Religious Freedom of Bangladesh according to Itthfaq News paper.
ঢাকা, বুধ, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১১, ১৩ আশ্বিন ১৪১৮
লেখক: ইত্তেফাক ডেস্ক | বুধ, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১১, ১৩ আশ্বিন ১৪১৮
সাড়া জাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকসের ফাঁস করা তারবার্তায় এসেছে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ।
আওয়ামী লীগ ধর্ম নিরপেক্ষতার রাজনীতিতে বিশ্বাসী বলে দাবি করে থাকে। কিন্তু দলটির এই দাবির পক্ষে বাস্তবতার প্রতিফলন সামান্যই দেখা যায়। বিশ্বজুড়ে সাড়া জাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকসের ফাঁস করা একটি নথিতে এমন মন্তব্য করা হয়। ‘গোপনীয়’ শ্রেণীভুক্ত এই তারবার্তাটি ২০০৬ সালের ৪ ডিসেম্বর ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠিয়েছিলেন তত্কালীন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিস। ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের আগে বিভিন্ন দলের অবস্থা ও অবস্থান জানানোর জন্য বিউটেনিস এই তারবার্তাটি পাঠান। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয় দল সম্পর্কে সাবেক রাষ্ট্রদূত ওই তারবার্তায় তার মূল্যায়ন তুলে ধরেন।
আসন্ন (২২ জানুয়ারি ২০০৭) নির্বাচনে সম্ভাব্য দলগুলোর প্রধান প্রধান নীতি কি, তারা মার্কিন স্বার্থকে কিভাবে দেখে থাকে, বাংলাদেশের এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে তাদের মনোভাব কি ইত্যাদি প্রসঙ্গে দূতাবাসের মতামত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত তারবার্তায় তুলে ধরেন।
বিউটেনিস গোপন তারবার্তায় লেখেন, বিএনপির কট্টোরপন্থি নেতা বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত খোন্দকার মোশাররফ হোসেন আমাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলই এখন কেন্দ্রীয় রাজনীতি নির্ভর, মতাদর্শে সামান্যই তফাত্ আছে। বিউটেনিস আরো লেখেন, দুই দলই আমাদের সঙ্গে যখন আলোচনায় বসে তখন তারা উভয়েই দাবি করে থাকে মার্কিন সরকারের স্বার্থের প্রতি তারা যত্নশীল। সন্ত্রাসদমন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, বাণিজ্যিক বিনিয়োগ ইত্যাদি প্রসঙ্গে উভয় দলই আন্তরিকতা প্রদর্শন করে থাকে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ এবং বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি প্রত্যেকেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ক্ষমতায় গেলে তারা দেশের উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, সরকার পরিচালনায় অধিকতর দক্ষতার দিকে মনোনিবেশ করবে। তাছাড়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ মানবাধিকারের দিকে বেশি যত্নশীল বলে তাদের সঙ্গে আলোচনায় আমাদের মনে হয়েছে।
সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ওই তারবার্তায় আরো লেখেন, দুই দলের অনেক দাবি অভিন্ন হলেও তাদের মধ্যে অন্যতম বড় ব্যবধান আছে ধর্মনিরপেক্ষতার ইস্যুতে। আওয়ামী লীগ দাবি করে থাকে যে এটি ধর্মনিরপেক্ষতার মূল্যবোধে বিশ্বাস করে এবং সমর্থন করে। এটি আরো দাবি করে যে তারা ইসলামী জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধ শক্তি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তাদের কাজে-কর্মে ধর্মনিরপেক্ষতা মতবাদের প্রতিফলন কদাচিত্ দেখা যায়। কারণ, ‘মুসলিম-বিরোধী’ দল হিসেবে ‘বদনাম’ কিনতে আওয়ামী লীগের খুব ভয়। এমন কি চরম মৌলবাদী দলগুলোর নিকট থেকেও আওয়ামী লীগ ‘মুসলিম-বিরোধী’ তকমা নিতে চায় না। একারণেই ধর্মান্ধদের হাত থেকে আহমদিয়াদের রক্ষার ব্যাপারে শেখ হাসিনাকে তেমন সরব দেখা যায়নি। তাছাড়া বাংলাদেশে বিরোধী দলে বসে অনেক ‘সাহস’ দেখানো যায়, সাহসী উক্তি করা যায়। যেমন ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র যখন ইরাকে অভিযান চালায় তখন মুসলমানদের ‘হত্যার নিন্দা না জানানোর জন্য’ শেখ হাসিনা বিএনপি সরকারের তুমুল সমালোচনা করেন। ২০০৬ সালে শেখ হাসিনা আরো বলেন, সরকার বিদ্যুত্ ঘাটতির কল্পকাহিনী শোনাচ্ছে যাতে ভারত থেকে বিদ্যুত্ কেনার একটা অজুহাত খুঁজে পাওয়া যায়। অথচ ঐতিহ্যগতভাবেই আওয়ামী লীগ ভারতের প্রতি বন্ধুত্বসুলভ একটি দল। দুই দলের মধ্যেই নীতির অনেক তফাত্ থাকলেও উভয় দল দেখানোর চেষ্টা করে যে জাতীয় স্বার্থের বেলায় কেউ ছাড় দিতে রাজি নয়।
No comments:
Post a Comment