামাপদের ২টি, রনসরকারের ৩টি ও সুধীর সরদারের ১টি বসতঘর। পুলিশের উস্থিতিতে প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে এই নারকীয় তা-ব চললেও পুলিশ ছিল নির্বিকার ও নীরব দর্শক। 
    এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরের চাকদহা গ্রামে পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন রাখা হয়েছে। বিজিবিকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। সোমবার দুপুরে এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে হামলা ও বর্বরতার শিকার পরিবারগুলোতে রয়েছে অজানা আতঙ্ক। আবার হামলা হতে পারে এই আশংকায় লাখ লাখ টাকার ক্ষতি, মা-বোনদের সম্ভ্রমহানির ঘটনাগুলোও তারা সাংবাদিকদের কাছে বলতে ভয় পাচ্ছেন।
খবর জনকণ্ঠ।

No comments:

Post a Comment