মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের বড়ুয়াপাড়ায় গত ৭ জানুয়ারি এক গৃহবধূকে অপহরণের পর ধর্র্ষণ এবং একই রাতে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর অপর এক ছাত্রীকে অপহরণ করেছে স্থানীয় বজল ডাকাত ও তার বাহিনীর সদস্যরা। এঘটনার পর এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। অপহরণের চারদিন পরও ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করা যায়নি। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা রবি চাঁন বাদি হয়ে গত মঙ্গলবার মহেশখালী থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলায় বাহিনীর প্রধান বজল আহম্মদ প্রকাশ বজইল্যা ডাকাত (৩২), দেলোয়ার হোসেন প্রকাশ টুইঠ্যা (৩১), নেজাম উদ্দিন প্রকাশ নেজাইয়া (২৫), ফরিদুল আলমকে (৩০) অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে অপহৃতার বাবা সাংবাদিকদের কাছে ঘটনার বিষয়ে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এলাকাবাসী জানায়, গত ৭ জানুয়ারি রাত সাড়ে নয়টার দিকে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী বজল বাহিনীর প্রধান বজল আহম্মদ, তার সেকেন্ড ইন কমান্ড মো ফরিদের নেতৃত্বে ১০/১২ জন সন্ত্রাসী ওই ইউনিয়নের বড়ণ্ডয়া পাড়ায় সাফুল বড়ুয়ার বাড়িতে ঢুকে তাঁর ১৫ বছরের কিশোরী মেয়েকে খোঁজাখুজি করে। মেয়েকে ঘরে না পেয়ে তারা সাফুল বড়ুয়াকে মারধর এবং ছুরিকাঘাত করে ঘর থেকে বের করে দেয়।তারপর সন্ত্রাসীরা তাঁর স্ত্রী বেবী বড়ুয়াকে (৩৫) অপহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে যায়। এলাকাবাসী জানায় একদিন পর বেবী বড়ুয়াকে ছেড়ে দেয়া হয়। বজল বাহিনীর সদস্যরা একই রাতে পাশের গ্রাম চালিয়াতলীর সাতঘর পাড়া থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর এক ছাত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। গত চারদিনেও অপহৃত ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করা যায়নি। এরপর থেকে ওই এলাকার নারীরা বাড়ি ছাড়তে শুরু করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জনপ্রতিনিধি জানান, নলবিলা এলাকার ব্যবসায়ীরা নিয়মিতভাবে বজল ডাকাতকে চাঁদা না দিলে এলাকায় ব্যবসা করা যায় না। বাড়ির গরু ছাগল, হাঁস মুরগী তারা ধরে নিয়ে যায়। বসত ভিটের গাছ কেটে নিয়ে যায়। আবার গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী জায়গা-জমি বিক্রি করতে গেলেও তাদের চাঁদা দিতে হয়।
কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মীর কাশেম চৌধুরী জানান, গত ছয়-সাত মাসে এ বাহিনীর নেতৃত্বে এলাকায় এক হাজারেরও বেশী ডাকাতি হয়েছে। তাদের অত্যাচারে অন্তত দশটি পরিবার এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। এ ঘটনার পর থেকে বড়ুয়া পাড়াটি এখন মহিলা শূন্য হতে চলছে। শংকিত অভিভাবকরা তাদের মেয়েদের ইজ্জত রক্ষার্থে নিরাপদে অন্যত্র সরিয়ে দিচ্ছেন। আশে পাশের পাহাড়ী এলাকায় বসবাসকারী নারী-পুরুষরাও রাতে এলাকা ছেড়ে নিরাপদস্থানে চলে যায়। তিনি আরও জানান,বর্তমানে এ বাহিনী এলাকায় এতই ভয়ংকর হয়ে উঠেছে যে, তাদের কাছে পুলিশও অসহায়। তাদের কাছে প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষ নির্যাতিত হলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলে না। তিনি জানান, গত সাতমাসে পুলিশের সাথে তাদের সাত-আট বার বন্দুক যুদ্ধ হয়। এ বাহিনীর সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নিয়ে উপজেলার প্রতিটি আইন-শৃংখলা সভায় অভিযোগ করা হলেও কোন কাজ হচ্ছে না।
এ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বন্ধে তিনি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই সংখ্যালঘুরা আরো নির্যাতিত হতে থাকবে। মহেশখালী থানার অফিসার ইনর্চাজ রনজিত বড়ণ্ডয়া মাত্র দু’সপ্তাহ আগে এখানে যোগদান করেছেন বলে উল্লেখ করে বলেন, ‘এখানে গত ৩/৪ বছর আগে থেকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চলছে। ওই বাহিনীর কাছে ভারী অস্ত্র আছে। এ পর্যন্ত র্যাব ও পুলিশ অনেকবার অভিযান চালিয়েছে এবং বেশ কয়েকবার র্যাব ও পুলিশের সাথে সন্ত্রাসীদের বন্দুকযুদ্ধও হয়েছে। সন্ত্রাসীরা বেশী ভাগ সময় উত্তর নলবিলার দুর্গম পাহাড়ে গা ঢাকা দিয়ে থাকায় তাদের ধরতে কষ্ট হয়।
অপহরণের ঘটনা ও মামলা দায়েরের সত্যতা স্বীকার করে ওসি বলেন, এ মামলায় বজলের বাবা আব্দুল হাকিম (৭০), আনসার মাঝি ও বাবুলসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।অপহৃত ছাত্রীকে উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
From Dainik Azadi News Paper.