ঢাকা, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০১৩, ২ চৈত্র ১৪১৯, ৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৩৪
মাঈনুল আলম, লন্ডন থেকে
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনা নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে উত্তপ্ত বিতর্ক হয়েছে। পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউজ অব লর্ডসের কয়েকজন সদস্য রাজনৈতিক অস্থিরতা, সাম্প্রতিক সহিংসতা এবং সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ব্রিটিশ আইন প্রণেতারা বিতর্কে অংশ নিয়ে এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানান।
জবাবে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে একজন প্রতিমন্ত্রী জানান, ব্রিটিশ সরকার সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত আছে এবং চলমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গেও এ ব্যাপারে যোগাযোগ আছে বলে হাউজ অব লর্ডসকে জানানো হয়। বৃহস্পতিবার হাউজ অব লর্ডসে বিতর্কের সূচনা করেন ব্রিটিশ জোট সরকারের অন্যতম অংশীদার লিবারেল ডেমোক্রেট দলের সদস্য লর্ড এরিক এ্যভব্যারি। তিনি বাংলাদেশ বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের দ্বয়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর কাছে জানতে চান, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সহিংসতায় বহু লোকের প্রাণহানি ও সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া এবং তাদের উপাসনালয়ে ভাঙচুরের ঘটনায় ব্রিটিশ সরকার অবহিত কিনা। জবাবে পররাষ্ট্র ও কমনওয়েল্থ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ব্যারোনেস সাঈদা ওয়ার্সি বলেন, বাংলাদেশে সামপ্রতিক সহিংসতার ঘটনায় ব্রিটিশ সরকার গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এসব ঘটনায় ৭০ জন নিহত হয়েছেন যাদের বেশিরভাগই মারা গেছে আইন-শৃংখলা বাহিনীর গুলিতে। এছাড়া ২৪টি হিন্দু মন্দির ভাঙচুর, ১২২টি ঘর ও বহু দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর এসেছে। এসব দুঃখজনক ঘটনায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ সরকারকে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আহ্বান করেছি। সম্প্রতি তার বাংলাদেশ সফরের কথা উল্লেখ করে ওয়ার্সি বলেন, সে সফরেও আমি বলেছি যে আইনানুগ ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের মধ্যে সংঘাত ও ভাঙচুরের কোন স্থান নেই।
বিতর্কে অংশ নেন ব্যারোনেস মঞ্জিলা পলা উদ্দিন, লর্ড ডোলাকিয়া, লর্ড ট্রিম্বলএবং ব্লেইজবোনের ব্যারোনেস রয়্যালসহ আরো বেশ কয়েকজন আইন প্রণেতা। তারা বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে নিজেদের অভিমত প্রকাশের পাশাপাশি দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চান।
সাঈদা ওয়ার্সি আরো বলেন, 'ব্রিটিশ সরকার বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে আসছে। কেননা ব্রিটিশ সরকার মনে করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে অপরাধ করে রেহাই পাওয়ার যে প্রবণতা, তার থেকে বের হয়ে আসার জন্য এ বিচার জরুরি। এই বিচার প্রক্রিয়া যেন সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং আইনি বিধান বজায় রেখে হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকর জন্যও আমরা বার বার আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের ভাইস প্রেসিডেন্ট সাঈদির মামলার রায় ঘোষণার পর ভাঙচুর ও সহিংসতার মাত্রা যে হারে বেড়েছে আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই।' তিনি হাউজ অব লর্ডসকে আরো জানান, বাংলাদেশ বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের উদ্বেগের আরো একটি কারণ হল, এ পরিস্থিতি ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যেও সংঘাত ছড়িয়ে দিতে পারে। সম্প্রতি লন্ডনের বাঙালি অধ্যুষিত হোয়াইট চ্যাপেল এলাকায় পাল্টাপাল্টি সভা সমাবেশের ঘটনায় এটা স্পষ্ট। এছাড়া কমনওয়েল্থভুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারেও ব্রিটেনের আগ্রহ রয়েছে। এ সময় ওয়ার্সি বাংলাদেশের সরকার ও অন্যান্য দলগুলোকে সংঘাত এড়িয়ে সংযত আচরণ করার আহ্বান জানান।
ব্যারোনেস মঞ্জিলা পলা উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন সাক্ষী হিসেবে মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচারের যে দাবি বাংলাদেশের মানুষ তুলেছে তা আমি গভীরভাবে উপলদ্ধি করতে পারি। উল্লেখ্য, পলা উদ্দিন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। লর্ড ডোলাকিয়া বলেন, ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটি প্রতিনিধি দল তার সাথে দেখা করেছেন। তারা জামায়াত-শিবির বাংলাদেশে তাদের বাড়ি-ঘরে হামলা করছে বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করার জন্য পররাষ্ট্র ও কমনওয়েল্থ মন্ত্রীকে অনুরোধ জানান।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে ইত্তেফাক প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে লর্ড এ্যভব্যারি বলেন, নীতিগতভাবে ব্রিটিশ সরকার যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করে এবং তারাও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার চায়। তবে এই ট্রাইব্যুনালের আইন এবং বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে চরম দ্বিমত রয়েছে। যার কারণে এ বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে। এছাড়া শাহবাগে তরুণ প্রজন্মের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের প্রশংসা করলেও তিনি তাদের দাবির প্রতি দ্বিমত পোষণ করেন। এ্যভব্যারি বলেন, 'আমরা মৃত্যুদণ্ডের দাবির সাথে একমত নই। এছাড়া জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে তারা জঙ্গিরূপে আবির্ভূত হতে পারে।
No comments:
Post a Comment