লেখক: ইত্তেফাক | সোমবার, ১ অক্টোবর ২০১২, ১৬ আশ্বিন ১৪১৯
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রামুর তাণ্ডব পটিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হইয়াছে। ভাঙচুরের শিকার হইয়াছে পটিয়ার লাখেরা অভয় বৌদ্ধবিহারের মূল মন্দিরসহ পাঁচটি শাখা মন্দির। রক্ষা পায় নাই পার্শ্ববর্তী কোলাগাঁও বৌদ্ধ বিহার, নবারুণ সংঘ দুর্গাবাড়ী হিন্দুমন্দির এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরও। কক্সবাজারের রামু উপজেলায় এই তাণ্ডবের সূত্রপাত হইয়াছিল গত শনিবার রাত্রে। মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে ২৫০ বত্সরের পুরনো মৈত্রী বিহারসহ ১২টি বৌদ্ধবিহার এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রায় ৩০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ভাঙচুর করা হয় অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি। নজিরবিহীন এই তাণ্ডবে শত বত্সরের ঐতিহ্যবাহী বুদ্ধের মূর্তিসহ বহু মূল্যবান সম্পদ ভস্মীভূত হইয়া গিয়াছে। সর্বাপেক্ষা বিপর্যয়কর বিষয় হইল, এই অঞ্চলে দীর্ঘকাল ধরিয়া বিরাজমান সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির যেই ক্ষতি সাধিত হইয়াছে এবং সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মধ্যে যেই নিরাপত্তাহীনতার বোধ সৃষ্টি হইয়াছে— তাহা সহজে পূরণ বা প্রশমিত হইবার নহে। এই ঘটনায় আমরা মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ শুধু নই, ইহার নিন্দা করিবার ভাষাও আমাদের জানা নাই।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলিয়াছেন যে, ‘সামপ্রদায়িক গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে’ এই ঘটনা সংঘটিত করিয়াছে। তাহা হইলে জনগণের অর্থে প্রতিপালিত সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি কী করিয়াছে— সেই প্রশ্ন তোলা যায়। গুরুতর প্রশ্ন তোলা যায় প্রশাসনের ভূমিকা লইয়াও। তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রগতির এই যুগে ছোট্ট একটি উপজেলায় ঘন্টার পর ঘন্টা এই ধরনের তাণ্ডব কীভাবে চলিতে পারিল এবং এতো ভয়াবহ একটি ঘটনার প্রায় ১২ ঘন্টা পর চট্টগ্রামের পটিয়ায় কীভাবে তাহার পুনরাবৃত্তি ঘটিতে পারিল— তাহা আমরা বুঝিতে অক্ষম। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন যে, রামু কোনো দুর্গম কিংবা বিচ্ছিন্ন জনপদ নহে। কক্সবাজার জেলা সদর হইতে এই উপজেলাটির দূরত্ব মাত্র কয়েক কিলোমিটার। সেইখানে প্রশাসন, পুলিশ— সবই ছিল। সর্বোপরি, ঘটনাস্থল হইতে বিজিবি কিংবা সেনাবাহিনীর অবস্থানও বেশি দূরে নহে। প্রয়োজনে তাহাদের সহায়তাও গ্রহণ করা যাইত। অতএব, ঘটনার কারণ যাহাই হউক এবং ইহার জন্য যে বা যাহারাই দায়ী হউক, জনগণের জানমালের নিরাপত্তাবিধানে প্রশাসন যে ব্যর্থ হইয়াছে তাহাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই। দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাইতে হইবে। পাশাপাশি, সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে প্রশাসন যে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়াছে তাহাও আমলে নিতে হইবে যথাযথ গুরুত্বের সাথে।
এই মুহূর্তের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হইল— প্রথমত, যে কোনো মূল্যে সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি সমুন্নত রাখিতে হইবে। দ্বিতীয়ত, ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াইতে হইবে। ব্যবস্থা করিতে হইবে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের। সর্বোপরি, জনগণকেই ঐক্যবদ্ধভাবে রুখিয়া দিতে হইবে এই ধরনের সকল ঘৃণ্য অপতত্পরতা।
Sharing from Ittefaq
No comments:
Post a Comment