Monday, April 1, 2013

সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধ করতে হবে কঠোর হাতে - সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত হোক


ঢাকা, সোমবার, ১ এপ্রিল ২০১৩, ১৮ চৈত্র ১৪১৯, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৩৪

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনা যে আন্তর্জাতিক মনোযোগ কেড়েছে, তা আমাদের জানা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহল থেকে এটা নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা হয়েছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বিষয়টির একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের যে আহ্বান জানানো হয়েছে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরাও মনে করি, যুদ্ধাপরাধের বিচারের ঘটনা নিয়ে যে সহিংসতা ঘটে গেল, এর একটি গ্রহণযোগ্য তদন্ত প্রয়োজন। 
আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘটে যাওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলছে। দেশবাসী এই অপরাধের বিচার দেখতে চায়। যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত অধিকাংশ ব্যক্তি একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণকারী জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জড়িত এবং তাঁরা বিচার-প্রক্রিয়ার বিরোধিতার নামে সহিংস পথ বেছে নিয়েছেন। সারা দেশে এ পর্যন্ত ৮৮ জন প্রাণ হারায়। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এ ধরনের সহিংসতা ও মৃত্যু কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। 
এ সহিংসতায় প্রাণহানির পাশাপাশি যেমন সম্পদ ধ্বংস হয়েছে, তেমনি সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়টি হচ্ছে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে হামলা। যুদ্ধাপরাধের বিচারের সঙ্গে কার্যত সম্পর্ক না থাকলেও আমরা দেখছি, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। দুঃখজনক হচ্ছে সরকার বা প্রশাসন তাদের রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও হামলা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। গত শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় থেকে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সামগ্রিকভাবে এই পুরো ঘটনাপ্রবাহে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা হয়েছে। জাতিসংঘের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত বিশেষ দূত বলেছেন, ‘আমি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে সব হত্যাকাণ্ডের বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি। এসব হত্যাকাণ্ড রাষ্ট্রীয়ভাবে হোক বা না হোক, সেটা কোনো ব্যাপার নয়।’ 
আমরাও মনে করি, জামায়াতের সহিংস তাণ্ডবের কারণে হোক, সহিংসতা দমন করতে গিয়ে হোক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো ধরনের বাড়াবাড়ির কারণে হোক বা কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের উসকানির কারণেই হোক—এতগুলো প্রাণহানিসহ এই সহিংসতার একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। এখানে রাজনৈতিক শক্তির দায় কতটুকু, প্রাণহানি রোধ, সম্পদ রক্ষা বা সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বন্ধে প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা কোথায় বা কী পরিমাণ, তা বের করা জরুরি। 
আমরা মনে করি, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা যেমন সরকারের দায়িত্ব, তেমনিভাবে দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্বও সরকারের। এটা মানতেই হবে, সরকার সাম্প্রতিক সময়ে তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকার যেমন এ জন্য জামায়াতসহ বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষকে দায়ী করছে, তেমনি বিরোধীপক্ষও সরকারকে দায়ী করছে। চলমান সন্ত্রাসী তৎপরতার পেছনে কারা আছে এবং তা রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা সরকারের দুর্বলতা কোথায়—এসব জনগণের সামনে পরিষ্কার হতে হবে।
সংগত কারণেই আমরা মনে করি, পুরো ঘটনাটির একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।